যোগ্য দাবিদারের প্রাপ্য সম্মান

‘আফিফ ছয়-সাতের ব্যাটসম্যান। আমরা আপাতত তাঁকে সেখানেই ভাবছি।’ – এই বক্তব্যের সাথে কী আপনি একমত? বছর খানেক আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় তখনকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কথাগুলো বলেছিলেন গনমাধ্যমকে। তবে আফিফ হোসেনের ব্যাটিং দেখে থাকলে রিয়াদের সেই কথা সাথে আপনি একমত হবেন না নিশ্চয়ই।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন। আর রিয়াদের এমন কিছু থিওরি থেকেও বেরিয়ে আসতে চায় বাংলাদেশ। একটু দেরিতে হলেও বাংলাদেশ দল এখন আফিফের গুরুত্বটা বুঝতে পারছে। তাইতো আফিফ হোসেন ধ্রুবকে তাঁর প্রাপ্য জায়গাটা দিতে চায় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজম্যান্ট।

গত একবছরে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম প্রাপ্তি আফিফ। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ কলাপ্স করলেই ছেলেটা ভালো খেলে। ক্রিকেটপাড়ায় শোনা যায়, দল চাপে পড়লেই তাঁর ব্যাট জ্বলে উঠে। সব চাপ সরিয়ে তিনি বাইশ গজে নিজের একটা কর্তত্ব স্থাপন করেন। তবে বাইশ গজে তাঁকে একটু সময় দিতে হয়। তাহলেই আফিফের আসল ম্যাজিকটা দেখা যায়।

আর আসছে এশিয়া কাপ থেকেই আফিফকে নিজের প্রাপ্য জায়গাটায় দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। আফিফের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমরা সেখানেই ওকে সুযোগ দেব। আমরা নির্দিষ্ট একটা দায়িত্ব নিয়ে আফিফকে চিন্তা করছি। হি ইজ আ ডায়নামো। আমার মনে হয়, সে আত্মবিশ্বাসী একটা ছেলে। শেষ দুটি সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করেছে। ওয়ানডেতেও ভালো খেলেছে। আমরা আফিফকে সে জায়গাটা দেব। কারণ, সে আমাদের ভবিষ্যৎ।’

এই মুহূর্তে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পায়ের তলায় মাটি আছে। টেস্ট ক্রিকেটেও কখনো কখনো লড়াই করা যায়। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেন আমাদের ঠিক আসেইনা। শুধু মাঠের ক্রিকেটে নয়, আমাদের শরীরি ভাষা, দৈহিক গঠন, গোলটেবিলে কিংবা মাঠের পরিকল্পনা কোনটাই ঠিক টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়, আক্রমণাত্মক নয়।

আমাদের মধ্যে কেমন একটা পলায়নপর ব্যাপার আছে। মাঠে গা বাচিয়ে খেলতে চাই। তবে যে দুই একজন ক্রিকেটার এই বৃত্তটা থেকে বেরিয়ে আসতে  চায় তাঁদের একজন আফিফ হোসেন ধ্রুব। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা ঠিক টি-টোয়েন্টির মত করেই খেলতে চান আফিফরা, আক্রমণাত্মক-আগ্রাসী।

আর আফিফের এই আক্রমণাত্মক মানসিকতারই প্রশংসা ফুটে উঠলো খালেদ মাহমুদ সুজনের কণ্ঠে, ‘সবচেয়ে বড় কথা, সে আক্রমণাত্মক। এটাই আমরা দলের মধ্যে চাই। বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে। অবশ্যই তাকে আমাদের সে সুযোগটা করে দিতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব।’

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছেন আফিফ। তবে কোন ফরম্যাটেই তিনি ঠিক নিজের প্রাপ্য জায়গাটায় খেলতে পারছেনা। তবুও সুযোগ পেলেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। বাইশ গজে একটু সময় পেলে তিনি কী করতে পারেন সেটা প্রমাণ করেছেন।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই বাংলাদেশ যে একটি করে ম্যাচ জিতেছে তাতে বড় অবদান ছিল আফিফেরই। সিরিজ শেষে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালও আফিফের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।

তবে, লম্বা সময় ধরেই আফিফকে আরেকটু উপরে খেলানোর কথা বলা হচ্ছিল। অবশেষে সেটির বাস্তবায়ন যে হতে যাচ্ছে তা খালেদ মাহমুদ সুজনের কথায়ই স্পষ্ট। জানা যায় এশিয়া কাপ থেকেই চার নাম্বার পজিশনে খেলতে দেখা যাবে আফিফকে। ফলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপটাই পরিকল্পনা করা হবে আফিফকে কেন্দ্র করে। এবার প্রাপ্য জায়গায় আফিফের ব্যাটটা আরো বেশি ঝলসে উঠুক – সেটাই প্রত্যাশা।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link