এক ইনিংসে ছয় জন ব্যাটসম্যান ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। এরপর দুজন আবার দুই অংকের স্কোরও করতে পারেননি। একটা ব্যাটিং ইনিংসের এমন অবস্থার পর আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় দলটার মোট স্কোর কত, আপনি উত্তরে নিশ্চয়ই এক-দেড়শ রানের বেশি বলবেন না। তবে এই ধারণাটাকে ভুল প্রমাণ করে বিশ্বরেকর্ডই করে ফেললো বাংলাদেশ। এই রেকর্ড দু:খের না সুখের সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য নেয়া যাচ্ছেনা।
শুরুটা করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য মাহমুদুল হাসান জয়। ইনিংসের প্রথম ওভারেই শূন্য রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন জয়। তবে ছোট ভাইয়ের ভুল দেখে শিক্ষা নেননি সাকিব, তামিমরা। দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যানও হেঁটেছেন একই পথে। গতকাল দিনের খেলায় চিত্রনাট্য লিখা হয়েছিল এই পর্যন্তই। কেননা লিটন-মুশফিকের জুটি এই আসা যাওয়ার মিছিলে বড্ড বাগড়া দিয়েছিল।
প্রথম সেশনেই পাঁচ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। দুজনই ছুয়েছেন শতরানের ম্যাজিক ফিগ্যার। তবে সেগুলো আমাদের আলোচনা মূখ্য বিষয় না। আমরা বরং শূন্য রানের যাত্রায় মনোযোগ দিই। সেই মিছিল আবার স্রোত ফিরে পেয়েছে আজ সকালে মোসাদ্দেকের কারণে। লিটন আউট হয়ে যাবার পর মুশফিককে সঙ্গ দেয়ার কথা ছিল তাঁর।
তবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত সেইসবের ধার ধারেননি। তিনিও ফিরেছেন রানের খাতা না খুলেই। এরপর খালেদ আহমেদেরই বা আর কী করার ছিল। নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিও কোন রান না করেই আউট হয়ে গিয়েছেন। আর এই কাজটায় সবচেয়ে ধারবাহিক নাম হচ্ছে এবাদত হোসেন। আজও তাঁর ব্যক্তয় দেখা যায়নি। এবাদত হোসেন মুশির সাথে ২০ বল খেলেছেন বটে। তবে রানের খাতায় সংখ্যাটা সেই শূন্যই।
সবমিলিয়ে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ছয় জন ব্যাটসম্যান ফিরেছেন কোন রান করেই। এটি অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটে নতুন কোন ঘটনা না। এর আগেও ইনিংসে ছয় ডাকের রেকর্ড আছে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। তবে বাংলাদেশ এরপরও লিখেছে ঘুরে দাড়ানোর গল্প। লিটন-মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরি ও রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ৩৬৫ রানে। এই দুজন বাদে এই ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর এসেছে তাইজুল ইসলামের ব্যাট থেকে। তিনি খেলেছেন ১৫ রানের ইনিংস।
এক ইনিংসে ছয়টি ডাকের পর এই ৩৬৫ রানের সংগ্রহই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি রেকর্ডও বটে। ছয়জন ব্যাটসম্যান রানের খাতা না খোলার পরেও এটিই টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোর। বাংলাদেশের এই স্কোরের কাছাকাছিও অন্য কোন দল করতে পারেনি।
এর আগে ২০১৪ সালে ভারতের ছয়জন ব্যাটসম্যান এক ইনিংসেই ডাক মেরেছিলেন। তবুও সেই ইনিংসে ভারত করেছিল মোট ১৫২ রান। আর এটিই এতদিন ছিল ছয় ডাকের পর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ভারত-ইংল্যান্ডের ওই ম্যাচে ভারতের হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন মুরালি বিজয়, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার এবং পঙ্কজ সিং।
এরপরের অবস্থানে থাকা পাকিস্তানকে খুঁজে পেতে হলে ফিরে যেতে হবে সেই ১৯৮০ সালে। করাচিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচেও ডাক মেরেছিলেন পাকিস্তানের ছয় ব্যাটসম্যান। এরপরও পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পেরেছিল ১২৮ রান। এছাড়া ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ছয় ডাক নিয়েও করেছিল ১০০ রান। আর সর্বশেষ ২০১৮ সালে ছয় ডাক নিয়ে নিউজিল্যান্ড করেছিল ৯০ রান।