অভিষেক ম্যাচ। তারপরেই তো একজন ক্রিকেটারের পথচলা শুরু। সে পথচলার মাঝে কেউ থিতিয়ে যায়, কেউ কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলে। আবার কেউবা খরগোশের গতিতে চলা শুরু করেও হারিয়ে যায়।
মুশফিকুর রহিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন এই দিন দুয়েক হলো। এর অর্থ হলো, ১ সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা ম্যাচটিই হয়ে রইল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এ সময়কালে তিনি পার করলেন ১৫ বছর ২৭৭ দিন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এত দীর্ঘ সময়ের ক্যারিয়ার আর কারো নেই। আর দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন এমন ৭ জনকে নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন।
- মুশফিকুর রহিম
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে ম্যাচে তিনি ৫ বলে ২ রান করেছিলেন। সে ম্যাচের পরে তিনি বাংলাদেশের হয়ে আরো ১০১ টি ম্যাচ খেলেছেন। ক্যারিয়ারে ১০২ ম্যাচে রান করেছেন ১৫০০। ৬ অর্ধশতকের ক্যারিয়ারে মুশফিক তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন নিদাহাস ট্রফিতে। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ টপকেছিল মুশফিকের ৩৫ বলে ঝড়ো অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসের কল্যানেই।
- সাকিব আল হাসান
মুশফিকের মতো সাকিবেরও অভিষেক হয়েছিল একই দিনে। সে অর্থে তাঁর ক্যারিয়ারও ১৫ বছর ২৭৭ দিনের। অভিষেক ম্যাচে সাকিব ব্যাট হাতে করেছিলেন ২৬ রান আর বোলিংয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ক্যারিয়ারে এখন ১০১ ম্যাচে ২০৪৫ রানের পাশাপাশি ১২২ টি উইকেট তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে তাঁর খেলা ৮৮ রানের সে ইনিংসেও বাংলাদেশ জয়বঞ্চিত ছিল।
- দীনেশ কার্তিক
ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। তবে ১৫ বছর ২৭৩ দিনের ক্যারিয়ারে দিনেশ কার্তিক এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৪৯ টি। ১ অর্ধশতকে ২৮.১৯ গড়ে তিনি রান করেছেন ৫৯২।
- ডোয়াইন ব্রাভো
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পদার্পণ ডোয়াইন ব্রাভো। ব্যাট এবং বল হাতে প্রথম ম্যাচেই ছিলেন উজ্জ্বল। ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ১৯ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। আর ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই পেয়েছিলেন ‘টাই’ এর দেখা। তখন আবার সুপার ওভারের প্রচলন ছিল না। ১৫ বছর ২৬৩ দিনের ক্যারিয়ারে ব্রাভো ম্যাচ খেলেছেন ৯১ টা। লম্বা এ ক্যারিয়ারে রান করেছেন ১২৫৫ আর বল হাতে নিয়েছেন ৭৮ টি উইকেট।
- ক্রিস গেইল
ডোয়াইন ব্রাভোর মতো ক্রিস গেইলের ক্যারিয়ারও ১৫ বছর ২৬৩ দিনের। একই দিনে দু’জন অভিষেক ম্যাচ খেলেছেন আবার একই দিনে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলেছেন। তবে ক্রিস গেইল ডোয়াইন ব্রাভোর চেয়ে ম্যাচ খেলেছেন কম। ৭৯ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি আর ১৪ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ১৮৯৯। বল হাতেও নিয়েছেন ২০ টি উইকেট।
- শন উইলিয়ামস
জিম্বাবুয়ের এ ক্রিকেটারের ১৫ বছর ২৪৭ দিনের লম্বা ক্যারিয়ার। কিন্তু খেলেছেন মাত্র ৫৮ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ২০০৬ সালে অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৮ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ক্যারিয়ারে ৯ অর্ধশতকে শন উইলিয়ামস রান করেছেন ১২৭৪। আর বল হাতে নিয়েছেন ৩৮ টি উইকেট। এই সংখ্যা অবশ্য বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। কারণ জিম্বাবুয়ের হয়ে এখনো ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তিনি।
- শোয়েব মালিক
সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা তাঁর। ১২৪ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা শোয়েব মালিকের ক্যারিয়ার সময়ের হিসেবে ১৫ বছর ৮৪ দিনের। ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচটা খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সে ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ১৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। পুরো ক্যারিয়ারে ৯ অর্ধশতকে তিনি করেছেন ২৪৩৫ রান। আর বল হাতে নিয়েছেন ২৮ টা উইকেট।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৫ বছর পার করেছেন এমন ক্রিকেটার আরো দু’জন রয়েছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ হাফিজ এই ফরম্যাটে খেলেছেন ১৫ বছর ৭৫ দিন। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন ঠিক ঠিক ১৫ বছর। যদিও তাঁর সামনে সুযোগ রয়েছে এই ক্যারিয়ার স্প্যানটাকে আরেকটু বাড়ানোর।