প্রভাত জয়সুরিয়া, ত্রিশেই হোক বাজিমাত!

ত্রিশ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের ঘটনা সচরাচর চোখে পড়েনা। কিন্তু ২৯ জুন হতে শুরু হওয়া শ্রীলঙ্কা- অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দুই টেস্ট বিশিষ্ট সিরিজে অভিষেক ঘটে ত্রিশের প্রভাত জয়াসুরিয়ার। তাও সতীর্থ জেফরি ভ্যান্ডারসে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় প্রভাতকে অনেকটা নিরুপায় হয়েই দলে জায়গা দেয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি। প্রভাতের ক্যারিয়ারে এর আগে মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলার সুযোগ হয়েছিল, তাও তা চার বছর আগে। তিনি যে নজরকাড়া পারফরমেন্স দিয়ে দলে জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেননি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এইতো অজিদের সাথে সিরিজের আগেই, শ্রীলঙ্কান দল খেলেছিল বাংলাদেশের সাথে। তখনও একবার দলের বোলার লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ইনজুরিতে পড়লে, তাঁর জায়গায় প্রভাতের টেস্ট অভিষেকের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিল। কিন্তু তখন গুঞ্জন উঠেছিল যে তিনি দুই কিলোমিটার ফিটনেস পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন এবং টেস্টের জন্য অনির্বাচিত হয়েছিলেন। মিডিয়া থেকে শুরু করে নির্বাচক সবার অবজ্ঞার পাত্র হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে আনফিট, অলস ও বয়স্ক স্পিনার বলে সমালোচনা করা হয়েছে।

‘বেটার লেট দ্যান নেভার’ বাক্যটির মতোই প্রভাতের জীবনেও আলোর দ্যুতি ঠিকই ধরা দিয়েছিল, একটু দেরিতে আরকি। অজিদের বিপক্ষেও তিনি যে দলে ডাক পেলেন, প্রভাত যে নির্বাচকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন না তা বোঝাই যায়। প্রথম টেস্টে অজিদের যাছে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু করোনা শ্রীলঙ্কার চারজন ক্রিকেটারকে কুপোকাত করলে তখন দ্বিতীয় টেস্টের জন্য স্পিনার প্রভাত জয়াসুরিয়াকে দলে নেয়া হয়েছিল।

অবজ্ঞার জবাবটা দিতে হয় কিভাবে? নিশ্চয়ই এমন কিছু একটা ঘটিয়ে যা অবজ্ঞার কারণটিকেই ছাপিয়ে যায়। প্রভাত জয়সুরিয়া সব অবজ্ঞার যোগ্য জবাব দিলেন তাঁর অভিষেক টেস্টেই অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাট হাতে দীনেশ চান্ডিমাল প্রথম ইনিংসে ২০৬ রানের বিশাল ইনিংস খেলে এক দিকে লড়াই করেছেন, অন্যদিকে বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি উইকেট তুলে নিয়ে অজিদের আটকে রাখার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন প্রভাত জয়সুরিয়া।

প্রথম ইনিংসে ১৯০ রানের বিশাল লিড নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসেও কিলার বোলিং করে ১৬ ওভারে ৫৯ রান খরচ করে ছয়টি উইকেট নেন তিনি। ম্যাচে তার ফিগার ১২/১৭৭! বাঁহাতি এই স্পিনারের তোপেই ১৫১ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ হারে ইনিংস ও ৩৯ রানে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই ১২ টি উইকেট পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। অভিষেক টেস্টেই ম্যাচ সেরা হন প্রভাত জয়াসুরিয়া।

এই টেস্টের পারফরমেন্সের দরুণ রেকর্ডবুকেও জায়গা করে নিয়েছেন লঙ্কান এই লেগ স্পিনার। অভিষেক টেস্টে ১২ উইকেট নেওয়া বিশ্বের পঞ্চম বোলারের খেতাব পেলেন তিনি। ১৮৯০ সালে ইংরেজ খেলোয়াড় ফ্রেড মার্টিন প্রথমবারের মতো এই কীর্তি গড়েছিলেন।

ফ্রেড মার্টিনের পর এবং প্রভাত জয়সুরিয়ার আগ অব্দি রেকর্ডবুকে জায়গা পাওয়া বাকী তিনজন বোলার হলেন অস্ট্রেলিয়ার বব ম্যাসি, ভারতীয় ক্রিকেটার নরেন্দ্র হিরওয়ানি, অস্ট্রেলিয়ান বোলার জেসন ক্রেজা। শ্রীলঙ্কার হয়ে এই কীর্তি একমাত্র জয়াসুরিয়ার দখলেই আছে।

এদিকে চলমান পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কার সিরিজের প্রথম টেস্টেও প্রভাত জয়সুরিয়া নজর কেড়েছেন। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে প্রভাত ৮২ রানের বিনিময়ে পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়েছেন। অর্থাৎ টানা তিনবার ফাইফারের রেকর্ড ও করলেন তিনি। আবার শেষ ইনিংসে ১৩৫ রানে চারটি উইকেট তুলে নিয়েছেন। যদিও পাকিস্তানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি হারতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে।

যে জয়াসুরিয়াকে দলে জায়গা দিতেই এতো গড়িমসি করা হলো, সেই জয়াসুরিয়াই শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম শক্তিশালী বোলার রূপে  নিজেকে প্রমাণ করে দেখালেন। তিনি বুঝালেন ত্রিশেই বুড়ো না ভেবে বরং অভিজ্ঞ হিসেবে ভাবতে শেখালেন। নিজের ব্যাপারে ক্রিকেট বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করেই যথোপযুক্ত প্রতিশোধটা নিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link