বিশ্বকাপের ‘গ্রিন’ সিগন্যাল

ব্যাগি গ্রিনে ক্যামেরন গ্রিন নামটা টেস্ট ক্রিকেটের অন্দরমহলে বেশ পরিচিতই বটে। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম পছন্দ না হলেও দলে তাঁর দেখা মেলে নিয়মিতই। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি এতদিন পর্যন্ত ছিলেন অচেনা, অজানাদের মধ্যেই একজন। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ তৈরি করার মতো তেমন কিছু করেও দেখাতে পারেন নি।

ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এর আগে গোটা দশেক ম্যাচ খেলেও ব্যাটে নেই কোনো হাফ সেঞ্চুরি, বোলিংয়েও নেই তেমন বলার মতো স্পেল। তবে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে মার্কাস স্টোয়িনিস, মিশেল মার্শদের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়ে যান গ্রিন। মাস চারেক আগে অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন। তবে ব্যাট হাতে ছিলেন একদম নিষ্প্রভ। ৭ বলে করেছিলেন ২ রান। যদিও বল হাতে ১৬ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

সেই এক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই আবারো কোনো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ডাক পেয়েছিলেন ক্যামেরুন গ্রিন। কিন্তু প্রথম ম্যাচে শুরুটা হলো খুবই বাজে। বোলিংয়ে এসে ৩ ওভারে দিলেন ৪৬ রান। ইকোনমির দিক দিয়ে দলের সবচেয়ে খরুচে বোলিংটা তিনি করলেন।

আর এতেই স্কোরবোর্ডে ভারতের পাহাড়সহ সংগ্রহ, ২০৮। এমনিতে বাজে বোলিং করেছেন, তার উপর বড় রান চেজ করতে গিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে ওপেনিং-এ ব্যাট করতে হবে তাঁকে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তবে শুরুর তিক্ততা ভুলে ঠিকই ঘুরে দাঁড়ালেন ক্যামেরন গ্রিন। মাঠের ভিতর উদ্ভূত  সকল চাপকে জয় করলেন।

২০৯ রানের চেজে অস্ট্রেলিয়ার শুরুতে যেমন ব্যাটিং করার প্রয়োজন ছিল ঠিক সেটিই করে দেখালেন তিনি। ৮ চার আর ৪ ছক্কায় খেললেন ৩০ বলে ৬১ রানের ইনিংস। এর মধ্যে চাহালের ৮ বলেই নিলেন ২১ রান। স্পিনটা যে তিনি ভালই খেলতে পারেন সেটিই যেন বুঝিয়ে দিলেন। মূলত গ্রিনের ঐ ঝড়ো ৬১ টি রানই অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের পথ দেখাতে শুরু করে। তাঁর খেলা ঐ ইনিংসের কারণেই এক সময় অস্ট্রেলিয়ার রিকুয়ার্ড রান রেট ১০ এর নিচে চলে আসে। যদিও মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতায় এক সময় ম্যাচ ঝুঁকে গিয়েছিল ভারতের দিকে। তবে ম্যাথু ওয়েড, টিম ডেভিডদের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত জয়টা আসে অস্ট্রেলিয়ারই।

৬১ রানের ইনিংস খেলা ক্যামেরুন গ্রিন যে স্লগ শটে বেশ পটু তা তাঁর খেলা শট জোনের চিত্র দেখলেই বুঝা যায়। ৬১ রানের মধ্যে ২৯ রানই পেয়েছেন স্লগে শট খেলে। এ ছাড়া কভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভেও পেয়েছেন বেশ কিছু রান।

৬১ রান, ১ উইকেট আর সাথে ২ টি ক্যাচ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন ডিপার্টমেন্টেই ম্যাচজুড়ে আলো ছড়িয়েছেন। তাই প্রথম ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও গিয়েছে ক্যামেরুন গ্রিনের হাতে। নিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ, সাথে ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরি।

তবে এতেই কি ক্ষান্ত থাকলেন তিনি? সিরিজ নির্ধারণের মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আবারো ঝলক দেখালেন গ্রিন। এ দিন ওপেনিংয়ে নেমেই অস্ট্রেলিয়াকে ঝড়ো সূচনা এনে দিলেন তিনি। মাত্র ১৯ বলেই পূরণ করলেন হাফসেঞ্চুরি। ৭ চার আর ৩ ছক্কায় ২১ বলে শেষ পর্যন্ত ৫২ রানের ইনিংস খেলে থেমেছেন তিনি । ভূবনেশ্বরের বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফেরার আগে স্কোরবোর্ডে অস্ট্রেলিয়াকে রেখে যান ৫ ওভারে ৬২ রানে। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যার হাফসেঞ্চুরিই ছিল সেই ক্যামেরন গ্রিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এসেই ৪ ম্যাচে তুলে নিলেন ২ টি হাফসেঞ্চুরি।

এক কথায় দারুণ শুরু, সম্ভাবনার শুরু। আপাতত এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। যদিও আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে গ্রিন নেই। তারপরও পাওয়ার প্লেতে নিয়মিত ঝড়ো গতিতে রান করায় গ্রিন নিশ্চিতভাবেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচকদের রাডারে থাকবেন।

ক্যামেরন গ্রিনের বয়সটা কেবল ২৩। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংস্কৃতিতে এ আর কী এমন বয়স। এতেই ব্যাগি গ্রিন মাথায় চেপে সাদা জার্সি গায়ে ব্যাটে বলে সমানতালে পারফর্ম করে যাচ্ছেন গ্রিন। রঙিন জার্সিতেও সেই ধারা প্রবাহ শুরু হয়েছে কেবল। সেটি চলতে থাকুক অবিরাম গতিতে, অব্যহত থাকুক অনেক দিন, মাস পেরিয়ে অনেকগুলো বছর পর্যন্ত। আর ভাল খবর হল, বিশ্বকাপের জায়গাটা সম্ভবত পাঁকা তিনি করেই ফেলছেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link