অপেক্ষাটা তিন বছরের, অপেক্ষা জাতীয় দলে ফেরার। ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলসের সেই অপেক্ষা অবশেষে ফুরিয়েছে, তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাত ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছেন তিনি। প্রথমে নির্বাচকদের ভাবনায় না থাকলেও জনি বেয়ারস্টোর ইনজুরিতে কপাল খুলেছে এই ক্রিকেটারের।
অ্যালেক্স হেলসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পেছনে অনেক বিতর্কিত কান্ড রয়েছে। ব্রিস্টলের এক নাইট ক্লাবে বেন স্টোকসের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন; ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে ডোপ টেস্টে হয়েছেন পজিটিভ। এছাড়া বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছিল এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের উপর। সাবেক অধিনায়ক ইয়ন মরগান তো হেলসের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
আর তাই অ্যালেক্স হেলসের ফেরা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে বারবার শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন ক্রিকেটারকে কেন ৩৩ বছর বয়সে আরো একবার সুযোগ দিতে চায় নির্বাচকরা, বিশেষ করে উইল জ্যাকস এবং জর্ডান কক্সের মত তরুণদের উপর ভরসা না করে কেন অ্যালেক্স হেলসকে দলে রেখেছেন তারা।
এমন প্রশ্নের উত্তর একমাত্র হেলস নিজে ব্যাট হাতে দিতে পারবেন; তাই স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার যথার্থতা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত; কিন্তু অতীতের পরিসংখ্যান তো হেলসের পক্ষেই কথা বলছে। গত কয়েক বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ব্যাটারের চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স করেছেন হাতে গোনা কয়েকজন। ব্যাটিং গড় কিংবা স্ট্রাইক রেট, ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস – সবদিক দিয়েই সেরাদের মধ্যে অন্যতম ইংলিশ তারকা।
২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অ্যালেক্স হেলস টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৩৬৪৮ রান করেছেন, এই সময়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় মোহাম্মদ রিজওয়ানের পরেই আছেন তিনি। তবে ৩০০০ এর বেশি রান করা বাবর, রিজওয়ানদের চেয়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট অনেক বেশি। কমপক্ষে ৩০০০ রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট যেখানে ১৩০-১৪০; হেলস সেখানে ব্যাট করেছেন ১৫৮.২৬ স্ট্রাইক রেটে।
২০২০ সালের পর থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কমপক্ষে ১০০০ রান করেছে এমন ব্যাটসম্যানদের মাঝে অ্যালেক্স হেলসের চেয়ে বেশি গড় এবং স্ট্রাইক রেট আছে শুধুমাত্র একজনের – তিনি রাইলি রুশো। বিশ্বব্যাপি নিজের ব্যাটের ঝলকানি দেখিয়েছেন হেলস। ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তান সুপার লিগে ৪২.৫৫ গড় এবং ১৫১.৪৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। এছাড়া বিগ ব্যাশে ৩৫.৬১ গড়ের পাশাপাশি স্ট্রাইক রেট তাঁর স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৫৬।
২০২২ সালেও নিজের ফর্ম ধরে রেখেছেন অ্যালেক্স হেলস। টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ব্যাটিং গড় (২৬.৭১) একটু কমে এলেও স্ট্রাইক রেট (১৯৩.৭৮) ছিল অবিশ্বাস্য। তাছাড়া ঘরোয়া দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্টে রানের হিসেবে পঞ্চম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন তিনি এবং তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫২.৩৫।
মূলত নিজের দুর্বলতা নিয়ে কাজ করার ফলেই এমন উন্নতির দেখা মিলেছে অ্যালেক্স হেলসের মাঝে। একটা সময় বাঁ-হাতি স্পিনে বারবার পরাস্ত হওয়া হেলস এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে পারেন এসব বল। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বামহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে হেলসের ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৫.৮; অথচ ২০১৯ এর পর থেকে সেটি ৩০.০৭ হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা এই ওপেনারকে দারুণভাবে সাহায্য করেছে।
ব্যাট হাতে অ্যালেক্স হেলসের উড়ন্ত ফর্ম তো ছিলই, সেই সাথে জনি বেয়ারস্টোর অনুপস্থিতিতে হেলসের তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই। উইল জ্যাকস এখনও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেননি, সল্ট চার ম্যাচ খেললেও কখনো ওপেনিং করেননি।
ইংরেজদের হয়ে অ্যালেক্স হেলসের স্মরণীয় মুহূর্তের অভাব নেই। অনেকবারই তাঁর ব্যাটে ভর করে রান পাহাড় গড়ে তুলেছে ইংলিশরা। একটা সময় তিনি ছিলেন দলের ফার্স্ট চয়েজ ওপেনার। ইংল্যান্ডের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিও এসেছে হেলসের ব্যাট থেকে।
সব মিলিয়ে অ্যালেক্স হেলসের জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিক ফর্ম সব মিলিয়ে তাকে না ডাকলেই বরং অবাক হতে হতো। অ্যালেক্স হেলসের উপর আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট, বাকি কাজটা এখন এই তারকাকেই করতে হবে। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারফর্ম করতে পারলে সব ভুলে তাকে আবারও আপন করে নিবে ভক্ত-সমর্থকরা।