এশিয়া কাপের ১৫ তম আসর, মানে ২০২২ সালের এশিয়া কাপ । মহাদেশীয় ক্রিকেটের লড়াইয়ের মুকুটটি গেল শ্রীলঙ্কার মস্তকে। একই সাথে ৮ বছর পর আবারো কোনো শিরোপার মুখ দেখলো এশিয়ার এ দ্বীপরাষ্ট্রটি।
সেবারের এশিয়া কাপ ছিল কারো জন্য উত্থানের, কারো জন্য আবার পতনের। দলগত হিসেবে গতবারের ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ এবার গ্রুপ পর্বও পেরোতে পারেনি। একই ভাবে আগের বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের এশিয়া কাপ যাত্রা শেষ হয়েছে সুপার ফোরের ৪ দলের মধ্যে তৃতীয় হয়ে।
এ তো গেল পতনের গল্প। উত্থানের বড় মঞ্চটা তো তৈরি করে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া, আফগানিস্তান নামের অদম্য মানসিকতায় অটুট আরেকটা দল দেখেছে ক্রিকেট। আবার কারো সেঞ্চুরি খরার হতাশা কেটেছে এই এশিয়া কাপ দিয়েই।
টেস্ট অভিষেকের আগে মা হারানো এক তরুণের গল্পেও আপ্লুত হয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। সব কিছুই হয়েছে এই এক এশিয়া কাপের মঞ্চে। সেসব গল্প নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন।
- সংকটই যাদের বিজয়ের অনুপ্রেরণা
কাগজে কলমে এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় অংশগ্রহণকারী অন্য দেশগুলোকে যে তারা আতিথিয়তা দিতে অসমর্থ।
তাই বাধ্য হয়েই পরভূমে খেলতে আসা। খেলতে এসেই আফগানিস্তানে নাস্তানাবুদ লঙ্কান দলটা। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের খাতা থেকে শ্রীলঙ্কা ততক্ষণে বাদ। কিন্তু শুরু তো করতে হয় শূণ্য থেকেই।
শ্রীলঙ্কা ফিরল অন্যরূপে। আর একটি ম্যাচেও পরাজয় নয়। সবার শূণ্য প্রেডিকশনকে শত সংখ্যায় পরিণত করতে উঠে পড়ে লাগলো তারা।
যে সংকটে তাদের বর্তমান অভ্যস্ততা, সেই সংকটই হয়ে দাঁড়াল অভূতপূর্ব এক শক্তি। আর সেই শক্তির সামনেই কুপোকাত হলো সবাই। টানা ৫ ম্যাচ জিতে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিল শ্রীলঙ্কা।
- রাইজ অব নাসিম শাহ
ছেলেটার টেস্ট অভিষেকের দিন দশেক আগে তাঁর মা মারা যায় । ছেলেকে পাকিস্তানের হয়ে খেলতে দেখা তাঁর মায়ের ভীষণ শখ। কিন্তু নাসিম শাহের মায়ের সে ইচ্ছা আর পূরণ হয় নি। এ গল্পটা পুরনো। কিন্তু নতুন মোড়কে মা হারা এই ছেলের গল্প ক্রিকেট বিশ্ব শুনলো এই এশিয়া কাপের আদলেই।
শাহিনশাহ আফ্রিদি’র ইনজুরির কারণে দলে দরকার ছিল তাঁর মতোই একজন পেসার। পাকিস্তান অবশেষে খুঁজে পেল নাসিম শাহকে। সেই নাসিম শাহই ভারতের বিপক্ষে দেখালেন ঝলক। দারুণ বোলিং করলেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আসলো দলের প্রতি তাঁর অসীম নিবেদন।
তাকে দলের প্রয়োজন৷ কিন্তু রান আপ নিতে গেলেই অস্বস্তিবোধ করছেন। কিন্তু তারপরও ফুল রানআপে বোলিং করে গেলেন শেষ ওভারটা। হার জুটেছিল যদিও, কিন্তু হেরে গিয়েও সেদিনের জন্য নাসিম শাহ নামটা হয়ে গেল এক যোদ্ধার সমার্থক রূপ।
শুরুর দিকে এসেই প্রতিপক্ষ ব্যাটারের স্ট্যাম্প উপড়ানো ছিল এবারের এশিয়া কাপে নাসিম শাহর নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে অন্য এক নাসিম শাহকে দেখল ক্রিকেট। হাতে ১ টি উইকেট, কিন্তু দরকার ৬ বলে ১১ রান।
নাসিম শাহ সেই সমীকরণে প্রথম ২ বলেই মারলেন ২ ছক্কা। পাকিস্তান এক উইকেটের জয় পেলো। নাসিম শাহর তরীতে চেপে পাকিস্তান চলে গেল ফাইনালে। আর সেখানেই গল্প লেখা হয়ে গেল, ‘আ রাইজ অফ নাসিম’।
- সেঞ্চুরি, তুমি কতকাল পর এলে!
