ট্রান্সফার উইন্ডো ফুটবলেরই আরেক খেলা। এই খেলার মারপ্যাচে কত ফুটবলার নিজেদের ঠিকানা বদলে ফেলেন। কিন্তু কখনো কখনো লম্বা সময় ধরে একটি দলের হয়ে মাঠ মাতানোর পর তাদের বিদায় বলাটা বেশ কঠিন। এদের কেউ কেউ অবশ্য আবার ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে নিজদের পুরোনো জার্সি নতুন করে গায়ে জড়ান।
ফুটবলের ইতিহাসে খেলোয়াড়দের পুরোনো ক্লাবে আবেগপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের বহু ঘটনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন যারা নিজেদের পুরনো স্ফুলিঙ্গকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। এবার এমনই কিছু খ্যাতিমান খেলোয়াড়ের দিকে নজর দেয়া যাক, যারা তাদের সাবেক ক্লাবে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
- পল পগবা (জুভেন্টাস)
ফ্রান্স মিডফিল্ডার পল পগবা ২০১২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর আন্দ্রে পিরলোর মত কিংবদন্তির সাথে দাঁড়িয়ে তুরিনের ওল্ড লেডিদের মধ্য মাঠ সামলেছিলেন তিনি। ক্লাবটির টানা চার লিগ শিরোপা জেতায় অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু নিজেদের সাবেক খেলোয়াড়ের দুর্দান্ত ফর্ম দেখে ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে পগবাকে পুনরায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিয়ে আসা হয়।
অবশ্য জাতীয় দলের হয় এরপর ফর্ম ধরে রাখতে পারলেও ক্লাব ক্যারিয়ারে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে শুরু করেন পগবা। তাছাড়া নানান বিতর্ক সঙ্গী হয় তাঁর। শেষপর্যন্ত চলতি মৌসুম শেষে ফ্রী এজেন্ট হিসেবে আবারো জুভেন্টাসে ফিরে গিয়েছেন পল পগবা। তিনি যে ফুরিয়ে যাননি, সেটা এবার প্রমাণ করতে হবে তাকে।
- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ২০২১ সালে ট্রান্সফার উইন্ডোর প্রায় শেষ মূহুর্তে নাম লিখিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। এই ক্লাবের হয়ে একসময় ইতিহাস রচনা করেছিলেন রোনালদো; এরপর রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ঘুরে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছেন।
অবশ্য নিজে পারফর্ম করে দলকে এগিয়ে নিলেও গত মৌসুমে পুরো দলের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। সামনের মৌসুমে যদি তিনি দলে থাকেন তাহলে এরিক টেন হ্যাগের অন্যতম সেরা অস্ত্র হবেন সেটা নিশ্চিত।
- রোমেলু লুকাকু (ইন্টার মিলান)
পল পগবার মত কিছুদিন আগেই প্রত্যাবর্তনের জন্ম দিয়েছেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু। চেলসিতে আসার একবছর পরেই তিনি ফিরে গিয়েছেন সান সিরোতে। মৌসুমের শুরতে ক্লাব বিশ্বকাপের স্বাদ পেলেও পরবর্তী সময়টা একেবারেই ভাল যায়নি তাঁর। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে লুকাকুর ফর্মে বিপর্যয় ঘটেছিল।
অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেও তিনি চেলসির হয়ে খেলেছিলেন তাই বলাই যায়, পগবার মত দুই ক্লাবে দুইবার করে নাম লিখার কীর্তি আছে লুকাকুর।
- ওয়েন রুনি (এভারটন)
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ওয়েন রুনির জাদু দেখে মুগ্ধ হয়নি এমন ফুটবল ভক্ত বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইংল্যান্ড এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রেকর্ড সর্বোচ্চ গোল স্কোরার এই কিংবদন্তি অবশ্য বেড়ে উঠেছিলেন এভারটনে।
