নন্দিত-নিন্দিত মুশফিক

এক ফরম্যাটে তাঁকে নিয়ে যদি ‘হেইট স্টোরি’ লেখা যায়, অন্য দুই ফরম্যাটে সেটি বদলে হয়ে যাবে ‘লাভ স্টোরি’। একদিকে তিনি দর্শক নিন্দিত ছিলেন, অন্যদিকে তিনিই আবার ফরম্যাট বদলালে হয়ে যান দর্শকনন্দিত। গল্পটা মুশফিকুর রহিমের। একদিকে সমালোচনা হয় ‘মুশফিকের টি-টোয়েন্টিটা ঠিক আসেনা’, অন্যদিকে বিষয়টা যখন টেস্ট কিংবা ওয়ানডের তখন তিনিই বনে যান বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা; বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে তিনি জড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিম বড্ড বেশি সেকেলে। তাঁকে দিয়ে অন্তত ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণটা হয় না। টি-টোয়েন্টির মেজাজটা যে তিনি একেবারেই ধরতে পারতেন নাসেটা একটু দেরীতে হলেও শেষমেশ বুঝেছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেটা বুঝেই রাজ্যের সমালোচনা মাথায় নিয়ে বিদায় বলে দিলেন ক্রিকেটের এই ফরম্যাটকে।

সেইজন্য সাধুবাদও পেয়েছেন ক্রিকেটবোদ্ধাদের কাছ থেকে। কারণ ব্যাট না হাসলে, কেবল অভিজ্ঞতার ফাঁকা বুলি দিয়ে একজন ক্রিকেটারকে দলে রাখাটা অযৌক্তিক। অবসরের আগ অবধি মুশফিক ১০২ টি টি- টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে মোট ১৫০০ রান করেছেন। ১১৫.০৩ স্ট্রাইকরেটটা এই ফরম্যাটে বড্ড বেমানানই ছিলো বটে। টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে মুশফিক এখন অতীত বনে গিয়েছেন।

তাই হয়তো এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতির ভীড়ে মুশফিকের খোঁজটা কেউ রাখছেন না। এইতো সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখে জিম করতে গিয়ে হাঁটুর নিচে চোট পেলেন, সেই ক্ষততে সেলাইও লেগেছে ছয়খানা। দুই সপ্তাহ লেগেছে সুস্থ হতে। সবমিলিয়ে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়েছেন তিনি।

বোঝাই যাচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডের পুরো মনোযোগ এখন টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে। কিন্তু যখন এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উন্মাদনা শেষ হবে। তখন? টি- টোয়েন্টির উত্তেজনায় বুঁদ হয়ে থাকা ক্রিকেট পাড়া তখন নতুন করে মজবে ওয়ানডে ফরম্যাট নিয়ে। কারণ এই বছরটা পেরোলেই আসছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসর। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপকে ঘিরে তখন সবগুলো দেশ নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি মিশনে নামবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকেও তখন তলব হবে মুশফিকুর রহিমের। কারণ এখনও তাঁকে ছাড়া যে ওয়ানডে ফরম্যাটকে চিন্তাই করা সম্ভব না।

নিঃসন্দেহে ওয়ানডে এবং টেস্ট ফরম্যাটে তিনি এখনও টাইগার ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার। বিশ্বসেরা ব্যাটারদের সেরা বিশে তাঁর নাম খুঁজে পাওয়া যাবে। ওয়ানডেতে মুশফিক ৩৬.৮১ গড়ে করেছেন মোট ৬৭৭৪ রান। খেলেছেন ২৩৬ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

মুশফিকের ঝুলিতে এই ফরম্যাটে রয়েছে আটটি সেঞ্চুরি এবং ৪২ টি হাফ সেঞ্চুরি। অন্যদিকে এই ক্রিকেটার টেস্ট খেলেছেন ৮২ টি। ৩৭.৯৩ গড়ে করেছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি রান। ঝুলিতে রয়েছে নয়টি সেঞ্চুরি এবং পঁচিশটি হাফসেঞ্চুরি।

মুশফিকের সময়টা ভালো যাচ্ছেনা।  সম্ভবত নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়টাই পার করছেন। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক সবার প্রত্যাশা এখন ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে মুশফিকুর রহিমের ফর্মে ফেরা। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসরটা বসতে চলেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মাটিতে। সেখানে মুশফিকের ব্যাট জ্বলে ওঠা বড্ড বেশি জরুরি।

মিস্টার ডিপেন্ডেবলে আরও একবার মুগ্ধ হতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাগলাটে সমর্থকেরা। মুশফিকও যেন মনের ভেতরে পুষে রাখা ক্ষোভকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির হঠাৎ অগ্নুৎপাতের মতো করে চারদিক হয়ত ধ্বংস করে দেবেন। হয়ত যোগ্য একটা জবাব তিনি দেবেন, প্রাপ্য সম্মানটুকু নিয়েই ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ের গল্পটি লিখবেন তিনি। যাতে শেষ বেলায় গর্ব করে পুরো বাংলা বলে ওঠে, ‘দেয়ার ওয়াজ এ মুশফিকুর রহিম, উই ইউজড টু কল হিম মিস্টার ডিপেন্ডেবল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link