দ্য গ্রেটেস্ট ফেনোমেনন অব ফুটবল

ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিওর এক হত দরিদ্র দম্পতি নেলিও নাজারিও দি লিমা ও সোনিয়া দোস সান্তোস বারাতা। ১৯৭৬ সালের দিকে তাদের ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে এক শিশু। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েই ঠেকেছে যে ডাক্তারকে ফি দেওয়ার মতো কানাকড়িও দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের নেই। তবে এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছিলেন স্বয়ং সেই ডাক্তার।

তাঁদের নবজাত সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন ছিল সব ধরনের সহায়তাই করেছিলেন তিনি। তবে নতুন বাবা হওয়া নাজারিও দি লিমা ডাক্তারকে কোনো ফি না দিতে পারলেও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাঁকে তিন কেজি চিংড়ি কিনে দিয়েছিলেন। সাথে সেই ডাক্তারের নামেই নিজের শিশুর নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আর সে ডাক্তারের নাম ছিল ‘রোনালদো’। একজন ডাক্তারের নামেই সেদিন পৃথিবীর পাতায় জন্ম নিয়েছিলেন কিংবদন্তি এক ফুটবলার। তিনি রোনালদো নাজারিও, তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার। 

মেসিকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁর চোখে সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার কে? কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই মেসি সেদিন অকপটে বলেছিলেন-রোনালদো নাজারিও। সাথে আরো বলেছিলেন, ‘আমি তাঁর বিপক্ষে খেলতে পেরে ভাগ্যবান। আরো ভাগ্যবান এই জন্য যে আমি যখন খেলেছি তখন তিনি ইনজুরির কারণে তাঁর সেরা ফর্মে নেই। কারণ তিনি শুধু সেরা নাম্বার নাইন না, সর্বকালের সেরা তালিকাতেও উনি সামনের দিকেই থাকবেন।’

দুইটি বিশ্বকাপ, দুইটি কোপা আমেরিকা, দুইবার ব্যালন ডি’অর, তিন বার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারসহ ক্যারিয়ারে প্রায় সব পুরস্কারই জিতেছেন রোনালদো। ক্যারিয়ারে একমাত্র আক্ষেপ বলতে একবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতেন নি তিনি। তবে সেই এক শিরোপার অপূর্ণতায় তো আর তাঁর গ্রেটনেসকে থামাতে পারেনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে মিরোস্লাভ ক্লোসার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটি তাঁর(১৫)। 

তবে রোনালদোর ফুটবলার হয়ে উঠে আসার গল্পটা কিন্তু তাঁর সফল ক্যারিয়ারের মতো ছিল না। রোনালদোর বয়স যখন ১১ বছর তখনই তাঁর বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। এমনিতে হত দরিদ্র পরিবার। তার উপর বাবা মাকে একসাথে না পেয়ে শিশু বয়স থেকেই বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছিল রোনালদোকে। জীবিকার জন্য তখন কোনো পথই খোলা ছিল না তাঁর।

তবে, ফুটবলকে অবলম্বন করে জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে পড়ে ১১ বছরের রোনালদো। ঐ ছোট বয়স থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলে আয় করা শুরু করেন রোনালদো। আর সেই ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেই জীবনের গতিতে এগিয়ে যান তিনি। 

ছোটবেলা থেকেই রোনালদোর প্রিয় ক্লাব ফ্লামিঙ্গো। দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে একবার ফ্লামেঙ্গোতে খেলার জন্য ট্রায়ালেও গিয়েছিলেন। কিন্তু ফ্লামেঙ্গোর সেবার ১৫ বছর বয়সী রোনালদোকে মনে ধরেনি। রোনালদো সুযোগ পেলেন না তাঁর স্বপ্নের ক্লাবে। তবে তাঁকে অনেক বড় স্বপ্নের পথে এগিয়ে দিল ক্রুইজেরো।

ক্রুজেইরো ক্লাবের  তখনকার স্কাউট ছিলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার জরজিনহো। তিনিই প্রথম ক্রুজেইরোতে নিয়ে আসেন রোনালদোকে। আর এখান থেকেই রোনালদোর গতিপথ পাল্টে যায়। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ব্রাজিলের ফার্স্ট ডিভিশন লীগে অভিষেক হয় তাঁর।

তবে রোনালদো প্রথম নজরে আসেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বাহিয়ার বিপক্ষে এক ম্যাচে। সে ম্যাচে তিনি একাই করেছিলেন ৫ গোল! আর সে ম্যাচটি মাঠে বসে দেখেছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ডিফেন্ডার কাফু। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে সে ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘রোনালদোকে প্রথম দেখেছিলাম ক্রুইজেরো ক্লাবে। ছোট্ট এক কিশোর কী দুর্দান্তই না খেলেছিলো সেদিন। একাই করেছিল পাঁচ গোল। সত্যিকার অর্থেই ও একটা ফেনোমেনন।’ 

