ব্যাট যেন তাঁর তরবারি। রাইলি রুশো যেন কোন এক যোদ্ধা। সম্ভবত গ্রীক মিথের অ্যাকিলিস। তবে অ্যাকিলিসের দূর্বলতা ছিল। তাঁকে কাবু করা গেছে। তবে এদিন যেন ভারতীয় বোলারদের কোন ধরণের কৌশলে কাবু না হবার প্রত্যয় নিয়ে নেমেছিলেন রুশো। আরও একবার মুগ্ধ করলেন সবাইকে। প্রোটিয়া শিবিরে প্রশান্তির এক পরম পরশ বুলিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি।
ভারতের আতিথিয়েতা গ্রহণ করেই গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা দল এখন ভারতে। খেলছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এরপর অবশ্য ওয়ানডে সিরিজও রয়েছে। তবে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজের গুরুত্বটা দুই দলের জন্যেই খানিক ভিন্ন।
কেননা সামনেও তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহারণ। সব দলগুলো নিজেদের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। নিজেদের শক্তি আর দূর্বলতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ফেলবার চেষ্টা চালাচ্ছে। নিজেদের টিম কম্বিনেশনটা খুঁজে পেতে মরিয়া সব দল।
আর ঠিক তেমন এক সময়ে গর্জে উঠলেন দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার ব্যাটার রাইলি রুশো। হার্ড হিটার, সেই সাথে টেকনিক্যালি শক্তপোক্ত একজন ব্যাটার হিসেবে বেশ নামডাক রয়েছে রুশোর। আর সেই নামডাকটা যথার্থতাই তিনি প্রমাণ করলেন ভারতের বোলারদের একহাত দেখে নিয়ে।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে রয়েছে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ম্যাচে লড়াইটা হয়েছে একেবারে জমজমাট। সেদিন অবশ্য নিজের ভয়ংকর রুপটা দেখিয়েছিলেন ‘কিলার মিলার’- ডেভিড মিলার।
আর শেষ টি-টোয়েন্টিতে মিলারের সে দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিলেন রুশো। আদায় করে নিলেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। একেবারে মারকাটারি ব্যাটিং বলতে যা বোঝায় তাঁর সবটুকুই যেন দৃষ্টিনন্দন এক শিল্পকর্ম হিসেবেই উপস্থাপন করলেন রুশো। ভারতীয় বোলারদের রীতিমত পাত্তাই দেননি তিনি। বাউন্ডারি থেকে ওভার বাউন্ডারি বেশি এসেছে রুশোর এই ইনিংসে। তিনি ব্যাট করেছেন প্রায় ২০৮ স্ট্রাইক রেটে।
মাঠের প্রায় সব অঞ্চল দিয়েই বাউন্ডারি হাকিয়েছেন রুশো। চার মেরেছেন সাতটি। আর হাওয়ায় ভাসিয়ে বল মাঠ ছাড়া করেছেন আট দফা। ভারতীয় বোলারদের মনবল চূর্ণ করে দিয়ে মাত্র ৪৮ বলেই তিনি তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি শতক। শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন অপরাজিত। অবশ্য শেষের দিকে তিনি যেন খানিকটা বিশ্রামে চলে যান। তাঁকে বিনোদিত করেন আরেক প্রান্তে থাকা তাঁর সতীর্থ ডেভিড মিলার। পাঁচ বলে ১৯ রানের ছোট্ট এক ক্যামিও।
ব্যাস দক্ষিণ আফ্রিকার রান পাহাড় ২২৭ ছুঁয়ে ফেলে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে তো ধরাশায়ী ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডার। আবারও সেই টপ অর্ডার ব্যর্থতা। তবে এদিন টপ অর্ডার নিজেদেরকে খানিকটা দোষমুক্ত রাখতেই পারে।
কেননা একমাত্র দীনেশ কার্তিক ছাড়া আর কারও ব্যাটে রান আসেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের পতন ঘটেছে। তবে কার্তিক যেন রেড ওয়াইন। বয়স বাড়ে আর তিনি আরও বেশি বিধ্বংসী হন। দলের একপ্রান্তে যখন আসা যাওয়ার মিছিল তখনও আরেক প্রান্তে সাবলীল তাণ্ডব চালান কার্তিক। ২১ বলে করেন ৪৬। স্ট্রাইক রেট প্রায় ২১৯।
তবে কেশভ মহারাজের বলে বোল্ড আউট হয়ে কার্তিক ফিরে গেলে প্রোটিয়াদের জয় ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। শেষদিকে অবশ্য দীপক চাহার খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তুলবার চেষ্টা করেন। তবে তাতে ব্যবধান কমলেও পরাজয় এড়ানো যায়নি। সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারলেও আসলে প্রোটিয়াদের প্রাপ্তির একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে মিলার আর রুশোর এই তাণ্ডব। এই দুই আগ্রাসী ব্যাটারদের এমন ফর্ম নিশ্চয়ই স্বস্তি দেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিং রুমে।