ক্ষুধার জ্বালায় গতির ঝড়

নিজের ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন ছিল। তবে বাবা মারা যাওয়ায় আর ক্রিকেটটা খেলা হয়ে ওঠেনি তাঁর। তবে ইসহাকের বোলিং দেখে মিজানুর রহমান জুয়েলের স্বপ্নটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল।

নিজে ক্রিকেট না খেলতে পারলেও সেই স্বপ্নটা পূরণ করতে চাইছেন ইসহাকের মাধ্যমে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে খুব ছোটখাটো চাকরি করেন এই ভদ্রলোক। নিজের পরিবার নিয়ে ঢাকায় জীবন যাপন করাটাই কঠিন। তবুও স্রেফ একটা ক্রিকেটার তৈরির নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছে।

মিজানুর রহমান জুয়েল সম্পর্কে ইসহাক হোসেনের ফুফা হন। চাঁদপুরে টেনিস বলে খুব জোরে বল করতে পারতেন। সেজন্যই ক্রিকেট খেলতে চলে এসেছিলেন ঢাকায়। প্রায় সাত বছর ধরে ফুফার অভাবের সংসারে থেকে ক্রিকেটটা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনদিন খাবার না পেলেও, জোরে বল করার নেশাটা কমেনি ইসহাকের। একটু ক্রিকেট খেলার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত তিনি।

একটা সময় ফুড ডেলিভারির কাজও করেছেন শুধু ক্রিকেটটা চালিয়ে যাবেন বলে। এখন অবশ্য ক্রিকেট পাড়ায় ইসহাকের পরিচিতি বাড়তে শুরু করেছে। নিজের বোলিং দিয়ে একটা জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করছেন। ইসহাকে বোলিং এর সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা কাটার। বেশ ভালো গতিতেই কাটার মেরে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানানোর সক্ষমতা আছে এই পেসারের।  তাঁর এই  বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তাসকিনদের ফিটনেস ট্রেইনার দেবাশীষ ঘোষও। ফলে নিজের জিমে ইসহাককে জায়গা করে দিয়েছেন।

পেসার হতে হলে যে নিজের ফিটনেসটা ধরে রাখা ভীষণ জরুরী। আর খাবারটা ঠিক করে খাওয়া যে একজন পেসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই দেবাশীষ ঘোষ তাঁকে বেশ লম্বা একটা খাদ্য তালিকা ধরিয়ে দিয়েছেন। তবে এত প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার সাধ্য কই।

কোন মতে ডাল-ভাত খেয়েই তাই বোলিংটা করে যেতে হচ্ছে। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারের ওপর তিনি নিয়মিতই বোলিং করেন। যথাযথ পরিচর্যা আর পুষ্টি পেলে গতিটা দ্রুতই ১৪০-এর ওপর নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এর ওপর কাটার ডেলিভারিটা তাঁর বেশ মোক্ষম। ইসহাকের এই অবস্থা দেখে অবশ্য সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ তাসকিন আহমেদ।

একটা প্রোটিন শেক কিনে দিবেন বলেও কথা দিয়েছেন। তবে তাসকিন ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় অবশ্য সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তবুও ইসহাকরা এইটুকুর আশাতেই থাকেন। ক্রিকেটটা খেলে যান। তবুও একটা করুণ সুর বাজছিল এই পেসারের কণ্ঠে। বলছিলেন খুব দ্রুত একটা কিছু ব্যবস্থা না হলে হয়তো সব ছেড়েছুড়ে বাড়ি চলে যেতে হবে। ওদিকে মা অপেক্ষায় চেয়ে থাকে ছেলেকে কবে টিভিতে দেখা যাবে। বাড়িতে মায়ের অসহায় কান্না যে আর ভালো লাগে না ইসহাকের।

ঢাকায় আসার পর থেকেই ইসহাকের বোলিং নিয়ে কাজ করছেন কোচ মোহাম্মদ শামীম শেখ। প্রায় সাত বছর ধরে কাজ করে ইসহাককে গড়ে তুলেছেন। এই কোচও সাক্ষী দিচ্ছিলেন ক্রিকেটের প্রতি ইসহাকের কী ভীষণ একাগ্রতা। ইসহাকের আজ এতদূর আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর ফুফার। তিনিই ঢাকায় এনে একটা একাডেমিতে ভর্তি করিয়েছিলেন। ইসহাককে দেখতে চান সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

ইসহাকের স্বপ্নও আকাশ ছোবার, দেশের হয়ে সবচেয়ে জোরে বোলিং করার। কিন্তু, ক্ষুধা পেটে কি আর সব সময় গতির ঝড় তোলা যায়?

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link