ক্রুইজেরোর হয়ে নিজের প্রথম মৌসুমেই দারুণ ছন্দে ছিলেন রোনালদো।প্রথম মৌসুমেই জিতে নেন ক্লাব ইতিহাসে প্রথম ব্রাজিলের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট কোপা ডে ব্রাজিল। কোপা ডে ব্রাজিল ক্রুইজেরোর হয়ে ১৪ ম্যাচ করেছিলেন ১২ গোল। হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সব মিলিয়ে ক্রুইজেরোর হয়ে সে মৌসুমে রোনালদো ৪৭ ম্যাচে করেছিলেন ৪৪ গোল।

ক্রুইজেরোর হয়ে দুর্দান্ত এক এক মৌসুমই নতুন মোড় এনে দেয় রোনালদোর ক্যারিয়ারে। মাত্র ১৮ বছরেই সুযোগ পান ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ব্রাজিল দলে। তবে সুযোগ মিলল না কোন ম্যাচে। কারণটাও খুবই সাধারণ। ব্রাজিলের তখনকার সেরা স্ট্রাইকার রোমারিও। রোমারিওকে বাদ দিয়ে তাই নবাগত স্ট্রাইকার রোনালদোকে একাদশে নামানোর সুযোগই নেই। তবে দুই যুগ পর সেবার ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতায় ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সঙ্গী হন রোনালদো।

বিশ্বকাপ জেতার বছরেই ক্রুইজেরো ক্লাব ছেড়ে ইউরো পাড়ি জমান রোনালদো। সতীর্থ রোমারিওর পরামর্শে যোগ দেন নেদারল্যান্ডসের ক্লাব পিএসভি-তে। ইউরোপে নিজের প্রথম মৌসুমে এসেই বাজিমাত করেন তিনি। ডাচ লীগের এক মৌসুমেই করলেন ৩০ গোল। তবে পরের মৌসুমেই ইনজুরিতে পড়েন তিনি। আর ঐ ইঞ্জুরিতেই সে মৌসুমে বেশিরভাগ সময় মাঠের বাইরে কাটাতে হয় তাঁকে। তবে ঠিকই চমক দেখিয়েছিলেন ডাচ কাপে। ১২ ম্যাচে ১৩ গোল করে পিএসভিকে সেবার এনে দিয়েছিলেন ডাচ কাপের শিরোপা। 

পিএসভির হয়ে দুই মৌসুমে ৫৮ ম্যাচে করেছিলেন ৫৪ গোল। পিএসভির হয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর রোনালদো নজরে পড়ে যান স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার চোখে। এর সাথে ইন্টার মিলানও উঠে পড়ে লাগে রোনালদোকে দলে ভেড়াতে। তবে শেষ পর্যন্ত ১৭ মিলিয়ন পাউন্ডে পিএসভি থেকে বার্সেলোনায় যোগ দেন রোনালদো।

রোনালদো বার্সায় যোগ দেন ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের শুরুতে। আর সে বছরেই মাত্র ২০ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ফিফা প্ল্যেয়ার অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতার রেকর্ড গড়েন তিনি। বার্সা খেলোয়াড় হিসেবে সে পুরস্কার গ্রহন করলেও রোনালদো ফিফা বর্ষসেরা হয়েছিলেন মূলত পিএসভি’র হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য। 

বার্সায় এসে রোনালদো প্রথম মৌসুমেই যা করলেন তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। ৪৯ ম্যাচেই করলেন ৪৭ গোল। এর মধ্যে লা লিগাতেই করলেন সে মৌসুমের সর্বোচ্চ ২৫ গোল। সে মৌসুমেই এসডি কম্পোস্টেলার সাথে রোনালদো এমন গোল করলেন যে স্প্যানিশ পত্রিকা এ এস শিরোনামই দিয়ে ফেলল এক মহাতারকার নামে, ‘পেলে রিটার্নস’। স্পেনে তখন রোনালদোকে নিয়ে রব রব উৎসব।  কিন্তু বার্সার সাথে চুক্তি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় পরের মৌসুমেই দল ছাড়েন তিনি। 

এবার যোগ দেন ইন্টার মিলানে। ইতালিয়ান লিগ তখনকার সময়ে স্ট্রাইকারদের জন্য এক ত্রাসের নাম। কারণ বাঘা বাঘা ডিফেন্ডাররা সব খেলতেন ইতালিয়ান লিগ। তবে রোনালদোর সময় লাগলো না মানিয়ে নিতে। ইন্টার মিলানে এসেও নিজেকে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে তৈরি করলেন। প্রথম মৌসুমেই ৩৭ ম্যাচে করলেন ২৫ গোল। নেস্তা থেকে মালদিনি সবাই একবাক্যে বলেন, সিরিআর সে সময়ের রোনালদো ছিল এক কথায় অপ্রতিরোধ্য।

সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মালদিনিকে একবার জিজ্ঞাসাও করা হয়েছিল, কার বিপক্ষে তাঁর  খেলতে সবচেয়ে সমস্যা হতো। মালদিনিরও এক কথায় উত্তর ছিল- রোনালদো। 

সাল ১৯৯৮। ব্রাজিলের হয়ে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। একই সাথে ব্রাজিল সেবার ইতিহাস গড়ার সন্ধিক্ষণে। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা দুবার (১৯৫৮, ১৯৬২ এরপর ১৯৯৪) বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার পথে ছিল ব্রাজিল। ফাইনালের আগেই রোনালদো পেয়েছেন ৪ গোল, যা ব্রাজিলের হয়ে ছিল সর্বোচ্চ। ততদিনে ফাইনালেও প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কারণ ৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে ক্লাব ও দেশের জার্সি মিলিয়ে চার ফাইনালে করেছিলেন চার গোল।

কিন্তু ফাইনাল ম্যাচের দিন ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে পড়েছিল ব্রাজিল। ফাইনালের আগে রোনালদো তাঁর সতীর্থদের সঙ্গে হোটেলে দুপুরের খাবার খান। রোনালদো ও রবার্তো কার্লোস হোটেলে একই কক্ষে ছিলেন।  কিন্তু হঠাতই রবার্তো কার্লোস রোনালদোকে অজ্ঞান হিসেবে আবিস্কার করেন। কিছুটা ভীত হয়ে তিনি অন্য সব সতীর্থকে ডাক দেন।

এডমুন্ডো, সিজার সাম্পাইরা ছুটে আসেন। বিকেল পাঁচটার দিকে রোনালদোকে লিঁলাস ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এমন অবস্থায় ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগে ব্রাজিল কোচ জাগালো রোনালদোকে একাদশের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি রোনালদোকে বাইরে রেখেই একাদশ জমা দেন। এদিকে ক্লিনিক থেকে খবর আসে, রোনালদো খেলার জন্য শারীরিকভাবে ফিট।

রোনালদো সে ফাইনাল খেলেছিলেন। তবে পুরো ম্যাচেই ছিলেন বিবর্ণ। ব্রাজিলও সে ম্যাচ হেরে গিয়েছিল। বলতে জিদান একাই সে ম্যাচ হারিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে রোনালদোকে কম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি।  সংবাদমাধ্যম ও ফটোগ্রাফারদের চাপে তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপায় ছিল না। মায়ের বাসাতেও একা যেতে পারতেন না। নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। বাধ্য হয়েই রোনালদো বলেছিলেন, ‘আমি কোনো অপরাধী নই। দয়া করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দিন।’ 

১৯৯৮ সালে রোনালদোর সে দুঃস্বপ্ন অবশ্য সুখস্বপ্ন হিসেবে ধরা দিয়েছিল পরের বিশ্বকাপেই। ২০০২ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে করলেন ৮ গোল। ফাইনালে জোড়া গোল। সাথে আগের বারের ক্ষত মুছে ব্রাজিলবাসীর মনে চিরদিনের জন্য ঠাই করে নেন রোনালদো। আর ব্যক্তিগত অর্জন ভারি করে নেন সেবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জিতে। 

এরপর বিশ্বকাপের সে বছরেই ইন্টার মিলান ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসেন রোনালদো। প্রথম মৌসুমেই ২৩ গোল করে রিয়ালকে জেতান লা লিগা। রিয়ালের হয়ে ইন্টার কন্টিনেন্টাল ও স্প্যানিশ সুপার কাপও জেতেন। ২০০৩-০৪ সিজনে ২৬ গোল করে হন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং দ্বিতীয় বারের মত জেতেন ব্যালন ডি’অর।

রিয়ালের হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০০৩ সালে। সেবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম লেগে বাজে খেলায় এদিন রোনালদোকে স্যার ফারগুসন খোঁচা দেন যে, তাঁর আগের ম্যাচে আসল ভয় ছিল রাউলকে নিয়ে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে হওয়া সে ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৪-৩ গোলে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে দেয়।

কিন্তু, দুই লেগ মিলিয়ে জয়ী হয় রিয়াল এবং টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পরে যায় ইউনাইটেড। আর রিয়াল মাদ্রিদের সেদিনের ৩ গোলের তিনটিই দিয়েছিলেন রোনালদো। ওল্ড ট্রাফোর্ডে যেটি ছিল ফার্গুসন যুগের প্রথম কোনো ফুটবলারের হ্যাটট্রিক। আর সে জন্যই রোনালদোর হ্যাটট্রিকে পুরো স্টেডিয়াম সেদিন দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছিল তাকে।

