২০১১ বিশ্বকাপ। ঘরের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের সামনে বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের জন্য এই বিশ্বকাপ ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পুরো ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন থাকলেও একটা বিশ্বকাপের আক্ষেপ তো ছিল। ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ২০১১ বিশ্বকাপে শচীন পুনরায় স্বপ্ন দেখেন বিশ্বকাপ জয়ের। এবার অবশ্য স্বপ্নভঙ্গ হয়নি। ঘরের মাটিতে ওয়াংখেড়েতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ১৯৮৩ সালের পর দ্বিতীয় বারের মত শিরোপা জয় করে ভারত।
ব্যাট হাতে ফাইনালে অবশ্য ব্যর্থতার পরিচয় দেন দুই ওপেনার শচীন ও বীরেন্দ্র শেবাগ। ২৭৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে ফেরেন শেবাগ। এরপর দলীয় ২৮ রানে ব্যক্তিগত ১৮ রানে মালিঙ্গার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন শচীন। দু’জনেই দ্রুত আউট হয়ে ফাইনালে ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
তবে ওই বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে ওয়াংখেড়ের রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া দেখে এই দুই ওপেনারই ভেবেছিলেন ভাল রান পাবেন। রোদ পড়ায় উইকেটটা ফ্ল্যাট থাকবে এবং ওই উইকেটে রান করাটা বেশ সহজ হবে। তবে সেই আশাটা পূরণ হয়নি কারোই। একজন ফিরেছেন খালি হাতে, আরেকজন করেন মোটে ১৮ রান। লাসিথ মালিঙ্গার দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি এই দুই ওপেনার।
সেই ঘটনা স্মরণ করে জনপ্রিয় ক্রিকেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ক্রিকবাজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেবাগ বলেন, ‘আমি ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে একটা গল্প বলি। শচীন টেন্ডুলকার মিড উইকেটে দাঁড়ানো ছিল, আমি ডিপ স্কোয়ার লেগে ছিলাম। সূর্যের কিরণে উইকেটে বেশ রোদ পড়ছিল। আমরা দুইজনই এটা দেখলাম। এরপর দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিলাম এই উইকেটে ব্যাট করাটা মজার হবে। কিন্তু আমরা কেউই রান করতে পারি নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত আলোচনা ছিল যেহেতু বেশ গরম ছিল, উইকেটও ফ্ল্যাট। টসে জিতলেই ব্যাটিং করতে হবে। আসলে আপনি যদি ব্যাট হাতে আপনি খারাপ সময় পার করেন, আপনি রান পাবেন না। এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।’
অবশ্য শচীন-শেবাগ দু’জনের জন্যই ২০১১ বিশ্বকাপ ছিল ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। দু’জনেই ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ৯ ম্যাচে প্রায় ৫৪ গড়ে ৪৮২ করে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন শচীন। অপরদিকে, ৮ ম্যাচে ৪৭ গড়ে ৩৮০ রান সেরা আট রান সংগ্রাহকের মধ্যে ছিলেন বীরেন্দ্র শেবাগ।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৭৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শেবাগ-শচীনের দ্রুত বিদায়ে ৩১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। সেখান থেকে গৌতম গম্ভীরের ৯৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস ও মহেন্দ্র সিং ধোনির ৭৯ বলে ৯১ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৬ উইকেটের জয়ে শিরোপা ঘরে তুলে ভারত।
শচীন, শেবাগের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর যুবরাজ সিং’য়ের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সেবার ২৮ বছর পর শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় ভারত। কপিল দেবের পর মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার শিরোপা হাতে তুলে শচীন-শেবাগের। ওই বিশ্বকাপের পর আর ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি শেবাগের। তরুণদের সুযোগ দিতেই বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। শচীনও রঙিন পোশাকে খুব বেশি সময় আর খেলেননি।