তাই শৈশবের ক্লাবের ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৭ সালে তিনি এভারটনের হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ক্লাব ছাড়ার তেরো বছর পর ফিরে নিজের প্রত্যাবর্তন রঙিন করতেও ভুল হয়নি তাঁর। একবছর এই দলটির হয়ে খেলেছিলেন তিনি৷ আর সেসময় তাদের আর্মব্যান্ডও ছিল রুনির হাতে।
- থিয়েরি অঁরি (আর্সেনাল)
অজেয় আর্সেনাল দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফরাসি তারকা থিয়েরি অঁরি। গানারদের হয়ে এই স্ট্রাইকার পুরো এক প্রজন্ম মাতিয়ে রেখেছিলেন নিজের সুরে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত টানা ইংলিশ ক্লাবটির হয়ে খেলার পর তিনি নিউইয়র্ক বুলসে যোগ দিয়েছিলেন।
তবে ২০১২ সালে সাবেক ক্লাবের অনুরোধে দুই মাসের জন্য ধারে ফিরে আসেন আর্সেনালের জার্সিতে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই ফাইনালে গোল করে গানারদের এফএ কাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন তিনি।
- জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (এসি মিলান)
ঘন ঘন ক্লাব পাল্টানোর জন্য খ্যাতি আছে সুইডিশ তারকা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের। নিজের ক্যারিয়ারে অনেক বারই ঠিকানা বদল করলেও মাত্র একবারই তিনি ফিরেছেন প্রাক্তন ক্লাবে। আর সেটি হলো ইতালির এসি মিলান।
চল্লিশ বছর বয়সেও তিনি দলটির হয়ে সর্বোচ্চ পারফর্ম করেছেন। মাঠ এবং মাঠের বাইরে অবদান রেখেছেন লিগ শিরোপা জয়ে। আপাতত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই তারকাকে দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা।
- দিদিয়ের দ্রগবা (চেলসি)
২০১২ সালে চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে সমর্থকদের বিদায় বলেছিলেন দিদিয়ের দ্রগবা। কিন্তু স্টামফোর্ড ব্রিজে তাঁর অধ্যায়ের সমাপ্তি তখন হয়নি। দুই বছর চীন এবং তুরস্কে কাটানোর পর ব্লিজদের নীল জার্সির মায়া ঠিকই খুঁজে নিয়েছে আফ্রিকান এই কিংবদন্তিকে।
ফেরার পর নিজের ফর্ম রাখতে ভুল হয়নি দ্রগবার। চেলসিকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতিয়ে নিজের যোগ্যতা আরেকবার প্রমাণ করে দিয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার। এছাড়া ইংলিশ লিগে আফ্রিকান ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন তিনি; যদিও পরে লিভারপুল উইঙ্গার মোহামেদ সালাহ সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে৷
- হোসে মরিনহো (চেলসি)
শুধু ফুটবলার নয়, কোচদের ক্যারিয়ারেও ঘটে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা। এমনই একজন পর্তুগিজ মাস্টারমাইন্ড হোসে মরিনহো। পোর্তোর হয়ে অবিশ্বাস্যভাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পরে চেলসি এফসি এই কোচকে নিজেদের ডাগ আউটে নিয়ে আসে।
প্রিমিয়ার লিগসহ ছয়টি ঘরোয়া শিরোপা জেতার পর ২০০৭ সালে মরিনহো ইংল্যান্ড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে চলে আসেন। কিন্তু ভুলতে পারেননি স্টামফোর্ড ব্রিজকে, তাই রিয়াল অধ্যায় শেষ করে আবারো চলে আসেন এখানে।
এদের ছাড়াও আরো অনেক ফুটবলারের ক্যারিয়ারে ঘটেছে এমন ঘটনা। আঁতোয়া গ্রিজম্যান, গ্যারেথ বেল, জিয়ানলুইজিন বুফন, মারিও গোৎজের মত বিখ্যাত খেলোয়াড়রা ক্যারিয়ারের একটা সময় ফিরে এসেছিলেন অতীতে।