বিমর্ষ মুখে বসে আছেন শ্রীলঙ্কার কোচ এবং দলের কম্পিউটার অ্যানালিস্ট। আর তাদের মাঝে দুটি কোডেড সিগন্যাল, ‘২ ডি’ ও ‘ডি৫’। উদ্দেশ্য এই দুটি কোডেড সিগন্যাল দিয়ে দাসুন শানাকার কাছে গোপন বার্তা পাঠানো। কী ছিল সেই গোপন বার্তা সেটির অবশ্য রহস্যভেদ করা যায় নি। কিন্তু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে এমন একটি দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে, মাঠে অধিনায়ক থাকা স্বত্বেও এভাবে কোডেড সিগন্যাল দিয়ে গোপন সংকেত পাঠানো কতটা বিধিসম্মত?
শ্রীলঙ্কার জয়ের পরে কোডেড সিগন্যালের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন কোচ ক্রিস সিলভারউড। মাঠে গোপন সংকেত পাঠানোয় তিনি কোনো সমস্যা দেখেন না। তিনি মনে করেন, ‘এটা কোনো রকেট সায়েন্স না। দলের বিশেষ মুহূর্তে একটা পরামর্শ মাত্র। এ ধরনের কাজ সব দলই বিভিন্ন উপায়ে করে থাকে। শ্রীলঙ্কাও সেটি করেছে, একটু ভিন্ন কৌশলে।’
সিলভারউড অবশ্য ভুল কিছু বলেননি। বর্তমানে ড্রেসিংরুম থেকে বার্তা পাঠানো নিয়মিত এবং একই সাথে সহজাত ঘটনা বললেই চলে। ড্রিংকস ব্রেকের মাঝে অতিরিক্ত ক্রিকেটারের মাধ্যমে মাঠে বার্তা দিয়ে আসা স্বাভাবিক ঘটনা কিংবা বাউন্ডারি লাইন ফিল্ডিং করা ক্রিকেটারকে দ্বাদশ খেলোয়াড় দিয়ে মাঠে বার্তা পাঠানোর দৃশ্য সচরাচরই দেখা যায়। ভিন্ন কৌশলেরও উদাহরণ রয়েছে। স্টিভ স্মিথ যখন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন তখন তিনি রিভিউ নিতেন ড্রেসিংরুমে বসে থাকা কোচ ড্যারেন লেহম্যানের চোখের ইশারার মাধ্যমে।
শ্রীলঙ্কার কোচ সিলভারউড এর আগেও কোডেড সিগন্যাল ব্যবহার করেছেন। ইংল্যান্ডের কোচ থাকাকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক সিরিজে তিনি ‘২সি’ ও ‘৪এফ’ নামে দুটি কোড ব্যবহার করেছিলেন। তখনকার অধিনায়ক মরগানও এটার মাঝে নীতিবিরুদ্ধ কিছু দেখেননি। এ নিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা মোটেই অপ্রত্যাশিত কিছু না। ক্রিকেটীয় স্পিরিটও এখানে নষ্ট হয়নি। মাঠের মধ্যে যত বেশি সম্ভব তথ্য আদান প্রদান করতেই এটা করা হয়।’
অবশ্য সিলভারউডের এমন কাজের জন্য সে সময় সমালোচনা করেছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন। তবে এসব ছাপিয়ে আরেকটি প্রশ্নেরও উদয় হয়েছে। এসব কোডেড সিগন্যাল কতটুকু প্রভাব রাখে মাঠে?
কারণ, শ্রীলঙ্কার কাছে সে ম্যাচে এই সাংকেতিক বার্তা তেমন কোনো কাজেই আসেনি। উল্টো, বাংলাদেশি ব্যাটাররাই তাদের বোলারদের উপর বেশি চড়াও হয়েছিল। তবে দিনশেষে ম্যাচটা জিতেছিল ঐ লঙ্কানরাই। অনলাইন দুনিয়ায় বিমর্ষ মুখে থাকা কোচের ছবি ছড়িয়ে গেলেও সিলভারউড সেদিন ড্রেসিংরুম ছেড়েছেন হাসিমুখেই।
আফগানিস্তানের কাছে দু’দলই ধরাশয়ী হওয়ায় দুবাইয়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা রূপ নিয়েছিল অলিখিত প্লে-অফে। তার উপর কথার লড়াইয়ে সে ম্যাচের উত্তাপ ছিল আরো বেশি। বাংলাদশে দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের করা শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইনআপ নিয়ে করা মন্তব্য যে তাদের তাঁতিয়ে দিয়েছিল তা ম্যাচের পরে লঙ্কানদের উদযাপন দেখলেই বুঝা যায়। একই সাথে, ম্যাচের পর মাহেশ ঠিকশানার করা টুইটেও স্পষ্ট যে জয় পেতে তারা কতটা মুখিয়ে ছিল। টুইটে তিনি লিখেন ‘বিশ্বমানের বোলার দরকার নেই, দলে ১১ টা ভাই থাকলেই যথেষ্ট’।
১৮৩ রান স্কোরবোর্ডে জমা করার পর দুবাইয়ের মাটিতে এর আগে কোনো দলের ম্যাচ হারার রেকর্ড নেই। এই মাঠে হওয়া এর আগের ৭৮ টা ম্যাচ মিলিয়ে এমন পরিসংখ্যান সাথে নিয়েও জয়ীদের জায়গায় নিজেদের নাম বসাতে পারেনি বাংলাদেশ। দুবাইয়ের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে ম্যাচটি জিতে নেয় লঙ্কানরা। সম্ভবত অন্যের গড়া রেকর্ডগুলো বাংলাদেশের বিপক্ষেই হয় বেশি।