শোকের পাহাড়ে দাঁড়ানো যে উদযাপন

১৬ বছরের এক কিশোর। তাতেই সাদা জার্সি গায়ে চাপানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাত্রা। কোচ থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট সবাই তাঁর ব্যাপারে আশাবাদী। প্রথম টেস্টের একাদশে সুযোগ পাবেন সেটিও আগে ভাগে জেনে গেলেন। মায়ের বহুদিনের স্বপ্ন এত তাড়াতাড়ি পূরণ হতে যাচ্ছে! যেন ঘোরের মধ্যে আছে ছেলেটা। ছেলেটা নাসিম শাহ।

পাকিস্তানের হয়ে ছেলের খেলা দেখবেন, এ এক পরম স্বপ্ন নাসিমের মায়ের। ছেলে অস্ট্রেলিয়া গেলে সে স্বপ্ন ধীরে ধীরে সত্যি হতে যাচ্ছিল। কিন্তু কী এক নির্মম সময় আসলো। নাসিম শাহ অস্ট্রেলিয়ায় থাকা অবস্থায় হঠাৎ খবর পেলো তাঁর মা আর এ পৃথিবীতে নেই।

এ খবর শুনে নাসিম শাহ পুরোপুরিই ভেঙে পড়লো। মাকে হারানোয় ব্যথায় কাতর হয়ে পড়লো তাঁর কিশোর মন। মায়ের শেষ প্রস্থান দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো নাসিম৷ ফিরে আসতে চাইলো দেশে৷ কিন্তু শৈশবের কোচ সুলাইমানের কথায় শোককে শক্তিতে পরিণত করলো নাসিম।

কারণ, তাঁর মা তো নাসিমকে এ জায়গাতেই দেখতে চেয়েছিলো। টেলিভিশনে ছেলের খেলা দেখার শখ পূরণ না হোক, অন্তত মায়ের চাওয়াটা পূরণ হোক। নাসিম শাহ আর তাঁর মাকে বিদায় দিতে পারলেন না। থেকে গেলেন অস্ট্রেলিয়ায়। তাই দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া আসার পথে মায়ের হাস্যজ্জল মুখে বিদায় দেওয়াটাই হয়ে গেলো মা-ছেলের শেষ সাক্ষাৎ।

এরপরে পাকিস্তানের ২৩৭ নম্বর টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় নাসিমের। সে নাসিম এখন পাকিস্তানের নতুন সেনসেশনে পরিণত হয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে বিশ্ব দেখেছিল একজন ক্রিকেটার কতটা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে পারে। আর ফাইনালে ওঠার ম্যাচে প্রায় হারতে যাওয়া একটা ম্যাচকে ২ ছক্কা মেরে জিতিয়ে দেওয়া অন্য এক নাসিমকে এবার দেখলো ক্রিকেট ৷

কিন্তু পুত্র নাসিম শাহের মন যে এখনো কাঁদে মায়ের জন্য। নাসিমের খেলা স্ব-চোখে দেখার যে অনেক সাধ ছিল তাঁর মায়ের। বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি দেখে যেতে পারতেন, তাঁর গর্বিত পুত্র আজ পুরো পাকিস্তানের উল্লাসের কারণ। এপার না হোক, ওপার থেকে নিশ্চয় সেটা দেখেছেন নাসিমের মা।

 আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে নাসিমের উদযাপনটা নিশ্চয়ই দেখেছেন। ওই উদযাপন দেখে সবার শরীরের লোমই খাড়া হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, এর পেছনে যে শোকের পাহাড় – সেটা আর ক’জনই বা জানেন!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link