প্রয়াত কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন তাঁকে ডাকনাম দিয়েছিলেন ‘রকস্টার’। খেলার মাঠে তাঁর চরিত্রকে বর্ণনা করতে হলে তাঁর- ক্লিনিক্যাল বোলিং, মারকুটে ব্যাটিং এবং বিশ্বমানের ফিল্ডিং তিনটি বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। যা তাঁকে পরিণত করেছে বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে।
ভারতীয় ক্রিকেটার রবীন্দ্র জাদেজাকে তো আমরা কম-বেশি সবাই চিনি। তাঁকে নিয়েই কথা হচ্ছিল। ভাবছেন হঠাৎ করে জাদেজাকে নিয়ে বলছি কেন? ঠিকি ধরেছেন সম্প্রতি ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে জাদেজার পারফরমেন্স তাঁকে নিয়ে কলম ধরতে বাধ্য করেছে।
শুরুতেই এক পলকে চোখ বুলিয়ে যাই চলমান এই টেস্টটির ইতিহাসে। গেল বছর ঝুলে থাকা ভারত বনাম ইংল্যান্ডের পঞ্চম টেস্ট ম্যাচটিই এবছর মাঠে গড়িয়েছে। করোনার জন্য গত বছর শেষ টেস্টটি না খেলেই দেশে ফিরে এসেছিলেন কোহলিরা।
সেই টেস্ট ম্যাচটি এবার হচ্ছে এজবাস্টনের মাঠে। ইতোমধ্যেই টেস্ট সিরিজে ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে ভারতীয়রা। আরেকটি টেস্ট ড্র হয়েছিল। শেষ টেস্ট ম্যাচটি নিয়ে তাই বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে ভারত- ইংল্যান্ডের মাঝে।
চলমান টেস্টটির প্রথম ইনিংসে ভারতের করা ৪১৬ রানের দূর্গের রশদ সরবরাহ করেছেন মূলত ঋষভ পান্ত ও রবীন্দ্র জাদেজা। পান্তের করা ১৪৬ রানের পাশাপাশি জাদেজা করেছেন ১৯৪ বলে ১০৪ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে যদিও মাত্র ২৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়েছে জাদেজাকে। তবে হবে ভারতকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে জাদেজার বেশ ভুমিকা ছিল তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করাবার সুযোগ নেই। যার কারণে ইংল্যান্ডকে জিততে হলেও বেশ কঠিন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
জাদেজার জাদুর বিচরণ ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই। তেমনি মাঠে তাঁর ভূমিকাও ত্রিমুখী। ব্যাটিং, বোলিং ও দুর্দান্ত ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভরসার জায়গায় থাকেন জাদেজা। স্কয়ার পয়ন্টে ফিল্ডিংয়ের সময় চিতাবাঘের মতো ওঁত পেতে থাকেন তিনি। ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে বর্তমান সময়ের সেরা ফিল্ডার হলেন রবীন্দ্র জাদেজা।
তার দূর্দান্ত ‘থ্রোয়িং আর্ম’-এর কারণে তিনি প্রায়ই ডিরেক্ট থ্রোয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান। প্রায় অসম্ভব ধরণের রান আউটের জন্য তিনি বিখ্যাত। ফিল্ডিংয়ে তাঁর অসাধারণ ডাইভ, আর দারুণ সব ক্যাচের কারণে ইতোমধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সাথে করা সেঞ্চুরিটি জাদেজার টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। তিনি গত বছরের ট্রেন্ট ব্রিজে (৫৬ এবং ব্যাটিংয়ে নামেননি), লর্ডসে (৪০ ও ৩), হেডিংলে (৪ ও ৩০), দ্য ওভালে (১০ ও ১৭) খেলা টেস্টের সাত ইনিংসে মাত্র ১৬০ রান করেন জাদেজা। তাঁর ভাগ্য ও পরিস্থিতি তাকে এজবাস্টনে খেলার যে সুযোগ দিয়েছিল তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেছেন এবার।
গত বছরের রান খরা কাটিয়ে ফর্মে ফিরতে শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ৪৭.৮৩, যা তাঁর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ৬০.০৮ থেকে অনেক কম। লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ভরসার একটা জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন। ভারতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় তিনি। ‘কম্প্যাক্ট অলরাউন্ডার’ বলতে যা বোঝায় তিনি তাই।
সংখ্যার ভিত্তিতে ২০০০ প্লাস রান এবং ২০০ এর বেশি উইকেট ঝুলিতে নিয়ে জাদেজা তৃতীয় সেরা ভারতীয় অলরাউন্ডার। আবার বাঁহাতি স্পিনার- অলরাউন্ডারের ক্ষেত্রে জাদেজা (এজবাস্টন টেস্টের আগে ২৩৯৬ রান এবং ২৪২ উইকেট) নিয়ে তিনি ভিনু মানকড় (২১০৯ রান, ১৬২ উইকেট) এবং রবি শাস্ত্রী (৩৮৩০ রান এবং ১৫১ উইকেট) এর উপরে অবস্থান করছেন।
আরেকটি পরিসংখ্যান যেন জাদেজার অবদানকে আরও বেশি আলোকিত করে। জাদেজা তাঁর অভিষেকের পর ৩৬ টি টেস্ট খেলেননি। নানান কারণে সে টেস্ট ম্যাচগুলো খেলা হয়ে ওঠেনি তাঁর। সে ম্যাচগুলোতে ভারতের জয়ের হার হল ৪১.৬৭ শতাংশ এবং তিনি যে ৫৯ টি টেস্টে খেলেছেন (এজবাস্টনের আগে) সেগুলোতে ভারতের জয়ের হার সর্বোচ্চ ৬৪.৪১।
অভিষেকের পর জাদেজা বিশ্বের ২৩ তম সেরা অলরাউন্ডার, স্পিনারদের মধ্যে নবম সেরা এবং বাঁহাতি স্পিনার হিসাবে তিনি শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথের সর্বোচ্চ ২৫৯ এর রেকর্ড থেকে মাত্র ১৮ টি উইকেট দূরে রয়েছেন।
তাই অনেক দিক থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে জাদেজা অদ্বিতীয়। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং সব বিভাগেই তিনি সর্বেসর্বা। শুধু ভারতের ক্রিকেটে নয়, বর্তমান সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অস্ত্র রবীন্দ্র জাদেজা।