রিয়াল মাদ্রিদে সব মিলিয়ে ১২৭ ম্যাচ খেলে ৮৪ গোল করেন রোনালদো। ২০০৭ সালে তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এবার ইতালির আরেক জায়ান্ট ক্লাব এসি মিলানে যোগ দেন। ততদিনে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষের শুরু হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে ওজনজনিত সমস্যা ছাড়াও একাধিকবার ইঞ্জুরিতে পড়েন তিনি। ২০০৮ সালে এসি মিলানের হয়ে সিরিআর এক ম্যাচে হাটুতে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। ওই মৌসুমেই রোনালদোর এসি মিলান ছেড়ে নিজ দেশের ক্লাব করিন্থিয়াসে যোগ দেন। ২০০৯ সালে করিন্থিয়াসের হয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় বারের মত জেতেন কোপা ডি ব্রাজিল।

পেলে, নেইমারের পর ব্রাজিলের জার্সি গায়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটা রোনালদোর। ৯৮ ম্যাচে করেছেন ৬২টি গোল। তবে রোনালদোর অনন্যতা হলো, ক্যারিয়ার জুড়েই তিনি অনন্য বিগ ম্যাচে পারফর্ম করার কারণে। এটাই তাঁকে আর দশটা ফুটবলারের চেয়ে আলাদা করেছে। ব্রাজিলের তিনটি ইন্টারন্যাশনাল শিরোপা জয়ে দুইবারই হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। সাথে দুইবার সর্বোচ্চ গোলদাতা, একবার রানার্স আপ, এবং যে তিনটি ফাইনাল খেলেছেন তার প্রতেকটিতেই গোল করেছেন।

১৯৯৪ সালের ২৩শে মার্চে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে দিয়ে ব্রাজিল জার্সিতে অভিষিক্ত হওয়া রোনালদো ব্রাজিলের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ করেন ২০১১ সালের ৭ জুনে। ব্রাজিলের সাও পাওলোতে রোমানিয়ার সাথে এক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দিয়ে এ দিন আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানেন তিনি।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার জুড়ে রোনালদো যে শুধু তাঁর ফুটবল শিল্প দিয়েই নন্দিত হয়েছেন তা কিন্তু নয়। নিজের কিছু কার্যকলাপে নিন্দিতও হয়েছেন। ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে চুলে অদ্ভুত ছাঁট দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন রোনালদো। আলোচনার মাঝে অবশু সমালোচনাই বেশি ছিল। তবে তাঁর কিছুদিন পর রোনালদোর উপলব্ধি হয়। তিনি বলেন, ‘ওটা ভয়ংকর ছিল। যেসব শিশু ওই ছাঁট দেখে চুল কেটেছে, তাদের মায়েদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’  

জাতীয় দল, একই সাথে ক্লাব- দুই পর্যায়েই সফল হয়েছেন এমন ফুটবলার খুব একটা নেই বললেই চলে। রোনালদো হচ্ছেন সেই সব ফুটবলারদের একজন যিনি একাধারে ব্যক্তিগত অর্জন ছাড়াও দলগত সাফল্যে মহিয়ান ছিলেন। ডিফেন্ডারদের বোকাবনে পাঠিয়ে বল নিয়ে কারিকুরি করে চিপ কিংবা গোল রক্ষকের ওভার দ্য হেডে বল পাঠিয়ে নিখুঁত ফিনিশিং, সাথে নিষ্কলুষ মুক্তঝরা হাসি দিয়ে উদযাপন- রোনালদোর এমন সব দৃশ্য এখনো সব মধুর স্মৃতির খোরাক যোগায়।

গোটা একটা প্রজন্মকে তিনি কিভাবে প্রভাবিত করেছেন তার একটা উদাহরণ দিয়েই শেষ করি। ২০০২ সালে ফাইনালে যে তিনি চুলের সামনে অদ্ভুত ছাঁট দিয়েছিলেন সেটি অনুকরণ করে সারা বিশ্বে লক্ষ কোটি তরুণ অবিকল রোনালদোর মতো চুলে ছাঁট দিয়েছিলেন। এর মধ্যে বাদ যায়নি তাঁর বাংলাদেশি ফ্যানরাও। ২০০৬ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের ব্রাজিলিয়ান বেশ কিছু ভক্তের চুলেও দেখা যায় রোনালদোর মতো কাট। তাই গোটা একটা প্রজন্মের অনুপ্রেরণা ছিলেন এই রোনালদো। হ্যা, ইনিই সেই রোনালদো, দ্য গ্রেটেস্ট ফেনোমেনন।      

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link