অনবদ্য শ্রেষ্ঠত্বের গল্প লিখি

একদিকে অপ্রতিরোধ্য ম্যানচেস্টার সিটি, প্রায় প্রতিটি ম্যাচে তারা দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। অন্যদিকে দুর্দান্ত ধারাবাহিক লিভারপুল, ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত লিগে হারের মুখ না দেখা একমাত্র দল। দুই পরাশক্তির পয়েন্ট ব্যবধান ছিল মাত্র এক। আর তাই লিগ ওয়ান কিংবা বুন্দেসলিগা’র মত শিরোপার নিষ্পত্তি আগেভাগেই শেষ না হওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সব উত্তেজনা জমা ছিল শেষ দিনের জন্য। কে জিতবে এবারের লিগ শিরোপা সেটি জানার জন্য আগ্রহ নিয়েই শেষমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ফুটবল ভক্তদের।

ম্যানচেস্টার সিটি’র প্রথম লিগ জয়ের কথা সবারই মনে আছে হয়তো। সার্জিও আগুয়েরোর বিখ্যাত এক গোলে লিগ জিতেছিল তারা। সেই ২০১১-১২ মৌসুমের মতোই এবারের মৌসুমেও একেবারে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে।

শীর্ষস্থানে থেকে শিরোপার লড়াইয়ে ছিল লিভারপুল ও ম্যান সিটি, চতুর্থ স্থানে অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে দুই নর্থ লন্ডন রাইভাল আর্সেনাল ও টটেনহাম, ইউরোপার জন্য লড়াইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ওয়েস্ট হাম, এবং অবনমন লড়াইয়ে ছিল বার্নলি ও লিডস। প্রিমিয়ার লিগের সমাপনী দিনে এসে এমন উপভোগ্য সব সমীকরণের সমাধান মিলেছে। আর এমন ভূবনমোহিনী সমাধানই যেন আবার ইংলিশ লিগের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল।

  • রোমাঞ্চ ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতলো ম্যানচেস্টার সিটি

লিভারপুলের কিংবদন্তি হওয়া সত্ত্বেও ক্লাবকে কখনো লিগ শিরোপা জেতাতে পারেননি স্টিভেন জেরার্ড। বর্তমানে অ্যাস্টন ভিলার ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা ইংলিশ মিডফিল্ডারের কাছে সুযোগ ছিল শৈশবের ক্লাবটিকে শিরোপা উপহার দেওয়ার।

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে জেরার্ডের অ্যাস্টন ভিলা পরাজয় ঠেকাতে পারলেই কেবল শিরোপা জেতার সম্ভাবনা থাকতো লিভারপুলের কাছে। কিন্তু দুই গোলের লিড নিলেও শেষপর্যন্ত পরাজয় এড়াতে পারেনি ভিলা।

৭৫ থেকে ৮১ এই মিনিট ছয়েকের ঝড়ে অ্যাস্টন ভিলাকে হারিয়ে লিভারপুলের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। লিভারপুল অবশ্য উলভসকে হারিয়ে নিজেদের কাজটা করে রেখেছিল তবে ভাগ্যের সুদৃষ্টি পাওয়া হয়নি অলরেডদের। সবমিলিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি জিতেছে ক্লাব ইতিহাসের ষষ্ঠ লিগ শিরোপা। আরবের ব্যবসায়ী শেখ মনসুরের মালিকানায় আসার পর থেকে গত এক দশকেই সব কয়টি শিরোপা জিতেছে ক্লাবটি। আর তাতে চেলসিকে হটিয়ে শিরোপা জয়ের তালিকায় দুই নম্বরে উঠে এসেছে সিটিজেনরা।

  • চতুর্থ স্থানের জন্য লড়াইয়ে জয়টা স্পার্সদের

মৌসুম চলাকালীন দুই দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ স্পট প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল আর্সেনাল। দীর্ঘদিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রিয় ক্লাবকে দেখার অপেক্ষায় ছিল ভক্তরা। কিন্তু নাটকীয় ভাবে আর্সেনালকে হটিয়ে পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে উঠে আসে টটেনহ্যাম।

