এত আনন্দ-আয়োজন, সবই বৃথা?

ওয়ানডে ফরম্যাটটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। আর এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলটাও বেশ শক্তিশালী। মোটামুটি প্রতিটা পজিশনেই একজন করে আছেন। ফলে এই বাংলাদেশ দলে নতুন করে কাউকে আসতে হলে তাঁকে মোটামুটি অবিশ্বাস্য কিছু করতে হবে। আর এনামুল হক বিজয় নিজের ফেরার পথটা সাজিয়েছেন অবিশ্বাস্য কিছু করেই।

এনামুল হক বিজয়কে একসময় তামিমের সেরা সঙ্গী ভাবা হতো। ক্যারিয়ারের শুরুটাও দারুণ ছিল। তবে পরে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। জাতীয় দল থেকে জায়গা হারিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেছিলেন। এরপর আর সেভাবে তিনি আলোচনাতেই ছিলেন না, জাতীয় দলের পরিকল্পনাতেও ছিলেন না। বরং তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছে বাংলাদেশ।

ওদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে বিজয় নিয়মিত রান করছিলেন। তবে আগেই বললাল জাতীয় দলে ফেরার জন্য তাঁকে অবিশ্বাস্য কিছু করতে হতো। ফলে বিজয় কোনভাবেই জাতীয় দলের ভাবনাতেও আসতে পারছিলেন না। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের আগেও বোধহয় তাঁকে কেউ ওয়ানডে দলের জন্য ভাবেনি।

তবে এবছর ঢাকা লিগে তিনি প্রায় অসম্ভব সব কীর্তি করেছেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে তাঁকে নিয়ে আরেকবার ভাবতে বাধ্য করেছেন। এমন অতিমানবীয় পারফর্মেন্সের পর তাঁকে আসলে জাতীয় দলে জায়গা দিতেই হতো। জায়গাটা আসলে বিজয় আদায় করেই নিয়েছেন।

এবারের ঢাকা লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকারী তিনি। শুধু তাই না, এবার এক মৌসুমেই করেছেন হাজারের বেশি রান। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে ৮১.২৮ গড়ে করেছেন ১১৩৮ রান। ব্যাটিং করেছেন ৯৮.৬১ স্ট্রাইকরেটে। করেছেন তিনটি সেঞ্চুরি ও নয়টি হাফ সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে এই লিগে বিজয় থামাতে পারে এমন কেউ ছিলেন না।

এমন একটা মৌসুম কাটানোর পুরষ্কারও বিজয় পেয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই ডাক পেয়েছেন এই ওপেনার। এই সম্মানটা হয়তো বিজয়েরই প্রাপ্য ছিল। তবে ডাক পাওয়াটাই নিশ্চয়ই বিজয়ের মূল লক্ষ্য না। তিনি স্বাভাবিকভাবেই আবার বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ খেলতে চাইবেন।

আর সেখানেই মূলত বাগরাটা বাধে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের ব্যাটিং লাইন আপটা মোটামুটি সেট। এক থেকে সাত সবগুলো পজিশনেই কেউ না কেউ আছেন। এছাড়া বিজয় ঢাকা লিগে এই রানের পাহাড় করেছেন ওপেন করতে নেমে। ফলে বাংলাদেশের হয়ে খেলালেও তাঁকে ওপেনিং পজিশনেই ব্যাট করতে দেয়া উচিৎ।

কিন্তু এই মুহূর্তে ওয়ানডে ফরম্যাটে ওপেন করছেন দেশের সেরা দুই ওপেনার। লিটন দাস এখন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন। তিন ফরম্যাটেই তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকর ব্যাটসম্যান। আর রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করেন। ফলে অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা লিটনের জায়গা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনরকম টানা হেঁচড়া করতে চাইবে না বাংলাদেশ দল।

ওদিকে ওয়ানডে দলে আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল। যিনি আবার এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক। এছাড়া তামিম এখনো দেশের ক্রিকেটের সফলতম ওপেনারও বটে। ফলে দলের অধিনায়কের জায়গায়ও স্বাভাবিক ভাবেই বিজয়ের আসার কোন সুযোগ নেই। তাহলে প্রশ্ন আসে বিজয় আসলে খেলবেনটা কোথায়?

ওদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও পরিস্থিতিটা অনেকটা একইরকম। যদিও এই ফরম্যাটে এখনো স্থায়ী কোন ওপেনিং জুটি পায়নি বাংলাদেশ। তবুও একপ্রান্ত থেকে লিটন খেলছেন সেটা নিশ্চিত। আরেকপ্রান্তে বাংলাদেশ এখন পরিকল্পনা করছে মুনিম শাহরিয়ারকে নিয়ে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওপেন করে দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দেয়ার সব মশলাই তাঁর মধ্যে আছে। এবছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সেটা প্রমাণ করেই মুনিম জাতীয় দলে এসেছেন। ফলে নতুন এই ক্রিকেটারকে নিশ্চয়ই কয়েকটা ম্যাচ সুযোগ দিতে চাইবে টিম ম্যানেজম্যান্ট। ফলে সহসাই এই ফরম্যাটেও বিজয়ের সুযোগ পাওয়া কঠিন। আবারো প্রশ্নটা করতে হয়, তাহলে ডিপিএলে বিজয়ের এত রান, এত পরিশ্রম, এত আয়োজন সবই কী বৃথা?

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link