রজত পাতিদার: ফরম্যাট ইজ টেম্পোরারি, ফর্ম ইজ পার্মানেন্ট

২০২২ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। এলিমিনেটর ম্যাচে লখ-নৌ সুপার জায়েন্টসের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল তারকা খচিত রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শূন্য রানেই আউট হয়ে যান দলটির অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। এরপর বিরাট কোহলি আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ফিরে যান অল্পতেই।

তিন বড় তারকাকে হারানোর পরেও লখ-নৌর বোলিং আক্রমণকে তুলো-ধুনো করেছিল ব্যাঙ্গালুরু। আর এর পেছনে মূল অবদান ছিল রজত পাতিদারের। লখ-নৌর বোলিং দাপটের সামনে ব্যাঙ্গালুরুর শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়লেও অতিমানবীয় এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ১১২ রানের ইনিংসটি সেদিন তাকে দেশজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছিল।

আইপিএল শেষ হলেও অবশ্য শেষ হয়নি রজত পাতিদারের ব্যাটের ধার। সর্বশেষ কয়েক ম্যাচে রীতিমতো রান মেশিনে পরিণত হয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। এই যেমন ভারত এ বনাম নিউজিল্যান্ড এ দলের সিরিজে প্রথম চার দিনের টেস্টে ১৭৬ রানের বিশাল এক ইনিংস খেলেছেন তিনি।

উইকেটের চারদিকে শট খেলার দক্ষতা এদিন আরো একবার দেখিয়েছেন রজত পাতিদার। বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে তাঁর সাবলীল ব্যাটিং ছিল দেখার মত। সাদা পোশাকের খেলা হলেও পেসারদের বিপক্ষে পাতিদারের ৭৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করাই সেটার প্রমাণ দেয়।

এছাড়া আইপিএলে স্বপ্নীল এক মৌসুম কাটানোর পর রঞ্জি ট্রফিতেও রজত পাতিদার ছিলেন সেরা ছন্দে। কোয়ার্টার ফাইনালে পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৮৫, সেমিফাইনালে ৭৯ এবং ফাইনালে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ১২২ রান করে মধ্য প্রদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

এই বছর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি একটু জটিল ছিল বটে। মার্চ, এপ্রিলে রঞ্জি ট্রফির প্রথম লেগ খেলার পর আইপিএল খেলতে হয়েছে, এরপর জুন মাসে পুনরায় রঞ্জি ট্রফির বাকি অংশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফরম্যাটের এই পরিবর্তন খেলোয়াড়দের জন্য সহজ কিছু নয়, তাদের মানিয়ে নিতে সময় লাগে।

তবে রজত পাতিদারের হয়তো তেমন কোন সমস্যা নেই। ইলেকট্রিক সুইচের অন এবং অফের মতই তিনি ফরম্যাট ভেদে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন আনতে পারেন। পরিসংখ্যানেই সেটা স্পষ্ট; প্রথম দফায় রঞ্জি ট্রফিতে ৮৩.৭৫ ব্যাটিং গড়ে ৩৩৫ রান করেছিলেন এই ব্যাটার। এরপর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত আইপিএলে ৫৫.৫০ গড়ে করেছেন ৩৩৩ রান। আবার রঞ্জি ট্রফির দ্বিতীয় ধাপে পাঁচ ইনিংসে ৩২৩ রান এসেছে পাতিদারের ব্যাট থেকে।

এই ব্যাপারটি রজত পাতিদার ব্যাটারদের মানসিকতার উপর নির্ভর বলেই মনে করেন। তিনি জানান, ‘ভাল করতে চাইলে লাল এবং সাদা বলে দ্রুতই মানিয়ে নিতে হয়। লাল বলে ভাল করতে চাইলে আমাকে সেভাবে খেলতে হবে। যেমন টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটের স্পিড খুব বেশি থাকে, টেস্টে তেমনটা নয়। এই পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারাটা আসলে মানসিক ব্যাপার।’

অবশ্য রজত পাতিদার নিজের উপর বিশ্বাস রাখছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমার দ্রুত মানিয়ে নেয়ার সমার্থ্য রয়েছে। সাদা বলে আমি যেভাবে কভার ড্রাইভ খেলি, লাল বলে তেমনটা দেখা যায় না। এই ফরম্যাটে মূলত যতটা সম্ভব সোজা ব্যাটে খেলার চেষ্টা করি। আবার এখানে অনেক বল লিভ করতে হয়।’

নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে নিজেদের খেলা দেখেছেন ভারত জাতীয় দলের নির্বাচক চেতন শর্মা। কিন্তু এখনই জাতীয় দল নিয়ে ভাবতে নারাজ রজত পাতিদার। আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর তাঁর। সেই সাথে টপ অর্ডারে নিয়মিত ব্যাট করার ইচ্ছে আছে এই ডান-হাতির। কিন্তু জাতীয় দলে ডাকার পাওয়ার ব্যাপারটি নিজের হাতে নেই বলে এটি মাথায় আনছেন না তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link