বডিগার্ড থেকে ক্রিকেটের কাল্ট হিরো

এই যে রোমানিয়ান ক্রিকেটার পাভেল ফ্লোরিন, তিনি কি কখনো স্বপ্নেও ভেবেছিলেন যে একদিন রোমানিয়ান জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামবেন? খেলাধুলার প্রতি নিখাঁদ ভালোবাসাটুকু তো ছিলই, কিন্তু নিজেই যে একদিন ক্রিকেটার বনে যাবেন অতদূর চিন্তাতেও আনেননি।

হ্যাঁ, রোমানিয়া আর ক্রিকেট – তেল ও জলের এই সম্পর্কের মধ্যেও বেশ আলোচিত হয়েছেন এক ক্রিকেটার। তার নাম আবার আছে বিগ ব্যাশের প্লেয়ার ড্রাফটেও। অথচ, এক সময় ছিলেন স্রেফ একজন বডিগার্ড। সেই তিনিই কিনা আজ বিশ্বব্যাপী এক পরিচিত নাম!  ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ক্রিকেট লিগের একটি ম্যাচে তাঁর অনন্য বোলিং অ্যাকশন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করায় বিশ্বব্যাপী লাইমলাইটে আসেন তিনি। 

অথচ পাভেল ফ্লোরিন পেশায় একজন বডিগার্ড। বয়সটা চল্লিশ। নাহ, চল্লিশেই চালশে হয়ে যাননি ভদ্রলোক। এই চল্লিশ বছর বয়সেই ক্রিকেট খেলে চলছেন অনায়াসে, পাশাপাশি বডিগার্ড হিসেবে পেশাদারী কাজটাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। কাটখোট্টা বডিগার্ড থেকে ৩২ বছর বয়সে কিভাবে ক্রিকেটে আগ্রহ খুঁজে পেলেন সেই সুন্দর গল্পটা তিনি নিজেই জানিয়েছেন।

তিনি বলেন,আমি একটি আমেরিকান ফুটবল ক্লাবে খেলছিলাম যখন আমি কিছু লোককে ক্রিকেট খেলতে দেখলাম। এর আগে আমি টিভিতে ক্রিকেটের কেবল কয়েকটি ম্যাচ দেখেছিলাম। ওদের খেলতে দেখে আমার আগ্রহ জাগলো। আমি তাঁদের বললাম আমি এই খেলাটি একটু খেলে দেখতে চাই তাঁদের সাথে।’

তারপর পাভেল ফ্লোরিন কিছুক্ষণ ব্যাটিং করলেন। তারপরের গল্পটা তাঁর ভাষ্যমতে এমন, একজন খেলোয়াড় আমার প্রশংসা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে আমি রোমানিয়ার হয়ে ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলতে পারি। আমাকে তিনি বললেন আমি ভালো ব্যাটসম্যান।’

পাভেল ফ্লোরিনের ভাগ্যই তাঁকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল নিঃসন্দেহে। নইলে কেনই বা জীবনের প্রায় বত্রিশটি বছর একভাবে কাটিয়ে দেয়ার পর, ক্রিকেটের রঙ্গিন দুনিয়া তাঁকে নতুন করে সুযোগ পাইয়ে দেবে! যদিও ফ্লোরিন পরবর্তীতে ব্যাটিং নয় বরং বোলিংয়ে আগ্রহ খুঁজে পেয়েছিলেন এবং অসাধারণ বোলিং দক্ষতা অর্জন করেছেন।

ইউরোপিয়ান ক্রিকেট লিগে ক্লুজ দলের হয়ে খেলার সময় তাঁর বোলিং ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর তিনি প্রশংসা ও সমালোচনা দুইয়েরই শিকার হয়েছেন। সাবেক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন ভবিষ্যতে তাঁকে বোলিংয়ে সাহায্য করার কথা জানিয়েছিলেন। আবার ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার জোফরা আর্চার তাঁর প্রশংসা করেছিলেন।

মজার ব্যাপার হল, তিনি যে রাতারাতি জনপ্রিয় বনে গিয়েছে্‌ন, সেই চমকপ্রদ খবর তিনি পেয়েছিলেন যখন তিনি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন সেই মুহুর্তে। তারপর তিনি আরও অবাক হয়েছিলেন যখন একজন টিভি ক্রু তাঁর ইন্টারভিউ নিতে এসেছিলেন। ফ্লোরিন জনপ্রিয় হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার সারে হিলস ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তো বিগ ব্যাশ খেলারও কাছাকাছি চলে এসেছেন তিনি।  

ফ্লোরিনের নিজের স্বীকারোক্তিতে, খেলাধুলার প্রতি তার ভালবাসা তার পেশাদার কাজের প্রতি ভালবাসার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘প্রতি রাতে আমি একজন বডিগার্ড হিসাবে কাজ করি এবং মানুষের দেখাশোনা করি। কিন্তু বাস্তবতা হল আমি খেলাধুলাকে ভালবাসি এবং খেলাধুলাকেই আমার আসল কাজ মানি।’

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে পাভেল ফ্লোরিনের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়। রোমানিয়ান জাতীয় দলে ফিটনেস বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করানোর জন্য সতীর্থদের মাঝে ফ্লোরিনের খ্যাতি রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ক্লুজ ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।

যদিও রোমানিয়ায় ক্রিকেট ব্যাপকভাবে খেলা হয় না। এইতো ২০১৩ সালে দেশটি আইসিসির অধিভুক্ত একটি দেশ হয় এবং ২০১৭ সালে আইসিসির একটি সহযোগী হয়ে ওঠে। মূলত ফুটবলপাগল দেশ হলেও, ধীরে ধীরে রোমানিয়ায় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও আগ্রহ দুটোই বাড়ছে। আর সেই রোমানিয়ার ক্রিকেটেরই কাল্ট হিরো হলেন এই পাভেল ফ্লোরিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link