এশিয়া কাপে ভারত: ফেবারিট হওয়ার চাপ

টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি; ক্রিকেটের যেকোনো সংস্করণে সেরা দলগুলোর একটি ভারত৷ এমনকি পৃথিবীর যেকোনো মাঠে নিজেদের সেরাটা দেয়ার সামর্থ্য আছে তাদের। তাই ক্রিকেট বিশ্বের সব টুর্নামেন্টেই ফেভারিটের তকমা ভারতের গায়ে থাকেই। আর এটা যদি এশিয়া কাপ হয়, তাহলে তো কোন দ্বিধা ছাড়াই ভারতকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখা যায়।

আর কিছুদিন পরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে এশিয়া কাপকেই বেছে নিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। তাই এবার নিয়মিত একাদশের কোন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম নয়, বরং পূর্ণশক্তি নিয়ে আরব আমিরাতে মহাদেশীয় লড়াইয়ে অংশ নিবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেলে ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়েছে ভারত। অভিজ্ঞদের মাঝে অধিনায়ক রোহিত শর্মার সাথে আছেন বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজা, দীনেশ কার্তিক ভুবনেশ্বর কুমাররা। অন্যদিকে ঋষভ পন্থ, সূর্যকুমার যাদব, রবি বিষ্ণুই, আর্শ্বদীপ সিংয়ের মত কয়েকজন উদীয়মান তারকা প্রথম বারের মত এশিয়া কাপ খেলতে যাচ্ছেন।

বরাবরের মতই দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপ ভারতের মূল শক্তির জায়গা। নিজের দিনে বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তাদের। বিশেষ করে টপ অর্ডারের প্রত্যেকেই বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের মধ্যে অন্যতম। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলদের সাথে আছেন সূর্যকুমার যাদব।

কিন্তু এই বিধ্বংসী টপ অর্ডার এখন আবার ভারতীয় ম্যানেজম্যান্টের জন্য চিন্তার কারণ। কেননা গত তিন বছর থেকেই নিজের ছায়া হয়ে গিয়েছেন বিরাট কোহলি। অন্যদিকে ক্যাপ্টেন রোহিত নিজেও নেই সেরা ছন্দে। সবচেয়ে বড় সমস্যা মূলত কোহলি, রাহুল, রোহিত তিনজনই ধীরেসুস্থে ইনিংস শুরু করে পরে হাত খুলে ব্যাটিং করেন। তাই এই তিনজন একসাথে মাঠে নামলে ভারতের জন্য উড়ন্ত সূচনা পাওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যাবে।

সমাধান হিসেবে রাহুল বা কোহলিকে বাদ দিয়ে স্কাই খ্যাত সূর্যকুমারকে তিন নম্বর পজিশনে খেলাতে পারে ভারত। বর্তমানে টি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় সেরা ব্যাটারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সার্ভিস পেতে তাকে টপ অর্ডারে খেলানোর বিকল্প নেই। এছাড়া আস্থা রাখতে পারে আরেক ইনফর্ম ব্যাটার দীপক হুদার উপরও। কিন্তু স্কোয়াডের বড় বড় নামগুলোকে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখার সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে কি না সেটাই দেখার বিষয়।

টি-টোয়েন্টিতে দারুণ ফিনিশিং বদলে দিতে পারে ম্যাচের ফলাফল। এদিক দিয়েও এগিয়ে আছে ভারত। ঋষভ পন্থ, দীনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া প্রত্যেকে পরীক্ষিত পাওয়ার হিটার। আবার এদের কেউ ব্যর্থ হলেও আছেন রবীন্দ্র জাদেজা। তাই ডেথ ওভারে ভারতকে কিভাবে থামাবে তার পরিকল্পনা ভালভাবেই করতে হবে প্রতিপক্ষকে।

অবশ্য ব্যাটিংয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও পেস বোলিং নিয়ে স্বস্তিতে নেই ভারত। দলের মূল ফাস্ট বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ ইনজুরির কারণে ছিটকে গিয়েছেন। আবার এর আগে সম্ভাবনাময়ী পেসার হার্শাল প্যাটেলও চোটাক্রান্ত হয়েছেন। আপাতত তাই ভুবনেশ্বর, আর্শ্বদীপ সিংয়ের দিকে চোখ রাখছে ভারতীয় সমর্থকরা।

অন্যদিকে স্পিন বিভাগে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, চাহালদের পাশাপাশি আছে জাদেজা আর রবি বিষ্ণুই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের তুলনামূলক স্লো উইকেটে এরাই হতে পারে রোহিত শর্মার ভরসা।

সম্ভবত ফিল্ডিংয়ে ভারত সবচেয়ে বেশি অপ্রতিরোধ্য। কেউ হয়তো ভারতের ব্যাটারদের থামিয়ে দিতে পারবে, আবার কোনদিন হয়তো বোলাররা নিজের কাজ করতে ব্যর্থ হবেন। কিন্তু ভারতের ফিল্ডিং সক্ষমতা সবসময়ই ধ্রুব। নিশ্চিত একটা চার বাঁচানো কিংবা অবিশ্বাস্য কোন ক্যাচ লুফে নেয়া-ই একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এই দিকটায় অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলোর সাথে ভারতের পার্থক্যও একটু বেশি।

বিশ্বমানের সব ব্যাটসম্যান, বৈচিত্র্যময় বোলার আর দুর্দান্ত ফিল্ডারের কারণে টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকায় ভারতের নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। গত এক বছরে কোন দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ হারেনি দলটি, তাই আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলতে নামবে রোহিত শর্মার দল।

তবে ক্রিকেট খেলা মাঠেই খেলতে হয়। তাই কাগজে-কলমে বড় কোন দুর্বলতা না থাকলেও, মাঠের খেলায় পারফর্ম করা এখন জরুরি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি নিশ্চয়ই এখনো ভুলতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া।

এশিয়া কাপের আগের দুই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত, এবার হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার সুযোগ তাদের সামনে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, কিন্তু প্রয়োজনের সময় সেই সামর্থ্য ব্যবহার করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে উতরাতে পারলে নিজদের অর্জনে আরেকটি এশিয়ান ট্রফি যোগ করা খুব একটা কঠিন হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link