অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। অনেক সমালোচনা হয়েছিল, আলোচনা তো ছিলই। শেষ বেলায় লিওনেল মেসির চোখের জলেও নিয়তি পাল্টায়নি। গত মৌসুমে হঠাৎ করেই তাঁর এবং বার্সেলোনার সম্পর্কের ইতি ঘটেছিল। প্রায় দুই যুগ একসাথে থাকার পর বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমিয়েছিলেন সদ্য বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন। এই ট্রান্সফার নিয়ে সে সময় আলোচনার ঝড় উঠেছিল সর্বত্র; মেসির ক্লাব ছাড়ার জন্য কেউ দায়ী করেছিল বার্সেলোনার অদূরদর্শীতাকে, আবার কেউবা আঙুল তুলেছিল মেসির মোটা অংকের বেতনের দিকে।
তবে সময়ের সাথে অনেকটাই থেমে গিয়েছে সেই আলোচনা। ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন লিওনেল মেসি। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬ গোল আর ৮ অ্যাসিস্ট এসেছে তাঁর পা থেকে। কিন্তু আবারও উঠে এসেছে পুরোনো সেই বিতর্ক; মেসি এবং বার্সেলোনার চুক্তি ফাঁস হয়েছে, যার নেপথ্যে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল মুন্ডো।
সময়টা ২০২০ সাল, লিওনেল মেসি এবং বার্সেলোনার চুক্তির তখন আর এক বছর বাকি। স্বাভাবিকভাবেই তাই চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনায় বসেছিল দুই পক্ষ। আর সেই আলোচনাতে মেসির দাবি দাওয়া গুলোই মূলত প্রকাশ করেছে এল মুন্ডো। সব মিলিয়ে এই ফরোয়ার্ড প্রায় নয়টি চাহিদার কথা জানিয়েছিলেন, যেগুলো প্রায় সব কয়টিই এক রকমের বিলাসিতা।
প্রথমত লিওনেল মেসি তিন বছরের জন্য চুক্তি নবায়নের কথা উল্লেখ করেন। এবং চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বোনাস স্বরূপ দাবি করেন দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখানেই শেষ নয়, নিজের রিলিজ ক্লজেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে আগ্রহী ছিলেন তিনি; পূর্বের রিলিজ ক্লজ ৭০০ মিলিয়ন ডলার থেকে নামিয়ে থেকে মাত্র ১০০০০ ডলারে আনতে চেয়েছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।
এসবের পাশাপাশি লিওনেল মেসি বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন। মূলত স্পেন সরকার করের হার বাড়িয়েছিল, যার ফলে বেতন বাবদ আয় কমে যাচ্ছিল মেসির। এ জন্য তিনি বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন, যাতে কর–পরবর্তী আয় আগের তুলনায় বেশি হয়। তবে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবেই থেমে যাননি এই সুপারস্টার, করোনা কালীন সময়ে মওকুফ করা পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দিতেও বলেছেন বার্সেলোনাকে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে ক্লাবের অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় ২০২০/২১ মৌসুমে বেতন কমানো হয়েছিল মেসি সহ সব ফুটবলারের। কিন্তু চুক্তি নবায়নের সভায় এই কর্তিত বেতন ফেরত দেওয়ার কথা জানান। এই টাকা ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ মৌসুমে দুই ধাপে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। শুধু বেতনের কেটে নেওয়া অংশই নয়, এর সঙ্গে ৩ শতাংশ সুদও দিতে হবে বলে জানিয়েছেন লিওনেল মেসি।
একই সাথে ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে নিজের ও সুয়ারেজের পরিবারের জন্য প্রাইভেট বক্স স্থাপন করতে বলেছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তাছাড়া ছুটিতে পুরো পরিবার নিয়ে যাতায়াতের জন্য ক্লাবের কাছে প্রাইভেট বিমান চেয়েছিলেন তিনি।
বার্সেলোনায় থাকাকালীন লিওনেল মেসির ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন পেপে কস্তা। পেপের বেতন ক্লাবের কোষাগার থেকেই পরিশোধ করতো বার্সেলোনা। ক্লাবের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁর কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বার্সেলোনা বোর্ডের। কিন্তু মেসি কস্তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করার শর্ত দেন কাতালান ক্লাবটিকে।
সেই সাথে নিজের ভাইয়ের জন্য কমিশন দাবি করেন লিওনেল মেসি। মেসির ভাই রদ্রিগো মূলত বার্সেলোনার সঙ্গে কাজ করতেন ফুটবলারদের এজেন্ট হিসেবে। চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে মেসির আরেকটি চাহিদা ছিল, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গেও চুক্তি নবায়ন করতে হবে।
এমন বিলাসি আর অপ্রত্যাশিত নয়টি শর্তের মাঝে সাতটিতেই রাজি হয় বার্সেলোনা। শুধুমাত্র রিলিজ ক্লজ কমানো এবং দশ মিলিয়ন ডলার বোনাসের শর্ত মানতে সম্মত হয়নি তারা। আর তাই ক্লাবের সঙ্গে সে সময় চুক্তি নবায়ন করেননি লিওনেল মেসি। শেষ পর্যন্ত পুরোনো চুক্তির মেয়াদ শেষ হতেই ক্লাব ছাড়েন তিনি। এরপরই স্পেন ছেড়ে চলে আসেন ফ্রান্সে।