ম্যাচ সেরা হিসেবে নাম ঘোষণা করা হল। পুরষ্কার নিতে কয়েক কদম এগিয়ে পেছন ফিরে কাউকে কিছু একটা ইশারা করলেন। মাইক্রোফোনে জানালেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা তুলে দিতে চান খুশদিলের হাতে। যার কারণে পুরষ্কার গ্রহণ না করেই আবার কয়েক কদম পিছিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন। পরমূহূর্তে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার নিতে এলেন তরুণ খুশদিল শাহ। দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে ম্যাচটা ক্যারিবীয়দের কাছ থেকে তিনি ছিনিয়ে এনেছেন ঠিকই। তবে জয়ের সেই ভীতটা গড়ে দিয়ে গেছেন বাবর আজম।
সাম্প্রতিক সময় খেলা ওয়ানডেতে চারটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাবর। একের পর এক দুর্দান্ত ইনিংস। তিনি হতে পারেন ধারাবাহিকতার সবচেয়ে বড় এক উদাহরণ। রানের ধারাবাহিকতায় তিনি আগে থেকেই ছিলেন। তবে, দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য। থামার রেশ মাত্র নেই, ব্যাট হাতে ছুঁটিয়ে চলেছেন রানের ফোয়ারা। তিনি অবিরাম গতিতে ছুঁটে চলেছেন অজানা গন্তব্যে। তবে সেই গন্তব্যটা অবশ্যই সফলতার। ধারাবাহিকতার সাগরে ভেলা বাইতে বাইতে গড়ছেন একের পর এক রেকর্ড। ধারাবাহিকতার আরেক নাম এখন বাবর আজম।
শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, বিরাট কোহলি, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, এবি ডি ভিলিয়ার্স, জো রুটের মত তারকাদের ব্যাটিং দেখাটা চোখের প্রশান্তি। বাবর আজমও আছেন এই তালিকায়। অনিন্দ্য সুন্দর সব শট, অসাধারণ ব্যাটিং টেকনিক – সব কিছু যেন বেশ সুন্দর করে সাজানো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে প্রথম ওয়ানডেতেই করেছেন সেঞ্চুরি। সেটাও আবার তিনশোর বেশি লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ম্যাচজয়ী এক ইনিংস। ১০৭ বলে ৯ চারে ১০৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সেঞ্চুরি ব্যাপারটা বাবরের জন্য এখন যেন মামুলি একটা বিষয়।
হ্যাটট্রিক শব্দটা বোলারদের সাথেই বেশ মানানসই। পর পর তিন বলে তিন উইকেট নিলেই হ্যাটট্রিকের রেকর্ড। ব্যাটারদের ক্ষেত্রে এই শব্দটার প্রচলন একটু কম। অবশ্য কম হলেও আছে। পর পর তিন ইনিংস কিংবা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেই – হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন মাত্র ১১জন। এই ১১ তারকার মধ্যে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দু’বার এই কীর্তি গড়েছেন বাবর আজম! ২০১৬ সালে আরব আমিরাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই প্রথমবার হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরি করেছিলেন এই পাকিস্তানি তারকা।
ক্যারিয়ারের সপ্তদশ সেঞ্চুরি। এই পথ পাড়ি দিয়েছেন মাত্র ৮৫ ইনিংসে। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম সতেরো সেঞ্চু্রির মালিক তিনি। দ্বিতীয়তে থাকা হাশিম আমলা এই মাইলফলক স্পর্শ করতে খেলেছেন ৯৮ ইনিংস। সেই সাথে বিরাট কোহলিকে টপকে ওয়ানডে ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ডও নিজের নামে করেছেন বাবর আজম। অধিনায়ক হিসেবে নিজের খেলা ১৩তম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি। দ্বিতীয়তে থাকা বিরাট অধিনায়ক হিসেবে ১৭তম ইনিংসে হাজার রান করেন।
সবশেষ ৩০ ওয়ানডেতে ৭৫ গড়ে প্রায় দুই হাজার রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯৯। সেঞ্চুরি করেছেন নয়টি। এর মাঝে সবশেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই সেঞ্চুরি। তাও আবার ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে ধারাবাহিক সেঞ্চুরি।
ম্যাচের পর ম্যাচ, সিরিজের পর সিরিজ; প্রতিপক্ষ পাল্টেছে, ভেন্যু পাল্টেছে, কিন্তু ব্যাট হাতে অদম্য বাবর। স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা ছিল। সেদিকেও উন্নতিটা স্পষ্ট। দিন বাড়ছে, বাবরের রেকর্ডনামাও ভারী হচ্ছে – তারকা থেকে তিনি এখন ২২ গজের এক মহাতারকা।