শেষদিনের লড়াইয়ে অবশ্য আশা জিইয়ে ছিল গানার’দের। তবে রেলিগেটেড হয়ে যাওয়া নরউইচের মাঠ থেকে বিশাল জয় বাগিয়ে আনা টটেনহ্যাম হতাশ করেছে আর্সেনালকে। নভেম্বরে যখন ক্লাবটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন অ্যান্তোনি কন্তে, তখন লিগ টেবিলে স্পার্সের অবস্থান ছিল নয়ে। সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবলে সুযোগ পাওয়াটা এই ইতালীয়র মুন্সিয়ানারই স্বাক্ষর।

  • ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে মৌসুমে ইউরোপায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

শিরোপা জেতার স্বপ্ন নিয়ে মৌসুম শুরু করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু মৌসুম শেষ করতে হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ যুগে তাদের সর্বনিম্ন পয়েন্ট টালি নিয়ে। শেষ ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে জিততে না পারলে টেবিলের ষষ্ট স্থানটিও হারানোর শঙ্কা ছিল রেড ডেভিলদের সামনে। সেক্ষেত্রে সামনের মৌসুমে তাদের জায়গা হতো ইউরোপা কনফারেন্স লিগে।

ইউনাইটেডের চেয়ে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে সাত নম্বরে থাকা ওয়েস্ট হামকে অবশ্য ইউরোপা লিগ স্পটের জন্য ব্রাইটনের বিপক্ষে জিততে হতো। আর সেই কাজটিই করতে ব্যর্থ হয়েছে ওয়েস্ট হ্যাম। রোনালদোবিহীন ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ম্যান ইউনাইটেড হারলেও ওয়েস্ট হ্যাম পারেনি ব্রাইটন বাঁধা পেরুতে। আর তাই মৌসুমের শেষ ম্যাচ হেরেও ইউরোপা লিগে সুযোগ পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

  • বিদায়, বার্নলি!

নরউইচ ও ওয়াটফোর্ডের অবনমন নিশ্চিত হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। মৌসুম জুড়ে নিউক্যাসল, এভারটন, সাউদাম্পটন, অ্যাস্টন ভিলার মতো ক্লাব রেলিগেশন জোনের আশেপাশে ঘোরাফেরা করলেও শেষ দিনে এসে ১৭তম স্থানটির জন্য লড়াই করছে বার্নলি ও লিডস। দুই দলেরই পয়েন্ট ছিল সমান। কিন্তু শেষ ম্যাচে লিডস ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ড্র করতে পারলেও বার্নলি হেরে গিয়েছে নিউক্যাসলের বিপক্ষে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ২০২২/২৩ এ দেখা যাবে না ক্লাবটিতে।

দলগুলোর লড়াই ছাড়াও শেষ দিনে ফায়সালা হয়েছে গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন গ্লাভসের লড়াই। এর আগে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ২২ গোল করে শীর্ষে ছিলেন মোহামেদ সালাহ। এক গোল কম করে তার পরেই ছিলেন টটেনহ্যামের হিয়াং মিন সন। কিন্তু শেষ ম্যাচে জোড়া গোল করেন তিনি অন্যদিকে সালাহ করেছেন এক গোল। আর তাতেই সেরা গোলদাতার তালিকায় যৌথভাবে প্রথমে আছেন দুজনে। এছাড়া দুইজনে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এবারের মৌসুমের গোল্ডেন বুট।

অন্যদিকে সমান বিশটি করে ক্লিনশিট রেখে গোল্ডেন গ্লাভসের লড়াইয়ে ছিলেন দুই ব্রাজিলিয়ান এডারসন, অ্যালিসন। শেষদিন অবশ্য দুইজনের কেউ অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেননি নিজেদের জাল। বিশটি ক্লিনশিট নিয়ে মৌসুম শেষ করতে হয়েছে দু’জনকে, তাই গোল্ডেন বুটের মত গোল্ডেন গ্লাভসও ভাগাভাগি করে দিতে হয়েছে কতৃপক্ষকে। এছাড়া সদ্য সমাপ্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা এবং বর্ষসেরা তরুণ ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তারই ক্লাব সতীর্থ ফিল ফোডেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link