বিশ্বকাপের অভিজ্ঞ বুড়ো সৈনিক

বয়সের মধ্যগগন। তারপরও বাইশ গজের গোধূলি লগ্নে এক চিলতে রৌদ্র ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে তাদের উপস্থিতি। তারুণ্য ফেলে এসেছেন, কিন্তু তেজোদীপ্ত মানসিকতা তো রক্তে মিশে আছে। সে মানসিকতার মহিমায় তাঁরা হয়ে ওঠে অনন্য আর অনবদ্য।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আর এক মাসও বাকি নেই। মোটামুটি সব দলই আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা করে দিয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টা তারুণ্য নির্ভর খেলা। শচীন টেন্ডুলকার তো একবার বলেই দিয়েছিলেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইয়াং ব্লাডদের খেলা, এটা ৩০/৩৫ বছর বয়সীদের জন্য না। তবে এবারে প্রায় সব দলেই তারুণ্যের ভীড়ে এক ঝাঁক অভিজ্ঞ সৈনিকও আছে।

যারা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েননি, দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েননি। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা দলের অন্যতম ভরসাও বটে। মূলত তাদের নিয়েই খেলা- ৭১ এর আজকের আয়োজন। যাদের মধ্যে অনেকেরই এটাই হতে পারে শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

  • মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)

বয়স ৩৫। নিউজিল্যান্ডের স্কোয়াডে সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে এবারের বিশ্বকাপে খেলবেন মার্টিন গাপটিল। ক্যারিয়ারে ১২১ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান করেছেন ৩৪৯৭। যা আবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসেরই তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। তাঁর উপরে আছেন শুধু বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা।

তবে বিশ্বকাপের আগে শেষ ৯ ম্যাচে গাপটিলকে দেখা গিয়েছে বড্ড অচেনা রূপে। ১২২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন মাত্র ১৯৮ রান। কিন্তু ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট বলে তো একটা কথা আছে। সেই ক্লাসটা এবারের বিশ্বকাপে নিশ্চয় দেখিয়ে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি।

  • ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)

শেষবার ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট। এবারের বিশ্বকাপে ওয়ার্নার খেলবেন অস্ট্রেলিয়া দলের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে। ক্যারিয়ারে ৯১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৪০.৮৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৬৮৪ রান। সাম্প্রতিক ফর্মও কথা বলছে ওয়ার্নারের হয়ে। শেষ ১০ ম্যাচে করেছেন ৪ ফিফটি। তাই এবারও সবার চোখ থাকবে তাঁর উপর।

  • মোহাম্মদ নবি (আফগানিস্তান)

এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে নেতৃত্ব দিবেন ৩৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ নবি। মজার ব্যাপার হল, নবীর পরে আফগানিস্তান দলে দ্বিতীয় বয়স্ক খেলোয়াড় হলেন নজিবুল্লাহ জাদরান। যার বয়স নবীর চেয়েও ৮ বছর কম, ২৯ বছর। যা হোক, আফগান সেনাপতির সাম্প্রতিক ফর্মের অবস্থা খুব একটা ভাল না।

এশিয়া কাপজুড়ে যেন ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। শেষ ১০ ম্যাচে ব্যাট হাতে সিঙ্গেল ডিজিটই পার করতে পারেন নি। তবে ক্যারিয়ারে ১০১ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচসহ মোট ৪৪০ টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এমন অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবেই কাজে লাগাতে চাইবেন তিনি।

  • শান মাসুদ (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডে, টেস্ট খেলেছেন, কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ অচেনা মুখ তিনি। তবে ফখর জামানের জায়গায় পাকিস্তান এবার তাদের বিশ্বকাপের দলে ঢুকিয়েছে ৩২ বছর বয়সী শান মাসুদকে।

মূলত পিএসএল আর ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করার কারণেই তিনি পাকিস্তান দলে সুযোগ পান। এবারের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে প্রায় ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ৫৪৭ রান করেছেন। তাই এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে- দুই অবস্থানেই দারুণ রসদ হতে পারেন শান মাসুদ।

  • ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

বয়স ৩৩। তবে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার বিবেচনায় দারুণ এক অলরাউন্ডার প্রিটোরিয়াস। ব্যাট হাতে যেমন ঝড়ো ইনিংস খেলতে পারেন, বল হাতেও ঠিক তেমনভাবে কার্যকরী উইকেট নিতে পারেন তিনি। এখন পর্যন্ত খেলা ২৯ ম্যাচে নিয়েছেন ৩২ উইকেট আর ১৬৪.১৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৬১।

  • মইন আলী (ইংল্যান্ড)

এই মুহূর্তে তাকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা বললেও ভুল হয় না। টি -টোয়েন্টি ব্লাস্ট থেকে শুরু করে আইপিএল, পিএসএল সব খানেই দুর্দান্ত প্রতাপে খেলে যাচ্ছেন। তাই এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলের অন্যতম গুরুতপূর্ণ সদস্য ৩৫ বছর বয়সী মইন আলী।

বিশেষত, টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার সব জায়গাতেই তিনি ব্যাটিং করতে পারেন। সাথে দলের প্রয়োজনে অফ স্পিনটাও তিনি ভালই করেন। তাই প্রতিপক্ষ সব দলের জন্য এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম এক ত্রাসের নাম হতে পারেন মইন আলী।

  • সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

বয়স ৩৫ পেরিয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার নাম তিনি। সাথে এবার দলকে নেতৃত্বের গুরু দায়িত্বও তাঁর কাঁধে রয়েছে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ২০০০ রান, সাথে ১০০ উইকেটশিকারী একমাত্র ক্রিকেটার হলেন এই সাকিব।

তাই, সাকিবকে নিয়ে এবার বাংলাদেশি সমর্থকদের প্রত্যাশা রয়েছে আকাশ ছোঁয়া। সবার মাঝেই চাওয়া, ২০১৯ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি আরও একবার হোক। শুধু দলগত হিসেবে সেবারের পুনরাবৃত্তি না হলেই হলো।

  • দিনেশ কার্তিক(ভারত)

সবাই যখন তাঁর শেষ দেখে ফেলেছিল, তখনই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। অবিশাস্য ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩৭ বছর বয়সে এসে ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিলেন দীনেশ কার্তিক। ২০২২ আইপিএলে দারুণ একটি মৌসুম কাটিয়েছিলেন তিনি।

প্রায় সব ম্যাচেই ফিনিশিং রোলে ব্যাটিং করে ১৮৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৩৩০ রান। তাই এবারের বিশ্বকাপে শেষ ওভার গুলোতে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে আস্থার এক নাম হতে পারেন দীনেশ কার্তিক।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link