আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় নয়টা বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। এই সময়টায় বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেনও ঠিক নয়টা। আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দশম ওয়ানডে ম্যাচটা খেলতে নামলেন। অথচ টেস্ট ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্পিনার। কিন্তু রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে তাঁর প্রয়োজন হয়নি কখনো। তাই বলে সাদা বলের ক্রিকেটে এতটা অবেহলা করাও যে ঠিক হয়নি সেটাই বুঝি বলতে চাইলেন তাইজুল।
লাল বলের ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। প্রায় নয় বছর ধরে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু টেস্ট খেলেন বলে হয়তো যথাযথ সম্মানটাও কখনো পাননি। তবে টেস্টে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
তবে লম্বা এই ক্যারিয়ারে কখনোই তাঁকে রঙিন পোশাকের জন্য ভাবা হয়নি। এই সময়ে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে অনেক স্পিনারই খেলেছেন তবে তাইজুল ছিলেন না বললেই চলে। এর অন্যতম বড় কারণ বাংলাদেশের সাকিবের মত একজন বাঁহাতি স্পিনার আছে। ফলে আরেকজন বাঁহাতি স্পিনারের প্রয়োজন বোধ করেনি বাংলাদেশ।
এছাড়া রঙিন পোশাকে জায়গা পাওয়ার জন্য তেমন কোন বোলিং বৈচিত্রও তাঁর ছিল না। সাদামাটা এক স্পিনার যিনি কিনা টানা এক জায়গায় বোলিং করে টেস্টে সাফল্য পেয়েছেন,নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছেন।
এছাড়া এই সময়ে তো ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন জুটির উপরই বেশি নির্ভর করে বাংলাদেশ। এছাড়া কখনো দরকার হলে নাসুম, মোসাদ্দেক, শেখ মাহেদী, রিয়াদ, আফিফরাও আছেন। সেজন্যই তাইজুল ইসলাম স্কোয়াডেও থাকেন না কখনো। তিনি টেস্ট ক্রিকেটার এটাই যেন শেষ কথা।
তবে এবার দলের সাথে রেখে দেয়া হয়েছিল তাইজুলকে। সাকিব না খেলায় একজন বাড়তি স্পিনার দলের সাথে রাখা , এই আরকি। ম্যাচ খেলবেন এমন আশা বোধহয় তাইজুল নিজেও করেননি। এছাড়া প্রথম দুই ম্যাচে মিরাজের সাথে নাসুমও তাল মিলিয়ে বোলিং করেছেন। ফলে তাইজুলের খেলারই কথা ছিল না।
তবুও দুই বছর পর আবার ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ এলো তাইজুলের সামনে। কেননা প্রথম দুই ম্যাচে স্পিনাররা উইকেট থেকে বেশ সহায়তা পেয়েছেন। সেজন্যই মিরাজ, নাসুম, মোসাদ্দেকের সাথে আরেকজন স্পিনার খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় তাই শেষ ম্যাচে একাদশে তাইজুল ইসলাম।
এর আগে বাংলাদেশের হয়ে যেই ৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন সেখানে খুব খারাপ করেছেন তা বলা যাবেনা। ৯ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে ছিল ১২ উইকেট। তবে অধিকাংশ ম্যাচই খেলেছেন কারো জায়গায়। ফলে তাঁরা ফিরলে তাইজুল বাদ পড়েছেন।
এবারো প্রেক্ষাপট একই। তবে আজ বল হাতে তাইজুল একাই ধ্বসিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন আপ। ব্র্যান্ডন কিং কে বোল্ড করে শুরু করেছিলেন। রেভমন পল , নিকোলাস পুরানদের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও তিনিই ভেঙেছেন। সবমিলিয়ে দশ ওভার বোলিং করে ২৮ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। পাঁচ উইকেট তাইজুল আগেও নিয়েছেন, তবে সেগুলো সবই টেস্টে। এবার ওয়ানডে ক্রিকেটেও প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট। ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজেকে চেনানোর সুযোগটা হাত ছাড়া করেননি।
তবে এই পাঁচ উইকেট নেয়াই কী আসলেই তাইজুলের ক্যারিয়ারে কোন পরিবর্তন আনবে? ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি কী আদৌ ফিরতে পারবেন। কিংবা নিয়মিত এই ফরম্যাটে খেলার সুযোগ কী আছে? সেসব বোধহয় তাইজুল ভাবেননা, তাঁর কাজ জায়গায় বল করে উইকেট নেয়া।