সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলে বিরাট কোহলিকে রাখা হবে কি না সেটি নিয়ে গুঞ্জন বেশ ডালপালা মেলেছে। অথচ এমন কিছু এক বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। ভারতের তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেই সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন তিনি; বিরামহীন রান করেছেন।
কিন্তু বর্তমানে সময়ে বাইশ গজে দেখা যাচ্ছে ম্লান কোহলিকে। এখনো যে রান পাচ্ছেন না ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। তবে বিরাট কোহলি টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই অ্যাপ্রোচে ব্যাটিং করতে পারছেন না। তাঁর ২০-২৫ কিংবা ৩০-৩৫ রানের ইনিংসগুলোতে স্ট্রাইক রেট ১৪০ বা ১৫০ হয় না। সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষেও ৩৫ রান করেছিলেন মাত্র ১০২ স্ট্রাইক রেটে।
কিন্তু, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি বাদ পড়বেন না – সেটা একপ্রকার নিশ্চিত বলা যায়। অন্তত বড় মঞ্চে নিজেদের সবচেয়ে সেরা ব্যাটারের উপর আরেকবার ভরসা করতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই আপাতত প্রশ্ন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেও বিরাট কোহলি দলে থাকবেন কি না। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই এমন আলোচনা ক্রিকেট পাড়ায় ছড়িয়ে আছে।
২০২১ সালের সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি ছিল বিরাট কোহলির নেতৃত্বে শেষ টুর্নামেন্ট। নিজের উপর চাপ কমিয়ে ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে এরপর এই ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। অবশ্য তারপরে একে একে বাকি দুই ফরম্যাটেও একই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি খুব একটা।
নেতৃত্বের চাপ কমে গেলেও ফর্মে ফিরতে পারেননি বিরাট কোহলি। এমনকি তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটেনি। সম্প্রতি স্টার স্পোর্টসের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজের ভঙ্গুর মানসিকতা তুলে ধরেছিলেন কোহলি। একটা পর্যায়ে ক্রিকেট আর উপভোগ করতে পারেননি বলেও স্বীকার করেছেন এই ব্যাটসম্যান।
মাত্র ৩৩ বছর, ইতোমধ্যে বিরাট কোহলি খেলেছেন ৪৬৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এছাড়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দলের হয়ে একটানা ১৫ মৌসুম খেলেছেন। ব্যাটিংয়ে সেরা পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ফ্রাঞ্চাইজির সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড তিনি।
২০২২ সালে এখন পর্যন্ত পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন বিরাট কোহলি। এই সময় তাঁর স্কোর যথাক্রমে ১৭, ৫২, ১, ১১, ৩৫; এর মাঝে ১৭ রান করতে ১৩ বল, ৫২ রান করতে ৪২ বল এবং ৩৫ রান করতে ৩৪ বল খেলেছেন তিনি। এটা স্পষ্ট যে, এমন ধীরগতির ইনিংস সাধারণত দলে কোন ইতিবাচক প্রভাব রাখে না।
টি-টোয়েন্টিতে আসলে প্রতি ম্যাচে ১০০ এর আশেপাশে স্ট্রাইক রেটে বড় ইনিংস খেলার কোন প্রয়োজন নেই। তারচেয়ে বরং ২০-২২ বলে ৩৫ বা ১০ বলে ২০ রান জয়ের পথে দলকে এগিয়ে রাখে।
৬ থেকে ১৪ ওভার অর্থাৎ ইনিংসের মাঝের সময়টাতে বিরাট কোহলি এখন বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই ব্যাটিং লাইনআপের গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর পজিশনে তাঁর অন্তর্ভুক্তি নানান প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। যদিও এটা নিশ্চিত যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত নির্বাচকরা বিরাট কোহলিকে নিয়ে তেমন একটা ভাববে না।
কিন্তু, বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে ভারত কি করবে সেটা এখন আলোচনার বিষয়। এক্ষেত্রে বিরাট কোহলি নিজেই চাইলে উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করতে পারেন। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ শেষে টি-টোয়েন্টি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবসর নিতে পারেন তিনি। এসময় ওয়ানডে এবং টেস্ট ফরম্যাটে পূর্ণ মনোযোগ দিলে লাভটা ভারতেরই হবে।
কিন্তু যদি বিরাট কোহলি নিজ থেকে এমন সিদ্ধান্ত না নেন, সেক্ষেত্রে নির্বাচকরা খুব সম্ভবত তাকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবে। অফ ফর্মের জন্য শচীন টেন্ডুলকারকে ওয়ানডে থেকে, রাহুল দ্রাবিড়কে রঙ্গিন পোশাক থেকে এবং সৌরভ গাঙ্গুলিকে সবধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। তেমন কিছু বিরাট কোহলির সাথে ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।