রানি এলিজাবেথ ও ফুটবল

১৯৫২ সালে সিংহাসনের ব্যাটনটা নিজের হাতে তুলে নেবার পর কেটে গেছে সাত দশকেরও বেশি সময়। এর মাঝে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে পেলে আর ম্যারাডোনা নামের দুই জাদুকরকে, জার্মানদের হারিয়ে বিশ্বসেরার খেতাবটা একবার জিতেছে ইংল্যান্ড। ৯৬ বছরে রানি দেহত্যাগ করার পর তাই মনের দৃশ্যপটে ভেসে উঠছে নানা ছবি। আসুন দেখে নেয়া যাক ফুটবলের প্রতি রানির ভালোবাসার কয়েকটি ঘটনা।

  • ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল

ক্ষমতায় আসার ১৩ বছর পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সৌভাগ্য হয় জুলেরিমে ট্রফি স্বাগতিক ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের হাতে তুলে দেয়ার। ২০২০ ইউরোর আগে সেই সময়কে স্মৃতিচারণ করে রানি বলেন, ‘পঞ্চান্ন বছর আগের সেই সময়টাকে আমি ভুলবো না। ববি মুরের হাতে ট্রফি তুলে দেয়ার সময় দেখেছিলার সেই দলের ফুটবলার আর স্টাফদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা।’

যদিও ইংল্যান্ড সেবার জিততে পারেনি। ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে সেবার হাতছোয়া দূরত্বে থেকেও কপাল পুড়ে থ্রি লায়ন্সদের। যদিও রানি আশাহত হননি, ঠিকই সান্ত্বনাবাণী পাঠিয়েছিলেন হ্যারি কেইনদের উদ্দেশ্যে, ‘ইউরোর ফাইনালে পৌঁছানোর জন্য দলের সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। আগামীর জন্য সবার প্রতি আমার শুভকামনা রইলো। খেলাটা কেবল ট্রফি জয়ের জন্য নয়, বরং প্রকাশ করে আপনাদের একাগ্রতা, পরিশ্রম আর খেলার প্রতি ভালোবাসা।’

  • রানি কি ওয়েস্ট হ্যামের সমর্থক ছিলেন?

বাকি রাজা-রানিদের মতো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও কখনো তার পছন্দের দল জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। সে যাইহোক তাই বলে রানির পছন্দের দল নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবকাশ ছিল না গণমাধ্যমে। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ গণমাধ্যম রানির এক পরিচারকের বরাতে জানায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ওয়েস্ট হ্যামের সমর্থক। যদিও এর আগে জানা গিয়েছিল, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর্সেনালের ভক্ত।

  • ফুটবলারদের প্রতি সম্মান

ফুটবলারদের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গভীর সম্মানের সহিত দেখতেন। বিভিন্ন সময়ে ফুটবলারদের নিউইয়ার্স অনার এবং কুইন্স বার্থডে অনার্সে ভূষিত করা ছিল তারই বহিঃপ্রকাশ।
স্যার স্টানলি ম্যাথুজ ছিলেন নাইটহুড পাওয়া প্রথম ফুটবলার। পরবর্তীতে অ্যালফ রামসে, অ্যালেক্স ফার্গুসন, ববি রবসনরাও একই সম্মানে ভূষিত হন।
সাম্প্রতিক সময়ে রয় হজসন, ডেভিড বেকহ্যাম, গ্যারেথ বেলরা পান সম্মানসূচক অর্ডার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার পদক।

  • আর্সেনালের খেলোয়াড়দের সাথে সাক্ষাৎ

২০০৭ সালে নিজেদের পুরনো স্টেডিয়াম হাইবুরি ছেড়ে এমিরেটস স্টেডিয়ামে খেলা শুরু করে আর্সেনাল। এই খুশিতে উদযাপনের জন্য পুরো গানার্স দলকে বাকিংহাম প্যালেসে আমন্ত্রণ জানান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি নিজে পুরো দলকে পুরো প্যালেস ঘুরিয়ে দেখান এবং একত্রে সান্ধ্যকালীন নাস্তা করেন। সেই দলের সেরা তারকা থিয়েরি অরির ভাষায়, ‘এটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। রানির আতিথেয়তা প্রকাশ করার অনুভূতি অবর্ণনীয়।’

  • এফএ কাপের পুরস্কার বিতরণ

এফএ কাপের ফাইনালে রানির উপস্থিতি একরকম নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো নিজের সময়কালের প্রায় প্রতিটি এফএ কাপের ফাইনালে বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন তিনি। কেবল বিজয়ী দল নয়, ফাইনালে পরাজিত দলের প্রতিও ছিলেন সহমর্মী। দেখা যেত তিনি হয়ত পরাজিত ফুটবলারদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। অনেক ফুটবলারই পরবর্তীতে এটিকে নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

  • নারী ফুটবলের জন্য ভালোবাসা

প্রায় ৬০ বছর পর ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের প্রমীলা ফুটবল দল ইউরো জিতলে দারুণ উচ্ছ্বসিত হন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কোচিং স্টাফসহ দলের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে রানি বলেন, ‘তোমাদের আজকের সাফল্য কেবল ট্রফি দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। তোমাদের এই সাফল্য বর্তমান এবং আগামীর মেয়েদের জন্য অনুসরণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি বিশ্ববাসীর জন্য। শুধু ব্রিটিশ জনগণ নয়, পুরো বিশ্ববাসীর নিকট তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার নিষ্ঠা আর প্রজ্ঞার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link