প্রথম তিন ম্যাচের সবগুলো জিতে মৌসুমের শুরুটা বেশ ভালই করেছে আর্সেনাল আর এক্ষেত্রে দলের ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে খেলা স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসের অবদান অসামান্য। ঘরের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে নিজের অভিষেক ম্যাচে লিস্টার সিটির বিপক্ষে দুটি গোল এবং দুটি অ্যাসিস্ট করে এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার নিজের রাজকীয় আগমনবার্তা দিয়েছেন।
দলবদলের বাজারে এখন অতি সাধারন মানের ফুটবলারদের জন্যও যেখানে আকাশচুম্বি দাম হাঁকা হচ্ছে সেখানে প্রিমিয়ার লিগের প্রমাণিত ফুটবলার হিসেবে জেসুসের ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড দামটা বেজায় সস্তা হয়েছে বলাই যায়।
নর্থ লন্ডনের ক্লাবটিতে আসার পর থেকেই আর্সেনালের নখদন্থহীন আক্রমন ভাগের ছেহারাই বদলে দিয়েছেন তিনি। আর্সেনালের ত্রাণকর্তা হিসেবে দলের আক্রমণের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন জেসুস, গানার সমর্থকরা তাই এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্ন দেখতেই পারেন।
শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদিনহো মনে করেন জেসুস আর্সেনালকে আরও বেশি কিছু দিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘গ্যাব্রিয়েল যখন সিটিতে যোগদান করেছিল তখন আমি বলেছিলাম যে সে বিশ্ব সেরা ফুটবলারদের একজন হবে। সিটিতে সে যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই নিজেকে প্রমান করেছে কিন্ত ম্যানচেস্টার সিটিতে তাকে ঠিকমত মূল্যায়ন করা হয়নি, সম্মান দেয়া হয়নি। আর্সেনালে তাকে আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং দলের ম্যানেজার ও সমর্থকরা তাকে যথাযত সম্মান প্রদর্শন করেছে যার বহিপ্রক্রাশ সে মাঠের খেলার মাধ্যমে দেখিয়েছে। এই মৌসুমে আমি তাকে শুধু প্রিমিয়ার লিগের নয় বরং গোটা ইউরোপের সেরা ফুটবলার হিসেবে দেখতে চাই।’
এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি আরো বলেন, ‘দলবদলের বাজারে আর্সেনাল যা কেনাকাটা করেছে তাতে তারা অনায়াসে টপ ফোরে ফিরবে এমনকি তারা লিগ শিরোপার জন্যও লড়াই করতে পারে। প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার জন্য যদিও ম্যানচেস্টার সিটি শক্ত দাবিদার কিন্ত ফুটবলে যে কোন কিছুই হতে পারে।’
গত মৌসুমে শৃঙ্খলা জনিত কারণে অবামিয়াং কে নিজের দল থেকে ছেঁটে ফেলেন আরতেতা। দলের নাম্বার নাইন হিসেবে তাই লাকাজেত এবং এনকেটিয়াকে খেলাতে হয়। এডি এনকেটিয়া যদিও শেষের দিকে কিছু গোল পেয়েছেন কিন্ত দুই জনের একজনও ডি বক্সে স্টাইকার হিসেবে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি তাই গোলের জন্য মূলত মিডফিল্ড ও উইংইয়ের খেলোয়াড়দের উপরই নির্ভর করে থাকতে হয় আর্সেনালকে।
গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ২০ ম্যাচ খেলা লাকাজেতের ডি বক্সে মাত্র ৩১ টি টাচ ছিল আর এদিকে জেসুস মাত্র দুই ম্যাচেই ডি বক্সে ২৬টি টাচ সম্পন্ন করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে ডিবক্সে ডিফেন্ডারদের জীবন কঠিন করে দিতে পারে এমন ক্ষমতা সম্পন্ন একজন স্টাইকার পেয়েছে নর্থ লন্ডনের ক্লাবটি যা দলের মিডফিল্ডের কাজ সহজ করে দিবে তাই ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলার গানারদের জন্য একটা স্নিগ্ধ বাতাস হয়ে এসেছেন বলাই যায়।
