বন্দিত বামহাতি কভার ড্রাইভ

ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঝে মধ্যে পাঁয়তারা কষেন? শুধু মুখেই নয়, ব্যাট বলেও হিল্লিদিল্লি হাঁকড়ে বেড়ান? এবারে বলা হল আপনাকে ব্যাট হাতে একটা পোজ দিতে। কীভাবে দেবেন? যদি এখনকার গোকর্ণের (কাউ কর্ণার) ভক্ত না হন, অথবা বীর বিক্রমী ভীম ভবানী না হন, তাহলে নির্ঘাত আপনি একটা কভার ড্রাইভের পোজ দেবেন।

সামনের পা সিক্সথ স্ট্যাম্পে, হাঁটু থেকে প্যাড উঁচিয়ে, পিছনের পা সামান্য ভাঙা, ক্রিজের ভিতর। উপরের হাত কনুই গগন উদ্দেশ্যে ব্যাট ঝুলিয়ে রেখেছেন, যেন সদ্য গ্রীষ্মের কচি সবুজ পাতা সন্নিবিষ্ট আম্রতরুর শাখা, কঠিন কিন্তু নমনীয়।

নিচের হাত দিয়ে দিক নির্দেশ করেছেন, ‘যাও পাখি, বোলো তারে…’ মাথা ওই উপরের হাতের এবং নিচের হাতের চতুর্ভুজের মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান, যেন দূরে প্রক্ষিপ্ত রক্তগোলকের চলে যাওয়া এক মনে নিরীক্ষণ করছেন। শরীরও মাথা ও মনের সঙ্গে ওই কভার প্রান্তের বাউন্ডারির দিকেই ঝুঁকে রয়েছে, যেন ‘যাবার বেলায়’ ডাক দিয়ে গেছে কোন বাঁশিওয়ালা।

এবারে ভাবুন আপনি ডান হাতি। বিরাট কোহলি, জো রুট, বাবর আজম আপনার চোখ টানে। আরও কিছুদিন আগে হলে, শচীনের সেই আকাশ পানে ব্যাট, দ্রাবিড়ের বলের গন্ধ শোঁকা শট, ড্যামিয়ান মার্টিনের শৈল্পিক ছোঁয়া অথবা ক্যালিসের ব্যাল্যান্সের পরকাষ্ঠা। তারও আগে, অরবিন্দ ডি’সিল্ভা বা গ্রেগ চ্যাপেল। কার্ল হুপার বা মনসুর আলি খান পতৌদির মাপঝোক করা ঠিক কভার ফিল্ডারটির মাথার উপর দিয়ে লফটেড ড্রাইভ।

কিন্তু, বুকে হাত রেখে বলুন দেখি, যদি আয়না দর্শন করেন? অর্থাৎ ব্যাটসম্যান যদি বাম হাতি হয়? কভার ড্রাইভের তালিকায় হুড়মুড়িয়ে এসে পড়বেন, গ্রায়েম পোলক, গ্যারি সোবার্স, ডেভিড গাওয়ার, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, ব্রায়ান লারা, সৈয়দ আনোয়ার, মাইকেল হাসি, সৌরভ গাঙ্গুলি, কুমার সাঙ্গাকারা, অ্যালিস্টার কুক, মার্কাস ট্রেসকোথিক অথবা অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস।

আসলে বাঁ-হাতিদের সৌন্দর্য কভার বা স্কোয়ার ড্রাইভে যেন পূর্ণ বিকশিত পদ্মের মতো প্রস্ফুটিত হয়। টাইমিং টাচ আর ফ্লো। সামান্য হলেও ডান-হাতিদের থেকে সৌন্দর্যে একটু বেশি পক্ষপাতিত্ব পেয়ে যান তাঁরা। কেন? ডান-হাতি বোলারদের অ্যাঙ্গেলের জন্য, নাকি বল ছেড়ে যাচ্ছে যখন তখন সামান্য একটু বেশি সময় পেয়ে যান তাঁরা?

যেটাই হোক না কেন, ষষ্ঠ স্টাম্পের উপরের বলে একটা মাইক হাসি, একটা কুমার সাঙ্গাকারা, একটা গাঙ্গুলি বা একটা ডেভিড গাওয়ারের ছবির মতো কভার ড্রাইভের তুলি বোলানোকেই মনের রঙে মাখিয়ে ঘুমোতে যাই আমরা।
ক্রিকেট দেবতার এই একচোখামির জন্য ভালবাসা ছাড়া আর কি কিছু বেঁচে থাকে বলুন?

বলটা কোণ তৈরি করে বেরিয়ে যাবার সময় পাটা নিয়ে গিয়ে ব্যাট খালি ছুঁইয়ে দেওয়া। আহা লক্ষ্ণৌয়ের বিরিয়ানি আর কাকোরির কাবাব, সঙ্গতে যেন আলি আকবর আর বিলায়েত।

কৃতজ্ঞতা: ময়দানী স্ক্র্যাপবুক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link