বাদশাহ বাবরের সাম্রাজ্য বিস্তার

একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদের জীবনে সমালোচনা আসবে। এটা তাঁদের জীবনেরই তো অংশ, যেমনটা প্রথমেই বলা হল। কিন্তু, ক’জনই বা পারেন সেই সমালোচনার জবাব দিয়ে সেই সমালোচকদেরই প্রশংসা করতে বাধ্য? পেরেছেন বাবর আজম। সর্বশেষ এশিয়া কাপের সময়জুড়ে তাঁর ব্যাটিং মানসিকতা ও অফফর্ম নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। তবে, সেই সমালোচনার জবাব তিনি দেশের মাটিতে দিয়েছেন ঝড়ো কয়েকটা ইনিংস খেলে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

আর ভারত-পাকিস্তান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল বলেই কি না, বাবর আজমের সাথে প্রায়ই তুলনা হয় বিরাট কোহলির। আর বিরাট কোহলি কে, বা তিনি কি করার সামর্থ্য রাখেন – সেটা নিশ্চয়ই নতুন করে ভেঙে বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আর এটাও ঠিক যে, নিজেদের দিনে এই দু’জন ব্যাটার রীতিমত অপ্রতিরোধ্য। পরিসংখ্যানের মাপকাঠিতে হয়তো বিরাটের সাথে বাবরের তুলনা চলে না, তবে যত দিন যাচ্ছে বাবর দু’জনের মধ্যে ব্যবধানটা কমিয়েই চলেছেন।

এবার আরেকটা জায়গায় বাবর চলে আসছেন বিরাটের কাতারে। টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক মঞ্চে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে তিন হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া ব্যাটার হলেন বিরাট। ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক মাত্র ৮১ টি ইনিংসেই তিন হাজার রানের টি-টোয়েন্টি ক্লাবে যোগ দিতে সক্ষম। ২০২১ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরে তিনি সেই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

ইতোমধ্যেই কোহলির অনেকগুলো রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন বাবর আজম। এবার পাকিস্তানের অধিনায়ক টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম তিন হাজার আন্তর্জাতিক রানের মালিকও বনে গেলেন, বিরাটের সাথে যৌথভাবে। বিরাটের মতই ঠিক ৮১ তম ইনিংসে গিয়েই টি-টোয়েন্টির তিন হাজারি রানের আন্তর্জাতিক ক্লাবে নাম লেখালেন তিনি। ফলে, এরই মধ্য দিয়ে যেন দু’জনের প্রতিদ্বন্দ্বীতা আরও খানিকটা জমেই উঠল।

কোহলি অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীতা ছাপিয়ে বরাবরই বাবরের প্রশংসাই করেন। স্টার স্পোর্টসের সাথে কথা বলতে গিয়েও বাবরকে ‘সব ফরম্যাটের শীর্ষ ব্যাটার’ বলে রায় দিয়েছেন কোহলি। তিনি বলেন, ‘২০১৯ বিশ্বকাপ চলাকালে ম্যানচেস্টারে আমাদের খেলা ছিল। সেখানে ওর (বাবর আজম) সাথে আমার প্রথম আলাপ হয়। ওখানে ইমাদও (ওয়াসিম) ছিল। ইমাদকে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট থেকে চিনি। আমরা একে অপরের সাথে খেলেছি। ইমাদই বাবরের সাথে আমার আনুষ্ঠানিক পরিচয় করিয়ে দেয়।

‘আমরা খেলা নিয়ে আলাপ করি। ওর কথায় আমার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। আর সেটা এখনও আছে। বাবর বাকিদেরকে শ্রদ্ধা করতে জানে, এটা জেনেও যে ও এখন বিশ্বের সব ফরম্যাটেরই সেরা ব্যাটারদের একজন। এটা বলতেই হচ্ছে, কারণ সব ফরম্যাটেই ও সমান তালে পারফর্ম করে যাচ্ছে।’, যোগ করেন কোহলি।

বাবরের খেলা উপভোগ করেন কোহলি। তিনি বলেন, ‘বাবরের প্রতিভা অসাধারণ। ওর খেলা আমি উপভোগ করি। আর সেই উপভোগের মাত্রা কখনও কমেনি। ওর মানসিকতাও এক বিন্দু নড়চড় হয়নি। এটা খুবই ইতিবাচক ব্যাপার। কারও ভিত্তি মজবুত হলে কোনো কিছুই তাঁকে নিজের লক্ষ্য থেকে সরাতে পারে না।’

কোহলি ভুল বলেননি। নান্দনিকতা, আভিজাত্য, আগ্রাসন – সবই যেন বাবরের ব্যাটিং থেকে ঠিকরে বের হয়। আর তাঁর হাত ধরে পাকিস্তান ক্রিকেট দলটাও ভয়ডরহীন হয়ে উঠছে। তাঁদের ঘিরে সমর্থকদের উন্মাদনাও বাড়ছে, আর এই উন্মাদনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন বাবর আজম। পাকিস্তানের সমর্থকরা অন্তত একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকতেই পারেন যে, তাঁদের স্বপ্নগুলো সঠিক হাতেই আছে। আর যত দিন যাচ্ছে বাদশাহ বাবরের সাম্রাজ্য ততই বড় হচ্ছে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link