যেভাবে কাটা পড়লেন মাহমুদউল্লাহ

যা রটে তার কিছুটা হলেও বটে – সত্যিই তাই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে গত কয়েকটা দিন কম জল ঘোলা হয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। বিশ্বকাপ দলে তিনি থাকবেন কি থাকবেন না – এই নিয়ে বোর্ডের নানা মহলে আলাপ-আলোচনা থেকে শুরু করে দেন দরবার পর্যন্ত হয়েছে।

তবে, নির্বাচক থেকে শুরু করে বোর্ডের কর্মকর্তা পর্যায়ে একটা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় যে, আর যাই হোক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে রাখা যাবে না। কারণ, কোচ কিংবা টিম ম্যানজমেন্টের সবাই মূলত ‘ফরোয়ার্ড লুকিং’ দল করতে আগ্রহী।

কিন্তু, মাহমুদউল্লাহ নামের যে ওজন – সেটাও তো মাথায় রাখতে হবে। যেমন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন তো প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে, রিয়াদের মত ক্রিকেটারকে ‘নো’ বলা সহজ না।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) আসলে সহজে কাজটা করতে পারেনি। আসলে রিয়াদকে আরেকটু সম্মানের সাথেই বিদায় বলতে চেয়েছিল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা।

বিসিবি চেয়েছিল রিয়াদকে আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে জায়গা দিতে। তবে, সেখানে শর্ত হল সিরিজটা খেলেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি টেনে ফেলবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যেটা আসলে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ফর্ম আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা বিবেচনায় দারুণ প্রস্তাব।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগ সবার হয় না। রিয়াদ পেয়েছিলেন সেই সুযোগ। কিন্তু, বিসিবির দেওয়া সেই সুযোগটা তিনি হাতছাড়া করলেন জেদের বশবর্তী হয়ে। তিনি অবসর নিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে, ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে আর জায়গা হয়নি রিয়াদের।

ফলে, এখন আর নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য আলাদা করে দল ঘোষণার প্রয়োজন নেই বিসিবির। তাঁদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বকাপের জন্য দেওয়া দলটিই খেলবে ত্রিদেশীয় সিরিজ।

রিয়াদের পরিকল্পনা পরিস্কার। তিনি এখনই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটকে বিদায় বলতে চান না। খেলতে চান আরো দু’টো বছর। বোর্ড কর্মকর্তারা তাঁর কথায় সায় দেননি। কিন্তু রিয়াদ নাছোড়বান্দা। বিশ্বকাপের পর অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। আপাতত সেখানেই নজর তাঁর।

আসলে রিয়াদ বা বিসিবি, প্রত্যেকেই যার যার ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে আছে। বিসিবি ভবিষ্যতের জন্য তাকিয়ে ইয়াসির আলী রাব্বির দিকে। বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামের কথায় পরিস্কার যে, রিয়াদের বিকল্প হিসেবে ওই জায়গায় রাব্বিকেই থিতু করার পরিকল্পনা টিম ম্যানেজমেন্টের।

অন্যদিকে, রিয়াদ পড়তে যাচ্ছেন এক অথৈ সাগরে। তাঁর ব্যাটিং রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে গিয়েছে, হ্যান্ড আই কম্বিনেশন নেই বললেই চলে। স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেন না ঠিক মত। এমনকি এমন ম্যাচ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে রিয়াদ ফিল্ডিংয়ে বড় কোনো ভুল করছেন না।

রিয়াদ এক সময় ফিনিশার ছিলেন, প্রয়োজনে ইনিংস বিল্ড আপও করতে পারতেন। সেটা এখন আর পারছেন না। ক্রিকেট একটা পারফর্মিং আর্ট। এর বাস্তবতাটাই এমন। এখানে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। যত দিন এগোবে, ততই সেরা সময়টা অতীত হতে থাকবে। একটা সময় ওই একই আর্টই করতে গেলে সেটা খুব কুৎসিৎ দেখাবে, যেটা এখন রিয়াদের ক্ষেত্রে হচ্ছে।

মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ারের শেষটা সুখকর হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে রিয়াদের বিদায়টাও হল না। দু’জনই নিজেদের সুন্দর সময়টা থাকতে বিদায় নেওয়ার ট্রেনের টিকেটটা পেলেও মিস করলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিদায় নেওয়া সংস্কৃতিটা এতটাই কুৎসিৎ।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link