বাইশ বছর বয়সী সেই তরুণ রোহিত

আধুনিক দিনের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ওপেনার কে? নি:সন্দেহে এই প্রশ্নের উত্তরে সবার আগে উচ্চারিত হবে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার নাম। অন্তত রোহিতের ক্যারিয়ারের উদ্বোধনী রেকর্ড সেই সাক্ষ্য প্রমাণ বহন করে। ১০৫ টিটোয়েন্টিতেতাঁর নামের পাশে চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে। ক্রিকেটের এই স্বল্পতম ঘরানায় তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৩২০০ রান।

রোহিত কিন্তু শুরু থেকেই ওপেনিং ব্যাটার ছিলেন না। আরও ভালো করে বললে বলতে হয় রোহিতের ওপেনিং গুণের আবিষ্কারক হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তখনকার এই মিডল অর্ডার ব্যাটারকে ২০১৩ সালে ধোনি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে মাঠে নামান। তার আগে আইপিএলেও  রোহিত মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে খেলতেন।

ধোনিই রোহিতের সুপ্ত প্রতিভাটা প্রথমে টের পেয়েছেন, এবং তাঁকে ওপেনার হিসেবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিয়েছেন। নইলে আজকের দিনে দ্য গ্রেট রোহিত শর্মাকে আমরা হয়তো পেতাম না। রোহিত আইপিলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেন তা সবার জানা। কিন্তু রোহিতের এই জৌলুস ফ্রাঞ্চাইজি ক্যারিয়ারে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ছাড়াও ডেকান চার্জার্স একটি বিশেষ নাম হয়ে রইবে।

কারণ, ২০০৯ সালে এই দলের হয়ে তিনি আইপিএল শিরোপাও জিতেছিলেন। সেই মৌসুমে মোট ১৬ ম্যাচ খেলে, রোহিত ২৭.৮৪ গড়ে ৩৬২ রান করেছিলেন, চার্জারদের শিরোপা জয়ে তা দারুণ অবদান রেখেছিলো। রোহিতের বয়সটা ছিল কেবল বাইশ। ওইটুক বয়সেই রোহিত চার্জারদের সহযোগী অধিয়াকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেবার অধিনায়ক ছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

প্রায় ১৩ বছরেরও বেশি সময় পরে, শিরোপা জয়ী ডেকান চার্জার্স স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিডস্টার ফিদেল এডওয়ার্ডস সেই সময়টার স্মৃতিচারণ করলেন। আইপিএলে খেলতে এসে জীবনে প্রথমবারের মতো রোহিত শর্মাকে অনুশীলনের সময় বোলিং করার অনুভূতিটা ব্যক্ত করলেন। তৎকালীন সাতাশ বছরের এডওয়ার্ডস ইতোমধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অবিচ্ছেদ্য আংশ ছিলেন।

নেটে তরুণ রোহিত শর্মাকে বল করার পর, তিনি রোহিতের ব্যাটিং ক্ষমতা নিয়ে কতটা অবাক হয়েছিলেন তা অকপটে স্বীকার করেছেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। ফিডেল এডওয়ার্ডস বলেন, ‘প্রথমবার যখন আমি নেটে তাঁকে বোলিং করি, তখন থেকেই আমার মনে হয়েছিল, বাহ, এই ছেলেটি সত্যিই দারুণ ব্যাট করতে পারে।’ 

রোহিত যে পরবর্তীতে ভারতীয় ক্রিকেটে একজন সুপারস্টার হতে চলেছেন সেটি এডওয়ার্ডস সেই বছর বাইশের রোহিতের ব্যাটিং দেখেই টের পেয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিয়ে ভারতীয় অধিনায়কের জন্য একটি ভবিষ্যদ্বাণীও করে দিয়েছেন। এই উইন্ডিজ পেসার বলেন, ‘এবং আমি নিশ্চিত যে রোহিত অস্ট্রেলিয়াতেও সত্যিই ভাল করতে চলেছেন।’

রোহিতকে নিয়ে সম্ভবত লিখে শেষ করা যাবেনা। রোহিত শর্মা একটা ক্লাসের নাম। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডের মালিক। রোহিতের ক্যারিয়ারে রেকর্ডের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

একজন ভালো খেলোয়াড়ের পাশাপাশি দারুণ নেতৃত্বের গুণটাও রয়েছে তাঁর। এবারের ভারতের টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশনে তাই দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়েছে তাঁর কাঁধে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাঁর নেতৃত্ববলে ভারতকে ক্রিকেটের স্বল্পতম ফরম্যাটে বিশ্বসেরার সম্মান এনে দিতে পারবেন কিনা সেটাই দেখার পালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link