তবে শুধু মাঠের ফুটবল নয় মাঠের বাইরেও দলে অবদান রাখছেন তিনি, ড্রেসিং রুমে টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই ব্রাজিলিয়ান আর মূলত এই কারনেই মিকেল আরতেতা জেসুস কে দলে ভিড়িয়েছেন।
স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গানারদের ম্যানেজার বলেন, ‘তাকে দলে ভেড়ানোর অন্যতম বড় কারণ ছিল এটি। আমরা আগে থেকেই জানতাম খেলোয়াড় হিসেবে সে কেমন এবং দলে সে কি রকম প্রভাব ফেলবে। গত কয়েক বছরে প্রায় সবকিছুই সে জিতেছে, জেতার জন্য কি করতে হয় তা সে খুব ভাল করেই জানে। এখানে খেলোয়াড় হিসেবে তাকে আমরা টিম লিডারের ভুমিকায় দেখতে চেয়েছিলাম, যা সিটি থেকে একদমই আলাদা। সে একজন ন্যাচারাল লিডার এবং তাকে আমরা যা করতে বলছি তার মত একজন অভিজ্ঞ ফুটবলারের তা করার সামর্থ রয়েছে।’
আর্সেনালের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ম্যানচেস্টার সিটিতে পেপ গার্দিওলার সহকারি হিসেবে কাজ করেন আরতেতা তাই তিনি যে জেসুস সম্পর্কে ভাল মত জানেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। স্প্যানিশ এই ম্যানেজার আরো বলেন, ‘ও প্রিমিয়ার লিগের একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, এখানে অনেক ম্যাচ খেলেছে সে কিন্ত গত দুই বছর ধরে সিটিতে সে মূলত একজন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। এখন সে দলের মূল খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব নিতে চায়, যে নিজের কাঁধে দলের দায়িত্ব নেবে এবং দলের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে এমন ফুটবলার হতে চায়।’
ইতোমধ্যে আর্সেনালে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলির সাথে তার কেমিস্ত্রিটা বেশ জমে উঠছে। ক্রিস্টাল প্যালেস এবং লিস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচে এই দুইজনের লিঙ্কআপ প্লে এবং একে অপরের সাথে জয়গা পরিবর্তন করা ছিল নান্দনিক। নিজে ব্রাজিলিয়ান তাই অন্য ব্রাজিলিয়ানদের মেন্টর হিসবে সাহায্য করবেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
একই সাথে অন্য ফুটবলাররাও যাতে তার থেকে সাহায্য পান সেই দিকেও তার নজর আছে, মোট কথা দল অন্তপ্রান খেলোয়াড় তিনি। জেসুসের মতই সিটি থেকে এই দলবদলের বাজারে আর্সেনালে যোগ দেওয়া জিনচেঙ্কো এই ব্রাজিলিয়ান সম্পর্কে বলেন, ‘তার কাছে দল সবার আগে, দল ও ক্লাবের জন্য সে ব্যাক্তিগত অর্জনের বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।’
গত মৌসুমে টপ ফোরের খুব কাছে এসেও তা মুঠিবদ্ধ করতে পারেনি আর্সেনাল। শেষের কয়েক ম্যাচে একজন জাত স্টাইকারের অভাবে বেশ ভুগিয়েছিল। তাদের তাই এই ইনফর্ম গ্যাব্রিয়েল জেসুস এখন গানারদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ইউরোপের।এখন সমর্থকদের কানে বাজছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের থিম সং আর তাদের বিশ্বাস ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলার তাদের মনের সুপ্ত বাসনা পূর্ণ করবেন, আর তা হলে অর্ধ যুগ পর দলকে তারা দেখতে পাবেন ইউরোপিয়ান এলিটদের টুর্নামেন্টে।