ভুবি ঝড়ে লণ্ডভণ্ড আফগান

হারানোর কিছু নেই। ম্যাচ জিতেও আখেরে লাভের লাভ কিছু হবে না। তবুও নিয়ম তো নিয়ম। তা তো রক্ষা করতেই হবে। তাই বাধ্য হয়েই নিয়ম রক্ষার্থে ভারত-আফগানিস্তান মুখোমুখি। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের নিজেদের শেষ ম্যাচে। এই ম্যাচের ফলাফলেও কারও কিছু যায় আসে না।

তবুও ক্রিকেট মাঠে লড়াই করতে নেমে পড়লে সেখান থেকে তো আর ফেরত আসা সম্ভব না। সকল পরিসংখ্যান ভুলে, সব সম্ভাবনার অংক একটা পাশে রেখে সবাই চায় ম্যাচ জিততে। এদিন ভারত আর আফগানিস্তানের লক্ষ্যতেও নিশ্চয়ই তেমন কোন তফাৎ ছিল না। দুই দলই চেয়েছিল জয় কেড়ে নিতে। তবে আফগানদের জয়ের পথটা যেন ছিল এক মরীচিকা!

সেই মরীচিকাময় পথটার সূচনা অবশ্য করে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। ৭১তম শতকের দেখা পেলেন বিরাট। দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের অপেক্ষা অবসান ঘটলো। শতক এলো, বহুদিন বাদে এলো। এ যেন দীর্ঘ এক আলোকবর্ষের অপেক্ষা! আফগান বোলারদের রীতিমত তুলোধুনো করলেন বিরাট। নিজের দিনে ঠিক এমনই বিধ্বংসী বিরাট! কতদিন বাদে এমন বিধ্বংসী, আগ্রাসী বিরাটের দেখা মিলল!

৬১ বল খেলে প্রায় ২০০ স্ট্রাইকরেটে ১২২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিলেন বিরাট। আর তাঁর সে ইনিংসের উপর ভর করেই আফগানদের টার্গেট গিয়ে দাঁড়ায় ২১৩। আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের কাছে এটা বেশ বিরাট এক টার্গেটই বটে। তবে আফগান ব্যাটাররা হয়ত আশা করেছিলেন টপকে যাবেন এই রানের পাহাড়। এবারের এশিয়া কাপে পরে ব্যাট করা দলের পক্ষেই তো জয়ের সব পরিসংখ্যান।

না, মোহাম্মদ নবির দলের সে স্বপ্ন পূরণ করতে দিলেন না ভুবনেশ্বর কুমার। তিনি যেন বললেন পুরো দিনটা রাঙিয়ে দেবেন ভারতের নামে। বিরাটের পর তিনিও যেন রেকর্ড ভেঙে ফেলার প্রেরণায় উজ্জীবিত। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাঁচ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট পাওয়ার রেকর্ডের মালিক নাইজেরিয়ান ক্রিকেটার পিটার আহো। সেই রেকর্ডেই যেন ভাগ বসাতে চাইছিলেন ভুবনেশ্বর।

আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপটাকে একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দিলেন ভুবি একা হাতে। টপ অর্ডারের সব কয়টি উইকেট তিনি পুরেছেন নিজের পকেটে। শুরুটা করেন হজরতউল্লাহ জাজাইকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত। বোল্ড আউট হয়ে ততক্ষণে প্যাভিলনে রহমতউল্লাহ গুরবাজ। মারকুটে এই ব্যাটারের উইকেটও শিকার করেন ডানহাতি পেসার ভুবনেশ্বর কুমার। সে ওভারে তাঁর খরচ কেবলমাত্র এক রান।

দুরন্ত ভুবি আবার এলেন বলহাতে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে। সে ওভারে আবারও জোড়া আঘাত। ব্যাস, ঠিক তখনই হয়ত ভুবনেশ্বর নতুন এক রেকর্ডের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ওভার তখনও দুইটি বাকি। ততক্ষণে তাঁর খরচ তিন রান। উইকেটের পেছনে ছুটতে হবে তাঁর।

তবে এরপরের ওভারটায় তিনি ছিলেন উইকেট শূন্য। কিন্তু আফগান ব্যাটারদের একবিন্দু পরিমাণ সুযোগ দেননি ভুবনেশ্বর। তাঁর এমন অভাবনীয় বোলিং পারফরমেন্স ভারতের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে বাধ্য করে তাঁর কোটা পূরণ করে ফেলবার। মাঝে আর্শদ্বীপ তুলে নেন মোহাম্মদ নবির উইকেট। ইনিংসের সপ্তম ওভারের মধ্যেই নিজের কোটা পূরণ করতে হাজির ভুবনেশ্বর কুমার।

শূন্যরানের বিনিময়ে আবার আরও একটি উইকেট ভুবনেশ্বরের দখলে। নিজের কোটা শেষে ভুবনেশ্বরের বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৪-১-৪-৫। অল্পের জন্য বিশ্বরেকর্ডের মালিক হতে পারলেন না ভুবনেশ্বর কুমার। কোন কিছু না পাওয়ার এই মিছিলে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ভুবনেশ্বর তুলে নিলেন নিজের ক্যারিয়ারের সপ্তম ফাইফার। মাঝে আফগান ব্যাটার ইব্রাহীম জাদরান আর রশিদ খান প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কালক্ষেপন হয়েছে। পরাজয়ের স্বাদটা খানিক সময় নিয়ে গ্রহণ করতে হয়েছে আফগানদের। এবারের এশিয়া কাপের সুপার ফোর রাউন্ড থেকে একেবারে খালি হাতে ফিরত হল তাঁদের। ভারতের অর্জনের খাতায় অন্তত বিরাটের ফর্মে ফেরাটা লেখা রয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link