সুরিয়া ইঞ্জিনের জ্বালানি

‘ও কি ইন্ডিয়া দলে খেলে? ২০১৯ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) চলছিল তখন। ধারাভাষ্য কক্ষে বসে মুগ্ধ হয়ে এই প্রশ্নটা করেন ব্রায়ান লারা। সাবেক অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলছেন, তিনি নাকি এ কালের মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি।

ব্রায়ান লারা কিংবা রিকি পন্টিংয়ের মত কালজয়ীরা যখন কারো প্রশংসা করেন, তখন নড়েচড়ে বসতেই হয়। আর সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাট এতোই কাঁপন ধরানো যে, পুরোটা সময় সিট বেল্ট বেঁধে খেলা দেখতে আপনি বাধ্য। আসলে তিনি কেবল কিভাবে ব্যাট করেন সেটাই একমাত্র আলোচ্য নয়, এরচেয়েও বেশি আলোচনার বিষয় হল হল তিনি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজের ব্যাটের রং বদলান।

টি-টোয়েন্টিতে ভারত আধুনিক ‍যুগের সেরা সব ব্যাটারের জন্ম দিয়েছে। এখানে ফিনিশার মহেন্দ্র সিং ধোনি যেমন এসেছেন, তেমনি দেখা মিলেছে বিরাট কোহলির যিনি গায়ের জোরে নয় বরং টাইমিং নির্ভর হ্যান্ড আই কম্বিনেশনের ক্রিকেটার। আবার রোহিত শর্মার মত হিটম্যান, যুবরাজ সিংয়ের মত পাওয়ার হিটার – ভারতে টি-টোয়েন্টি ব্যাটারের অভাব হয়নি কখনও।

কিন্তু, এই চারজনের কারো মতই নন সুরিয়াকুমার যাদব। তিনি তাঁর মত, তিনি সবার মত। আসলে বলা উচিৎ, তিনি ওপরের চারজনের একটা চূড়ান্ত মিশ্রন। তাহলে কি তিনি মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি খ্যাত এবি ডি ভিলিয়ার্স? কেউ কেউ তো বলছেন, তিনি ডি ভিলিয়ার্সের ‘বেটার ভার্সন’।

বিষয়টা কেবল কথার কথা নয়। তিনি ইনিংস উদ্বোধন করতে জানেন, ইনিংস মেরামত করতে জানেন, ঝড় তুলতে জানেন, জানেন কিভাবে ইনিংসের সমাপ্তি টানতে হয়। তাঁর শটের রেঞ্জের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় বলটাকে পাঠাতে পারেন তিনি, তা সামনে যেই থাকুক না কেন, আর বলের মেরিট যাই হোক না কেন।

টি-টোয়েন্টিতে তাঁর চেয়ে দ্রুততম সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক হাজার রান পূর্ণ করেছেন এমন ভারতীয় ব্যাটারের সংখ্যা দু’জন। তবে, ইনিংসে প্রভাব রাখার দিক থেকে বাকি দু’জন হয়তো এই সুরিয়ার ধারের কাছেও থাকবেন না।

টি-টোয়েন্টিতে তিনি প্রতি ১০ টি ডেলিভারিতে কম করে হলেও একটা ছক্কা হাঁকান। আর প্রতি তিন-চার ডেলিভারিতে একটা করে চার। তাঁকে ঘরের মাঠের বাঘ ভাবলে ভুল করবেন। কারণ, একমাত্র টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটাই তাঁর দেশের বাইরে। উপমহাদেশের বাইরে মাত্র তৃতীয় ম্যাচেই ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে তিনি ১১৭ রান করেন, ৫০ বলে ২০ বার বলকে বাউন্ডারির ওপারে পাঠান – ১৪ টা চার, ছয়টা ছক্কা।

আদতে, সুরিয়াকুমার ভিন্ন ধরণের ব্যাটার। তিনি ডি ভিলিয়ার্সের মত নন। ডি ভিলিয়ার্স অনেক বেশি পাওয়ারহিট নির্ভর ব্যাটার ছিলেন। সে তুলনায় সুরিয়ার ব্যাটিংয়ে কব্জির নির্ভরতা বেশি। তবে, দু’জনের মিল হচ্ছে বিচক্ষণতায় আর সিদ্ধান্ত গ্রহণে। যেন তাঁরা সুপার কম্পিউটারের একেকটা ইঞ্জিন বহন করে নিয়ে চলেন নিজেদের সাথে। যার সাহায্যে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল স্ট্রোক বের করার কৌশলটা তাঁরা আয়ত্ত্ব করে ফেলেছেন।

সব ফরম্যাটেই ভারতের ক্রিকেটে একজন করে অনুঘটক আছেন। টেস্টের ক্ষেত্রে সুনীল গাভাস্কার, ওয়ানডেতে স্বয়ং শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। এতদিন টি-টোয়েন্টিতে এই জায়গাটা ফাঁকাই ছিল। হ্যাঁ, এখন সময় এসেছে শূন্যস্থান পূরণের। তিনি কে তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link