সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। টানা বৃষ্টিতে সিলেটের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত। থাকার জায়গা নেই, খাবার নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। অসংখ্য মানুষ বাঁচার পথ খুঁজছেন। শহর থেকে দূরের গ্রামগুলোতে ত্রান নিয়ে পৌঁছানো যাচ্ছেনা, অসহায় মানুষদের উদ্ধার করা যাচ্ছেনা। আর সেই সিলেটের এক সন্তান সবকিছু পিছনে ফেলে দেশের হয়ে খেলছেন।
সিলেটে নিজের বাড়িতে এখন কী অবস্থা। বাসার সবাই ঠিকঠাক আছে তো? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই খালেদের মাথায়ও ঘুরছে। হয়তো তাঁর ইচ্ছে করছে ছুটে ঘরে ফিরে আসেন, নিজের পরিবারের কাছে চলে যান। এতসব মাথায় নিয়েই তিনি নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন। মাত্র ৯ রানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি নিজেই যেন এক চিলতে রোদ।
প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ভরাডুবিতেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবুও বাংলাদেশের পেসাররা নিজেদের সেরাটা দিয়ে গিয়েছেন। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রানের পাহাড় গড়তে পারেনি। তবুও ১৬২ রানের বড় লিডই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে।
ওদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সুখকর কিছু করতে পারেনি। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা নিজেদের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন। একটা সময় ইনিংস ব্যবধানে হারার শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।
তবে সেই অবস্থা থেকে দলকে সামাল দিয়েছেন অধিনায়ক নিজেই। সাকিব আল হাসান শক্ত হাতে দলের হাল ধরেছিলেন। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন আট নাম্বারে নামা নুরুল হাসান সোহানকে। সোহানও আঁকড়ে পড়েছিলেন সাকিবে সাথে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
এছাড়া দুজনে মিলে গড়েছিলেন ১২৩ রানের জুটি। তাঁদের ব্যাটে চড়েই লিড নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতার কারণে লিডটা খুব বেশি বড় হয়নি। শেষপর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ।
স্কোরবোর্ডে এই স্বল্প পুঁজি নিয়েও খালেদ আহমেদ যেন আগুন ঝড়ালেন। সিলেটের এই পেসার নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নেন দুই উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে স্বপ্নের মত একটি ডেলিভারিতে বোল্ড করেন বোনারকে। ফলে মাত্র ৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বোর্ডে মাত্র ৮৪ রান থাকলেও খালেদের এমন বোলিং নড়চড়ে বসতে বাধ্য করে। বিদেশের মাটিতে, পেস বোলিং কন্ডিশনে বাংলাদেশের পেসাররা যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন সেটাই আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন তিনি। সাথে খালেদ আহমেদ একটু আক্ষেপও রেখে গেলেন। ব্যাটাররা আরো কিছু রান করতে পারলে হয়তো বাংলাদেশকে আরেকটা জয় এনে দিতে পারতেন খালেদরা।
খালেদের পাশাপাশি এবাদতও পুরো টেস্টেই অসাধারণ বোলিং করেছেন। সবমিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে। জয়ের জন্য তাঁদের প্রয়োজন আরো ৩৫ রান।