শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে মিরাজ ছিটকে যাওয়ার পরেই তাঁর নামটা এসেছিল। এরপর আবার নাঈম হাসান ইনজুরিতে তো জোর গুঞ্জন ছিল যে তিনি আবার জাতীয় দলে ফিরছেন। তবে এরপর আর বাড়তি কোন অফ স্পিনার দলে ডাকেনি বাংলাদেশ দল। আর তখনই আঙুল উঠে নির্বাচকদের উপর। কেন শুভাগত হোমকে নিয়ে এমন অবহেলা বাংলাদেশের? তবে, খোঁজ নিয়ে জানা গেল এই স্পিনিং অলরাউন্ডার এখন আর বাংলাদেশেই স্থায়ী ভাবে থাকেন না।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার শুভাগত হোম। অনেকের মতেই এই মুহূর্তে বল হাতে দেশের সবচেয়ে বড় টার্নারও তিনি। এছাড়া ব্যাট হাতেও যথেষ্ট কার্যকর তিনি। এমনকি এবছর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও ছিলেন অন্যতম সফল অফ স্পিনার।
এবার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ১০ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৯ গড়ে তুলে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। পুরো টুর্নামেন্টে তাঁর ইকোনমি রেট ছিল চারেরও নিচে। এছাড়া ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ২৫ রান দিয়ে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট।
শুধু এবছর নয়, বাংলাদেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো প্রায় সবসময়ই এমন সফল শুভাগত হোম। যদিও এখনকার তরুণ ক্রিকেটারদের ভীরে তাঁকে বাংলাদেশের কখনো প্রয়োজন হয়নি। তবে এবার প্রয়োজন হয়েছিল তাঁর মতই কাউকে। মিরাজের ইনজুরির পর চট্টগ্রাম টেস্টে খেলেছিলেন নাঈম হাসান। এরপর নাঈমও ইনজুরির কারণে ঢাকা টেস্ট থেকে ছিটকে যান।
তখন একজন অফ স্পিনারের অভাব ছিল স্কোয়াডে। সাকিব, তাইজুলের সাথে বল ঘোরানের জন্য একজন স্পিনারকে দলে ডাকা হবে বলেও শোনা যাচ্ছিল। ফলে সবচেয়ে জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছিল শুভাগত হোমের নাম। তবে শেষ পর্যন্ত আর স্কোয়াডে কাউকে ডাকা হয়নি।
ফলে সাকিব, তাইজুলের সাথে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়েই বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টে মাঠে নেমেছে। যদিও ম্যাচের তৃতীয় দিন মোসাদ্দেককে বলই হাতে তুলে দেননি অধিনায়ক। ফলে একজন অফ স্পিনার যে বাংলাদেশ মিস করছে তা মাঠে নামার পর আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর শুভাগত হোমকে নিয়ে প্রশ্নটাও জোরালো হয়েছে।
এরপর গতকাল রাতে বাংলাদেশ টাইগার্সের স্কোয়াড ঘোষণার পর দেখা গেল অবাক করা কান্ড। অফ স্পিনারের এই সংকটের পরেও ২৯ জনের স্কোয়াডেই রাখা হয়নি শুভাগত হোমকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে বাইরে যে শুভাগতকে নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে তাঁর ছিটেফোটাও কী হয় নির্বাচকদের টেবিলে?
ঢাকা টেস্টের আগে নির্বাচকদের ভাবনায় তাঁর নাম ছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘আলোচনায় অবশ্যই তাঁর নাম থাকে। আসলে আমাদের তো এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত পড়তে হয় না। মিরাজ থাকে, মিরাজ না থাকলে নাঈম আছে। এবার দুইজন একসাথে ইনজুরিতে পড়ায় সমস্যাটা হয়েছে। এছাড়া শেখ মেহেদীর নামও থাকে, তবে তারও একটু ইনজুরি ছিল। আর শুভাগত এবার যে আমাদের ভাবনায় একেবারেই ছিল না সেটা না। তবে আমাদের হাতে সময় খুব কম ছিল।’
দুই টেস্টের মাঝে বিরতি হয়তো যথেষ্ট ছিল না নতুন কাউকে ডাকার জন্য। কিংবা স্কোয়াডে থাকা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের উপরই হয়তো ভরসা করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ টাইগার্সের ২৯ জনের স্কোয়াডেও কেন ডাকা হলো না শুভাগত হোমকে এমন প্রশ্নের উত্তরে এই নির্বাচক জানালেন, শুভাগত এখন বিয়ে করে ভারতের কলকাতায় স্থায়ী হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ওকে (শুভাগত হোম) বাংলা টাইগার্সের জন্যও পরিকল্পনায় রেখেছিলাম। তবে সে এখন কলকাতায় থাকে। শুধু ম্যাচ খেলেই আবার কলকাতায় চলে যায়। আর শুভাগত আমাদের জানিয়েছে যে সে কোন ক্যাম্প করার জন্য অ্যাভেইএবল না। শুধুমাত্র তাঁকে যদি স্কোয়াডে রাখা হয় তাহলেই সে এসে ম্যাচ খেলতে পারবে।’