ওরা পারে, আমরা কেন পারিনা!

‘স্যুইং’ এই একটা শব্দ ঠিক কতটা মাহাত্ম রাখে একজন পেসারের ক্যারিয়ারে তা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার কিছু নেই। সুইংয়ের কথা বাদই দেই। লাইন লেন্থ, ইয়র্কার, বাউন্স এসবই একজন পেসারকে ভয়ংকর করে তোলে। সেই সাথে গতি। এই যে প্রতিপক্ষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার বিষয়টা কি আমরা আমাদের পেসারদের মধ্যে দেখেছি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টে?

‘স্যুইং’ এই একটা শব্দ ঠিক কতটা মাহাত্ম রাখে একজন পেসারের ক্যারিয়ারে তা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার কিছু নেই। সুইংয়ের কথা বাদই দেই। লাইন লেন্থ, ইয়র্কার, বাউন্স এসবই একজন পেসারকে ভয়ংকর করে তোলে। সেই সাথে গতি। এই যে প্রতিপক্ষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার বিষয়টা কি আমরা আমাদের পেসারদের মধ্যে দেখেছি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টে?

মস্তিষ্কে নিশ্চয়ই খুব জোর দিতে হচ্ছে। না খুব বেশি জোর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এমন কোন মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া আমাদের হয়নি। পুরো একটা স্পেল জুড়ে আমাদের দুই পেসার এবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদ শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের মনে বিন্দুমাত্র ভয়ের সঞ্চার করাতে পারেননি। দুই টেস্টে বাংলাদেশের তিন পেসার মিলিয়ে করেছেন ৯৫ খানা ওভার।

উইকেট কেবলমাত্র চারটি। তাও পেয়েছেন এবাদত হোসেন। এক ইনিংসেই। তো একটা বার ভাবুন তো, এই কড়া রোদের মধ্যে প্রায় শ’খানেক ওভার করার ফলাফলটা আসলে কি পেলাম বা কি পেলেন পেসাররা? এমনটা কেন হয়? আমাদের পেসারদের এমন উইকেট খরার পেছনে কারণটা আসলে কি? ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের আকাশের মত বিস্তৃত সব মত থাকতে পারে।

তবে সাদা চোখে যা বোঝা যায় যে আমাদের দেশের বোলাররা নিজেদের কন্ডিশনই আসলে বুঝতে পারেন না। আমাদের পেসাররা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না যে পিচ কেমন ব্যবহার করবে। পিচগুলো হয়ত তাদের সাথে একটা যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়, তবে তাঁরা হয়ত বোঝেন না পিচের ভাষা। তাই হয়ত উইকেট নামক সোনার হরিণ ধরা দেয় না এবাদত, খালেদদের হাতে।

তাঁরা শুধু বল করেই যান। আর প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা যেন খুব বেশি সতর্ক। তাঁরা কোনভাবেই যেন উইকেট দিতে নারাজ। কিন্তু ভিন্ন  চিত্র আমাদের ব্যাটারদের। বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিজেদের উইকেটের মূল্যটা বুঝে উঠতে পারেন না। দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রেস কনফারেন্সে এসে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন যে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মানসিকতায় সমস্যা রয়েছে। সাকিব যখন বলেছেন তখন তো নিশ্চয়ই মেনে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ দলকে আর ভাল কে বোঝে বলুন। সুতরাং প্রধান সমস্যা মানসিকতার। আমরা আসলে মস্তিষ্ক দিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারিনা। আর আমরা আমাদের প্রতিটি উইকেটের মূল্যও দিতে জানি না। তাইতো আমাদের পেসারদের উকেটের কলামটা খালি থেকে যায়। আসিথা ফার্নান্দোর মত বোলারও ১৩ খানা উইকেট বাগিয়ে নিয়ে যান। যেখানে আগের তিন ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি।

তাঁদেরকে উইকেট উপহার দেওয়ার মহরা হয়। আর অন্যদিকে দেশি পেসারদের চলে হাহাকার। এর পিছনে আরেকটা যা দূর্বলতা রয়েছে তা হচ্ছে ‘পরিকল্পনার অভাব’। বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের দূর্বলতার বিষয়ে তথ্য প্রচণ্ড কম থাকে বলেই মনে হয়। তাঁরা ঠিক জানেন না কোন ব্যাটারকে কিভাবে কুপকাত করা সম্ভব। অথচ বিশ্বের নানা প্রান্তের পেসাররা ঠিকই প্রতিপক্ষ ব্যাটারের দূর্বলতা অনুযায়ী পরিকল্পনার ছক এঁকে সে অনুসারে ফিল্ডিং সাজান এবং ক্রমাগত একটা চ্যানেল ধরে বল করে যান। আমাদের বোলাররা সে কাজটাও করতে পারেন না।

অবশ্য বাংলাদেশি বোলারদের এই ঘাটতির দায় টিম ম্যানেজমেন্টের উপরও বর্তায়। আর তাছাড়া আরেকটা অভিমত থাকতে পারে যে আমাদের বোলাররা ঠিক মানসম্মত নন। হ্যা, এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই। তবে তাই বলে যে এই কাসুন রাজিথা কিংবা আসিথা ফার্নান্দোদের মানও ঠিক বিশ্বমানের কি না সেটাও ভাববার বিষয়। বদলি বোলার হিসেবে খেলতে নেমেই চমকে দেওয়া কাসুন রাজিথার সম্ভবত এই সিরিজে মাঠে নামার কথাই ছিল না।

নয় টেস্টে রাজিথার ঝুলিতে ছিল মাত্র ২৫ খানা উইকেট। নিশ্চয়ই তাঁরা বিশ্বমানের টেস্ট বোলার নন। তবে আমাদের পেসার আর তাঁদের মধ্যে পার্থক্য সেই মানসিকতায়। আমরা যেখানে যেমন আছি, তেমন থেকে যেতে চাই। আমরা ভয় পাই, আমরা বুঝি না, আমাদের পরিকল্পনা থাকে না, আমরা জয়ের জন্যে খেলি না। মোদ্দা কথা সাকিবের মত করেই বলতে হয় টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য বাংলাদেশের বাকি ডিপার্টমেন্টগুলোর মতই পেসারদের মানসিক দৃঢ়তা নেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...