আপনি ফুটবল ভক্ত হন বা নাই হন নিশ্চিত করে বলতে পারি মেসিকে আপনি চিনতে বাধ্য। লিওনেল মেসি, যাকে মানা হয় সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে। মোট সাতবার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ও ছয়বার গোল্ডেন বুট জয়ী ফুটবলের জাদুকর তিনি। জাদুকরী ফুটবল শৈলীর জন্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম (গোট) খ্যাতি রয়েছে তাঁর।
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের নেতৃত্বের দায়িত্বটা এই ফুটবল গ্রেটের কাঁধেই ন্যস্ত। ক্লাব ফুটবলে অসাধারণ অবদান রাখলেও, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে এখনো অনেক কিছু দেয়া বাকী তাঁর। মেসির হাত ধরে আর্জেন্টিনা আরেকবার বিশ্বকাপ ট্রফি জয় করবে এমনটাই আশা কোটি কোটি ফুটবল ভক্তের। দেশের হয়ে একটা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় না করে অবসরে গেলে, হাজার অর্জনের পরেও আক্ষেপ থেকে যাবে খোদ মেসিরই।
আসন্ন কাতার বিশ্বকাপের জন্য কোনও স্পষ্ট ফেভারিট নেই। তবে আর্জেন্টিনার বর্তমান দলটি ডিসেম্বরের আসরে ফুটবলের সবচেয়ে বড় শিরোপাটি জয় করার সামর্থ্য রাখে। সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন আর্জেন্টিনা দলে থাকা সত্ত্বেও, দেশটি ১৯৮৬ সালের পর আর কোনবারই বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। সে আক্ষেপটাই হয়তো এবার ঘুচাতে চাইবে আলবেসেলেসতারা।
ফিফা র্যাংকিংয়ে বর্তমানে আর্জেন্টিনার অবস্থান চার নাম্বারে। গ্রুপ প্রর্বে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষদের মোকাবেলা করতে হবে আর্জেন্টিনাকে। তাই গ্রুপ পর্ব টপকানোটা সহজ হওয়ার কথা। গ্রুপ ‘সি’তে আর্জেন্টিনা ছাড়া বাকি তিনটি দল হলো – সৌদি আরব, মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড। ফিফা র্যাংকিং অনুযায়ী বাকি তিন দলের দুইটি দল আর্জেন্টিনার ধারে কাছেও নেই।
সৌদি আরব র্যাংকিংয়ের ৪৯ তম দল। এদিকে ৯ নম্বরে থাকা মেক্সিকো এবং ২১ নম্বরে থাকা রবার্ট লেওয়ানডস্কির পোল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো রকমের লড়াই করে জিততে হবে আর্জেন্টিনাকে। তবে নি:সন্দেহে র্যাংকিংয়ের চার নম্বর দলটিই হবে গ্রুপ প্রর্বের ফেবারিট। তবে, এখনকার বার্সার কান্ডারি লেওয়াডস্কির সাথে মোকাবেলাটা নিশ্চয়ই উপভোগ্য হওয়ার কথা।
মেসিকে মানা হয় ডিয়েগো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে, যার হাত ধরেই আর্জেন্টিনা ১৯৮৬ তে বিশ্বকাপের স্বাদ পেয়েছিল। মেসি কি পারবেন এই বছর ম্যারাডোনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আর্জেন্টিনাকে আরেকবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসাতে?
আর্জেন্টিনা এবার দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। টানা ৩২ টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে আকাশী নীলরা। যার মধ্যে ২১ টিতে জয় এবং ১১ টি ম্যাচ ড্র রয়েছে। এটি তাদের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে অপরাজিত থাকার রেকর্ড। এই অপরাজিত থাকার মিশন নিশ্চয়ই বিশ্বকাপেও অব্যাহত রাখতে চাইবে লাউতারো মার্টিনেজরা।
আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের বর্তমান ম্যানেজার লিওনেল স্কালোনি। দলটাকে গুছিয়ে ফেলেছেন। শুধু গুছিয়ে ফেলেছেন বললেও খানিকটা ফাঁক থেকে যায়। তিনি রীতিমত দূর্দান্ত এক দল গঠন করেছেন। এই দলটিই তো জিতেছিল ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা শিরোপা। আর মেসির হাতে তুলে দিয়েছিল প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা। পরবর্তীতে ইউরো ও কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে আয়োজিত ফিনালিসিমা ম্যাচে ইতালিকেও নাকানিচুবানি খাইয়েছে দলটি।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের স্কোয়াডের সবাই এবার চ্যাম্পিয়ন হতে বদ্ধপরিকর। শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয়, তাঁরা জিততে চায় মেসির জন্যে, তাঁরা মেসিকে নিয়ে যেতে চায় এই পৃথিবীর ফুটবল ইতিহাসের অনন্য এক উচ্চতায়। যা ফুটবল বিশ্বে অদ্ভুত সুন্দর চাওয়াই বটে!
বিশ্বের বাঘাবাঘা সব দল ইতোমধ্যেই কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কেটে ফেলেছে। পৃথিবীর সকল দর্শক অন্তত একটি বারের জন্যে দেখতে চান মেসির হাতে সেই স্বর্ণালী ট্রফি। পুরো আর্জেন্টিনা দলও নিশ্চয়ই সে স্বপ্নটা দেখে। তারাও হয়ত মনের গহীন কোণে একটা স্বপ্ন বুনেছেন। ছোট্ট ফুটবল জাদুকর কাতারের মরুর বুকে উচিয়ে ধরবেন সেই অতি আকাঙ্ক্ষিত ট্রফি।
তবে সে কাজটা সহজ নয়। ২০১৪ সালেও খুব কাছে চলে গেলেও ধরা হয়ে ওঠেনি সে শিরোপা। এবার মেসির চোখে জল আসুক। গড়িয়ে পড়ুক ফুটবলের অসীম সবুজ মঞ্চে। এই পৃথিবীর মানুষদের যিনি ভাসিয়েছেন ফুটবলের আনন্দে তিনিও ভেসে যাক সবকিছু জয়ের বন্যায়, প্রাপ্তির আনন্দে। আর অপলক দৃষ্টি চেয়ে চেয়ে দেখুক এই ভ্রমাণ্ডের সবচেয়ে সুন্দর এক চিত্র।