বাঁধাপ্রাপ্ত অমিত প্রতিভা

ছেলের নাম রেখেছেন ‘অস্টিন’। ইয়োহান বোথা ছেলের এমন নাম রাখার পেছনে রয়েছে ক্রিকেটের প্রতি অগাধ প্রেমে এক গল্প। ক্রিকেটকে খুব ভালবাসতেন কি না! তাই তিনি নিজের ছেলের নামের সাথে নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের স্মৃতি জড়িয়ে রেখেছেন। তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, আর ওয়ানডে খেলেছেন ভারতের বিপক্ষে।

এই দুই দেশের ইংরেজি আদ্যক্ষরগুলো মিলিয়ে তিনি ছেলের নাম রেখেছেন অস্টিন। ক্রিকেটের স্মৃতিকে আটকে রাখলেন নিজের ছেলের মাঝে। ঠিক কতটা তিনি ভালবাসতেন এই ক্রিকেটকে তা তো আন্দাজ করে নেওয়াই যায়। একেবারে ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটে সাথে সখ্যতা তাঁর। জন্মেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। ২ মে ১৯৮২ সালে জন্ম তাঁর।

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিনারদের একজন হিসেবেই ধরা হয় বোথাকে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝে একজন স্পিনার হয়ে বেড়ে ওঠাও তো কম সাহসিকতার পরিচয় নয়। সে সাহসটা তিনি নিজের ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুতে দেখাতেও চাননি। তিনি ছিলেন একজন মিডিয়াম পেসার। যে ১২৫ কিলো/ঘন্টা গতিতে ধারাবাহিকভাবে বল করে যেতে পারতেন। তবে মিকি আর্থার পরিবর্তন করে দেন একেবারে সবকিছু।

সাবেক প্রোটিয়া কোচ মিকি আর্থার বোথার মাঝে হয়ত একজন ভাল মানের স্পিনারের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলেন। তাই হয়ত তিনি বোথাকে একজন স্পিনার বনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বোথা সে কথা শুনে নিজেকে একজন স্পিনার হিসেবেই গড়ে তুলতে শুরু করেন। সাফল্য হিসেবে ২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরু হয়।

এর আগে অবশ্য তিনি অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সাথেও খেলেছেন এবং দুইটি ম্যাচে যুবদলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন। ওয়ানডে অভিষেকের বছরখানেক বাদে তাঁর টেস্ট অভিষেকও হয়ে যায়। অভিষেক টেস্টে মাইক হাসির মত খেলোয়াড়ের উইকেট তিনি তুলে নেন। তবে সে টেস্টেই বাঁধে বিপত্তি। ‘চাক’ বোলিং নিয়ে শুরু হয় বিতর্কের। শুরুতেই বাঁধা। তাই মনে হয় তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারটা রয়ে গেছে সংক্ষিপ্ত।

তবে তাঁকে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। ২০০৬ সালেই অবৈধ বোলিংয়ের জন্যে তিনি নিষিদ্ধ হন। তবে দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না ইয়োহান বোথা। তিনি সে বছর নভেম্বর মাসেই তিনি নিজের বোলিং অ্যাকশন শুধরে নিয়ে আবার ফেরেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে। তবে লাল বলে নয়, সাদা বলে তখন তিনি নিয়মিত হতে শুরু করেন। তবে ২০০৯ সালের দিকে আবার একটা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে।

তবে সেবার কেবলমাত্র একধরণের বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। সেটা ছিল ‘দুসরা’। এত সব নিষেধাজ্ঞার মাঝেও তিনি যখনই সুযোগ পেয়েছেন পারফরম করার চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া তিনি জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন।

রঙিন পোশাকে প্রোটিয়াদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত সুখস্মৃতিও রয়েছে তাঁর। অধিনায়ক হিসেবে সফলও তিনি। পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলে। তাঁর নেতৃত্বে দশটি ওয়ানডের মধ্যে আটটি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টিতেও জয়ের সংখ্যা এক। তবে সেখানে হারা ম্যাচের সংখ্যা তিনটি। সফলতার পাল্লা নিশ্চিতরুপেই ভারি তাঁর। তবুও তিনি ছিলেন জাতীয় দলে অবহেলিত। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকাকালীন অবস্থায়ও তিনি খেলার সুযোগ পেতেন না। তাই নিজের নামটি সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধও করেন বোথা।

এর আগেই অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার থিঁতু হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানকার ঘরোয় লিগের একটি ক্লাবে নিয়মিত খেলা শুরু করেন তিনি। এরপর তাঁর জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের খেলার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তাতে তিনি খুব বেশি বিচলিত ছিলেন না। তিনি ক্রিকেটটা ঠিকই খেলে যেতে পেরেছিলেন। তাছাড়া বিগ ব্যাশের দল অ্যাডেলেড স্ট্রাইকার্সের অধিনায়কও ছিলেন তিনি।

৩৮ বছর বয়সী এই প্রোটিয়া, ক্রিকেটটা খেলেছেন কিছুদিন আগেও। তবে ক্রমশ তিনি নিজেকে একটু ভিন্নভাবে সম্পৃক্ত করছেন ক্রিকেটের সাথে। তিনি পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) দল করাচি কিংসের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন। মাত্র ১২৩ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা আরও একটু লম্বা হতেও পারত। সে যাই হোক এখন আর নিশ্চয়ই তিনি সেসব নিয়ে আক্ষেপ করেননা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link