অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের একটা সংমিশ্রণ ঘটানোই যেন এখন জাভির প্রথম পরিকল্পনা। ইউরোপের ফুটবলে আবারও পরাশক্তি হয়ে আবির্ভূত হওয়ার এক নীল নকশাই যেন হাতে নিয়েছেন জাভি। তাঁর সেই নীল নকশায় অনুমোদন রয়েছে ক্লাব কর্তা থেকে শুরু করে ক্লাব সভাপতি জোয়ান লাপোর্তারও।
বার্সেলোনার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি ক্লাব ছাড়ার আগে-পরে ক্লাবটি বেশ ধুকছিল। মূল কারণ আর্থিক নানানরকম প্রতিবন্ধকতা। অর্থের সেই মারপ্যাঁচেই ক্লাব ছাড়তে হয়েছিল মেসির। এরপরই যেন ঐতিহ্যবাহী পরাশক্তি বনে যায় সাদামাটা কোন এক ক্লাব।
চিন্তার ভাঁজ তখন ক্লাবের সবার কপালে। উপায়ন্তর পাওয়া গেল না। ক্লাবের জৌলুশ তো আর ধুলোয় মিশতে দেওয়া যায় না। শেষমেশ গেল মৌসুমের মাঝপথে ক্লাবের কিংবদন্তি জাভিকে ফিরিয়ে আনা হয় ক্লাবে। না এবার তিনি এসেছেন কোচের গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে। ক্লাবটিকে স্বরুপে ফেরানোর জন্যে ঢেলে সাজানোর সব এখতিয়ার দেওয়া হল জাভিকে।
জাভি তাই সে মোতাবেক কোনরকম জোড়াতালি দেওয়ার মত করে ক্লাবকে শুধু টিকিয়ে রাখলেন। সপ্তম অবস্থান থেকে ক্লাবটি মৌসুম শেষ করে দ্বিতীয়তে থেকে। চ্যাম্পিয়ন মাদ্রিদের সাথে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল সে কথা সত্য। তবে ডুবতে থাকা তরী থেকে বেঁচে ফেরাই তো মুখ্য। এখন জাভি আর সন্তুষ্ট থাকতে চাইছেন না লড়াইয়ে। তিনি চাইছেন প্রতিপক্ষকে ঠিক আগের মতই দুমড়ে-মুচড়ে দিতে।
তবে এখানটায় তাঁর প্রধান অন্তরায় ক্লাবের আর্থিক অস্থিতিশীলতা। তাইতো দলবদলের বিশাল বাজারে বার্সেলোনাকে হতে হচ্ছে খানিকটা মিতব্যয়ী। আবার অন্যদিকে একটু টেকনিক্যালিও চিন্তা করতে হচ্ছে। তাইতো বার্সেলোনার প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকছে অল্প অর্থে কিংবা বিনামূল্যে ছেড়ে দেওয়া খেলোয়াড়। আবার সেখানটায়ও সমস্যা রয়েছে ব্যাপক।
কাতালানদের বেশ কিছু খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্যামুয়েল উমতিতি, লেঙ্গলেটদের মত খেলোয়াড়দের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তারাও বেশ নাছোড়বান্দা। বার্সেলোনা ছেড়ে যাওয়ার কোন পরিকল্পনাও যেন নেই তাদের। সে জন্যে দলের নতুন দুই মুখ আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেন এবং ফ্রাঙ্ক কেসির যুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না বার্সেলোনা।
দোটানায় থাকলেও বেশ কয়েকটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি, মার্কোস আলোনসো, অ্যাজপিলিকুয়েতাদের মত তারকা ফুটবলারদের বার্সেলোনার সাথে এক সংযোগ সম্পর্ক পোক্ত হচ্ছে। এমন গুঞ্জন বেশ জোরালো। অর্থ সংকটের মারপ্যাঁচেও এত তারকা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর পায়তারা করছে কাতালানরা।
কিন্তু সমস্যা হল নতুন মৌসুমে কাতালানদের সাথে যুক্ত হওয়া অধিকাংশই খেলোয়াড়দের বয়স ছাড়িয়েছে ত্রিশের কোটা। ক্যারিয়ারের প্রায় দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর একটাই কারণ, দলে ভারসাম্য এনে প্রাথমিকভাবে একটা পর্যায় নিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে পর্যায়টা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভাল পারফর্ম করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অন্তত দু-তিন রাউন্ড পার করা চাই।
তাছাড়া এই যে বিনামূল্যে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে স্বল্প মূল্যে খেলোয়াড় কেনার পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। অন্তত আগামী দুই-তিন মৌসুমে যদি এই বুড়িয়ে যাওয়া তবুও পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের দিয়ে ক্লাবের সুদিন ফেরানোর একটা খণ্ডকালীন ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সে সময়ের মধ্যে ক্লাব কর্তৃপক্ষ আর্থিক স্বচ্ছলতার একটা পথ খুঁজতে চাইবে।
অন্যদিকে বার্সেলোনার তরুণ তুর্কিদের সংমিশ্রণ নিশ্চয়ই দলকে একেবারে খাঁদের কিনারায় নিয়ে যাবে না। পেদ্রি, গাভী, তোরেসদের মত খেলোয়াড়রা নিশ্চয়ই নিজেদের সেরাটা নিঙড়ে দিতে চাইবেন। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দলের সাথে সংযুক্তি নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতার একটা বিস্তার ঘটাবে। আখেরে লাভটা তো সেই বার্সেলোনার। এই নীতিতে বার্সেলোনা সফল হবে কি না সে উত্তর সময় দেবে নিশ্চয়ই।