বিশ্বের সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল দল নি:সন্দেহে পাকিস্তান। অনিশ্চয়তা আর অঘটনে ভরা দলটি যেকোনো টুর্নামেন্টে যোগ করে বাড়তি চমক আর রোমাঞ্চ। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের এশিয়া কাপেও। আসন্ন মহাদেশীয় লড়াইকে সামনে রেখে পাকিস্তানকে নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই।
২০২২ সালের এশিয়া কাপ আয়োজিত হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। আর ক্রিকেটের এই সংস্করণের সাথে পাকিস্তানের সখ্যতা পুরোপুরি আলাদা। বিশ ওভারের এই খেলায় যেমন অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ, পাকিস্তান দলটিও ঠিক তেমনই। বৈশিষ্ট্য মিলে যাওয়াতেই হয়তো সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের সাফল্য তুলনামূলক বেশি।
গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা পাকিস্তান জয় পেয়েছে ১১টি ম্যাচেই। এই এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে শীর্ষ কোনো দলের জয়ের অনুপাত তাদের চেয়ে বেশি নয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে তিন নম্বরে রয়েছে তারা। তাই এবারের এশিয়া কাপেও শিরোপার অন্যতম বড় দাবিদার বাবর আজমের দল।
পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের শক্তির জায়গা টপ অর্ডার। বিশেষ করে অধিনায়ক বাবর আজম দলটির লাইন আপের সবচেয়ে বড় নাম। আইসিসি র্যাংকিংয়ে ব্যাটারদের মাঝে সেরা তিনি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর ব্যাটে চ ড়েই ভারতকে হারিয়েছিল পাকিস্তান। এছাড়া বিশ্বকাপের পরের সিরিজগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন এই ব্যাটার।
বাবর আজমের ওপেনিং সঙ্গী মোহাম্মদ রিজওয়ানও আছেন দারুণ ছন্দে। এমনকি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে গত এক বছরে রিজওয়ানের পরিসংখ্যান বাবরের চেয়েও ভাল। তাই এশিয়া কাপে দুইজনের ব্যাটের দিকে চেয়ে থাকবে পাকিস্তান।
তবে শক্তির জায়গা টপ অর্ডার হলেও বাবর, রিজওয়ানদের রান তোলার গতি কিছুটা হলেও অস্বস্তির কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে দুইজনের স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর কম। বড় ইনিংস খেলতে পারলে তো ভালোই, কিন্তু সেট হয়ে পরবর্তীতে আউট হলে এই দুইজনের ধীরগতির শুরু পাকিস্তানের জন্য বিপদ হতে পারে।
অবশ্য টপ অর্ডারের স্লো ব্যাটিং পরে পুষিয়ে দেয়ার সামর্থ্য আছে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটারদের। ফখর জামান, আসিফ আলি, শাদাব খান প্রত্যেকে বাউন্ডারি হাঁকাতে বেশ দক্ষ। তারপরও বাবর আজমদের ডট বলের ব্যাপারে একটু সতর্ক হতেই হবে। কেননা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন ‘অ্যাংকরিং রোল’ প্রায় সময় দলের জন্য অভিশাপ হয়ে আসে। এখানে ৪০ বলে ৪৫ বা ৫০ করার চেয়ে ১০ বলে ২০ রান করার গুরুত্ব অনেক বেশি।
বিধ্বংসী ফাস্ট বোলিং ইউনিট পাকিস্তানের ঐতিহ্য। এশিয়া কাপেও দলটির মূল শক্তির জায়গা পেসাররা। যদিও স্ট্রাইক বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদি ইনজুরির কারনে ছিটকে পড়ায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে পাকিস্তান। তবে মোহাম্মদ হাসনাইন, হারিস রউফ, শাহনাওয়াজ দাহানি নাসিম শাহ এর সমন্বয়ে তৈরি পেস আক্রমণ যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়। গতির ঝড় তোলার পাশাপাশি স্লোয়ার, ইয়র্কারে ব্যাটারদের পরাস্ত করার সক্ষমতা আছে তাদের।
স্পিন বিভাগেও যথেষ্ট সমীহ করার মত দল পাকিস্তান। লেগ স্পিনার শাদাব খান একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া খুশদিল সাহ, মোহাম্মদ নওয়াজের বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিন আরব আমিরাতের মাঠে বেশ কার্যকরী হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত – এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক না হলেও এই দেশেই অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচগুলো। আর মধ্যপ্রাচ্যর দেশটি পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের জন্য পরিচিত বটে। লম্বা একটা সময় এই দেশকে পাকিস্তানের হোম ভেন্যু ধরা হতো। তাই পিচের কন্ডিশন আর পরিবেশ বিবেচনায় পাকিস্তান তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানেই আছে।
আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের রয়েছে বিশাল এক সমর্থকগোষ্ঠি। গ্যালারিতে পাকিস্তান, পাকিস্তান ধ্বনি ভেসে আসা নিশ্চয়ই আরো ভাল খেলতে অনুপ্রাণিত করবে বাবরদের।
পাকিস্তানের এশিয়া কাপের মিশন শুরু হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সর্বশেষ দেখায় প্রতিবেশি দেশকে উড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান, এবারও তেমন কিছু আশা করবে তারা। সেই সাথে ২০১২ সালের পর দীর্ঘ এক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিজেদের করে নিতে চাইবে দলটি।