বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন শব্দটা যেন রীতিমত ডালভাত। এই বাংলার প্রতিটা ঘরে যেমন ভাত আর ডাল নিত্যদিনের সঙ্গী, ঠিক তেমনি টাইগারদের ক্রিকেটদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে পরিবর্তন নামক শব্দটা। ব্যর্থতা ঠিক ছেড়ে যায়নি কখনোই। সেই সাথে পরিবর্তনও ছাড়েনি টাইগার ক্রিকেটকে। এইতো এশিয়া কাপের ভরাডুবির পর শব্দটা নতুন করে আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
তবে আদোতে পরিবর্তনের ছিটেফোঁটারও তো দেখা নেই। একই ধরণের কুশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শন। দিশেহারা বোলিং আক্রমণ। ফিল্ডিংয়ের অবস্থা তো যাচ্ছে তাই। ঠিক কোন স্থানেই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের দেখা নাই। বদলের মধ্যে কেবল দলে কিছু ক্রিকেটার বাদ পড়া। নতুন বলতেও তেমন কোন চমক নেই। এখনকার দলে থাকা সবাই কোন না কোন সময় জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বড় বড় ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। তবুও কোথাও একটা পিছিয়ে গোটা দল।
পিছিয়ে পড়া জায়গাটা হচ্ছে মূলত মানসিকতা। চিন্তাভাবনার দিক থেকে এখনও ঢের পিছিয়ে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। লড়াকু মনোভাবের কোন আলামত খুঁজে পাওয়া দায়। ভয়ডরহীন ক্রিকেটের বুলি আওড়ানো হয় যত্রতত্র। তবে মাঠের ক্রিকেটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আনকোড়া বোলাররাও যেন ভয় ধরায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের মনে। সাব্বির রহমান, ইয়াসির আলী রাব্বিরা তো বলের লাইনই বুঝতে পারেননা। বলের মেরিট বিশ্লেষণের ক্ষমতা তো বহু দূরের কথা।
তাছাড়া দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তো চোখেমুখে পরিলক্ষিত। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে দায়সারা ভাব আরব আমিরাতের বিপক্ষেও। যেন তেমন শক্ত কোন প্রতিপক্ষই না। তবুও প্রথম ম্যাচটা আরব আমিরাত হেরেছে কেবল অভিজ্ঞতার কাছে। অভিজ্ঞতার অন্ত নেই। তবে সেসব অভিজ্ঞতা আসলে কোন কাজে আসছে কি না সে প্রশ্ন তো একেবারেই যেন যথাযথ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শুরুর লগ্ন থেকে আজ অবধি বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছে।
দীর্ঘ এই পদযাত্রায় এই ফরম্যাটটা ঠিকঠাক রপ্ত করতেই যেন পারছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সামনেই আরও এক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। স্বাভাবিকভাবে পেস দূর্বল একটা দল হিসেবেই সেখানে যাবে বাংলাদেশ। তাছাড়া বাংলাদেশ দলের পেশিশক্তির ব্যবহার করবার মত খেলোয়াড়দের অভাব রয়েছে বেশ। সেদিক থেকে মানসিকভাবে আগেই হয়ত পিছিয়ে পড়বে টাইগাররা। সেখানে স্ট্রাইক রোটেট হতে পারে একটা সমাধান। কিন্তু সেদিক থেকেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ দল।
এই মানসিকতার অভাবটা বড় দল হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের প্রধান অন্তরায়। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে আরব আমিরাতের সাথে বাংলাদেশের ব্যবধানটাও খুব বেশি নয়। তবে আরব আমিরাত প্রথম সারির দলগুলোর সাথে নিয়মিত খেলার সুযোগটা পায় না। সেদিক থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। তবুও মাঠের ক্রিকেটের আবেগ নিয়ন্ত্রনে থাকছে না টাইগারদের। আরব আমিরাতে সাথে তফাৎ খালি চোখে তেমন না থাকলেও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বহু এগিয়ে বাংলাদেশ।
তবুও প্রতিটা উইকেটের উদযাপন মনে করিয়ে দেয় সমগোত্রীয় দুইটি দল হয়েছে মুখোমুখি। এই মানসিকতার ফারাকটাই বাংলাদেশকে বড় দল হতে অদৃশ্য এক বাঁধার দেয়াল হচ্ছে। হাজারটা পরিবর্তন নিশ্চয়ই এই দেয়াল টপকাতে সহয়তা করবে না। যদিনা পরিবর্তনটা আসে মানসিকতায়। তাছাড়া নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার প্রবণতারও রয়েছে ঘাটতি। সব মিলিয়ে বড় দলগুলো থেকে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ, তবে সেটা স্রেফ মানসিকতায়।
সংযুক্ত আমিরাতের বিপক্ষে প্রত্যাশিত ফলই পেয়েছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ করেছে প্রতিপক্ষকে। কিন্তু, প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স কিংবা মানসিকতা দেখা কি মিলেছে? – উত্তরটা কারোই অজানা নয়।