সময়ের সেরা ব্যাটার তিনি। তাঁর সাথে খেলা কোনো ব্যাটারেরই ৭০ সেঞ্চুরি নেই। ৭০ তো দূরে থাক, ৫০ও নেই।
কিন্তু, সেই কোহলি প্রায় ৩ বছর আগে করা ৭০ নম্বর সেঞ্চুরিতেই আটকে রইলেন। চারপাশ থেকে আশা শুরু করলো ফুরিয়ে যাওয়ার তীক্ষ্ণ বাণী, নিজ দেশের গ্রেটরাও ছাড় দিলেন না।
অবশেষে সেই অপেক্ষার প্রহর থামলো এশিয়া কাপে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকালেন কোহলি। ১০২০ দিন আর ৮৪ ম্যাচ পর সেঞ্চুরি।
কিন্তু, সেই সেঞ্চুরির পর কোহলির খ্যাপাটে উদযাপনের অনুপস্থিতি। যেন একটা দীর্ঘশ্বাস মুক্তির নিরব আবেগ। যেন নিরবে বললেন, সেঞ্চুরি, তুমি কতকাল পর এলে।
- দ্য আফগান স্পিরিট
সাদা বলের ক্রিকেটে আফগানিস্তান এই মুহূর্তে রীতিমত এক ত্রাসের নাম। সুপার ফোরে শুধু মাত্র ভারত ম্যাচটা বাদ দিলে এবারের এশিয়া কাপে আফগানিস্তান দলটা ছিল এক কথায় অনবদ্য।
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপের যাত্রা শুরু। এরপর বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে সুপার ফোরে যায় আফগানিস্তান। পরিসংখ্যান বলবে সুপার ফোরে আফগানরা ছিল জয়শূণ্য।
কিন্তু, পাকিস্তানের বিপক্ষে অল্প পুঁজি নিয়েও আফগানিস্তান যে লড়াইটা দেখিয়েছিল সে চিত্রে ফুটে উঠেছিল আফগানদের টিম স্পিরিট, দৃঢ়চেতা মানসিকতা। প্রতিপক্ষকে তারা সম্মান করে, কিন্তু ভয় বা সমীহ করেনা, এটাই যেন তাদের মূল মন্ত্র। আর ক্রিকেটে একটা দলের এমন স্পিরিটই তো থাকা দরকার।
- হ য ব র ল বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টি খেলার মতো দলে নেই কোনো ওপেনার। মেক শিফট ওপেনারই তাই ভরসা। মিডল অর্ডারে দ্রুত গতিতে রান তুলতে পারার মতো নেই তেমন ব্যাটার। তারপরও নতুন অধিনায়ক সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলটা এবারের এশিয়া কাপ মিশনে নেমেছিল ভাল কিছুর আশা নিয়েই।
কিন্তু, সে আশায় গুড়েবালি। মাঠের পারফর্মেন্সে পুরাই যেন হযবরল অবস্থা। একদিন ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টে সমস্যা তো অন্যদিন বোলিং ডিপার্টমেন্টে।
এত সব সমস্যার জালে বন্দী হয়ে তাই বলি দিতে হয়েছে এশিয়া কাপ। টানা দুই ম্যাচ হেরে আগের বারের রানার্সআপ এবারে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ। শত সমস্যার জালে বন্দী হয়ে গেছে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল অবশ্য সেই অবস্থান কাটিয়ে উঠেছে। এবার ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপ তাই তাঁদের জন্য আরও একটা চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।