বিশ্বকাপে গোল না পাওয়া ফুটবল গ্রেট!

দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্ব ফুটবলের এই মহারণের ২২ তম আসরের জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুত কাতারের দোহা। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বলে কথা। বাড়তি আয়োজনের দিকে তাই পুরো বিশ্বের আলাদা একটা দৃষ্টি তো থাকবেই। কারণ ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই বৈশ্বিক এক মেলবন্ধন।  

তরুণ কিংবা পরিণত- এ দুইয়ের জন্যই বিশ্বকাপ ফুটবল দারুণ এক মঞ্চ। এই বিশ্বকাপই রোনালদোকে ‘দ্য ফেনোমেনন’ তকমা দিয়েছিল, জার্মান ফুটবলে জার্ড মুলারের পরে মিরোস্লাভ ক্লোসা নামটি উচ্চারিত হয় এই বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়ার জন্যই। তাছাড়া, দিয়েগো ম্যারাডোনার একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনার শেষ বিশ্বকাপ জয় কিংবা তাঁরই করা ‘হ্যান্ড অফ গড’ এর জন্ম হয়েছিল এই বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চেই। 

ফুটবল গ্রেটদের সংখ্যাটা নগণ্য নয়। প্রায় শত বছরের ইতিহাসে  শ’ খানেক গ্রেটদের তো জন্ম হয়েছেই।  তবে এর মধ্যেও ফুটবল বিশ্বকাপে গোল করার অন্যরকম মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারেননি অনেকেই। ফুটবল বিশ্বকাপে গোল না পাওয়া এমন কিছু নামী ফুটবলারদের নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন। 

  • জ্লাতান ইব্রাহোমোভিচ (সুইডেন) 

সুইডেনের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ টি গোল করার রেকর্ড তাঁরই গড়া। কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপে কখনোই গোল পাননি ইব্রাহোমোভিচ। অবশ্য সুইডেনের হয়ে বিশ্বকাপ ম্যাচে খেলার সুযোগও পেয়েছেন কম । সুইডেনের হয়ে ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন।

কিন্তু, বয়সে তরুণ হওয়ায় ২০০২ বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে খেলারই সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ৪৬ মিনিট। এরপরের বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচে ২০৭ মিনিট খেলেছিলেন অবশ্য। কিন্তু সে তিন ম্যাচের কোনোটিতেই গোলপোস্টের লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি তিনি।

তবে ইব্রাহোমোভিচের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, ক্যারিয়ারে যখন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন তখন সুইডেন বিশ্বকাপের বাছাই পর্বই পার করতে পারেনি। এ কারণে ২০০৬ বিশ্বকাপই হয়ে যায় তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ।

২০১৮ বিশ্বকাপে সুইডেন বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলে ইব্রাহিমোভিচ অবসর ভেঙে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আর রাখা হয়নি তাঁকে। আগের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলেও এবারের কাতার বিশ্বকাপে আর বাছাই পর্বের বাঁধা টপকাতে পারেনি সুইডেন। তাই ক্যারিয়ারজুড়ে বিশ্বকাপ ফুটবলে গোলশূণ্যই থাকতে হচ্ছে ইব্রাকে। 

  • পাভেল নেদভেদ (চেক রিপাবলিক) 

 

জুভেন্টাসের ইতিহাসে সেরা ক’জন মিডফিল্ডারের নাম করতে গেলে পাভেল নেদভেদের নাম আগেই আসবে। জুভেন্টাসের হয়ে ২০০১ থেকে টানা ৮ বছর খেলেছেন। ৫১ টি গোলও করেছিলেন। কিন্তু চেক রিপাবলিকের হয়ে কখনোই ফুটবল বিশ্বকাপে গোল করতে পারেননি তিনি। অবশ্য ২০০৬ সালে জার্মানিতে হওয়া ঐ একটি মাত্র বিশ্বকাপেই খেলেছিলেন তিনি। 

  • লুইস ফিগো (পর্তুগাল) 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পূর্ববর্তী যুগে এই লুইস ফিগোই ছিলেন পর্তুগালের প্রাণভোমরা। ২০০০ সালে প্রথম পর্তুগিজ ফুটবলার হিসেবে তিনিই ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। খেলেছেন বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ- দুই দলের হয়েই। ফুটবলার হিসেবে সমৃদ্ধ এক ক্যারিয়ার। কিন্তু ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ মিলে পর্তুগালের হয়ে ১০ ম্যাচ খেললেও একটিও গোল করতে পারেননি পর্তুগিজ এ ফুটবল গ্রেট। 

  •  ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড (ইংল্যান্ড)

 

ইংলিশ ফুটবলে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড নামটা অবিসংবাদিতভাবেই গ্রেটদের মধ্যে পড়ে। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে ২০০৬, ২০১০, ২০১৪- টানা তিন বিশ্বকাপ খেললেও একটিও গোল আদায় করতে পারেননি তিনি। অবশ্য ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানি বিপক্ষে তাঁর করা একটি গোল নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল।

সেবার প্রায় মাঝ মাঠ থেকে ল্যাম্পার্ডের করা একটি শট জার্মানির গোললাইন অতিক্রম করলেও রেফারি সেটিকে নাকচ করে দেন। তখন তো আর ভিএআর ছিল না। তাই অফিশিয়ালি বিশ্বকাপে কোনো গোল না করাদের তালিকাতেই চলে যান ল্যাম্পার্ড। 

  • সার্জিও রামোস (স্পেন) 

স্পেনের রক্ষণভাগের প্রধান সেনাপতি বলা যেতে পারে তাঁকে। তবে ডিফেন্ডার হওয়া স্বত্ত্বেও রিয়াল মাদ্রিদ আর স্পেনের হয়ে অনেক গোল করেছেন। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে দলকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে তো তাঁর বিশেষ এক খ্যাতিই আছে।

তবে, ২০০৬ থেকে স্পেনের হয়ে টানা ৪ বিশ্বকাপে ১৭ টি ম্যাচ খেললেও কোনো গোল পাননি তিনি। অবশ্য ডিফেন্ডার হিসেবে এমন রেকর্ড খুব একটা বিব্রতকরও না। ডিফেন্ডারদের তো আর প্রধান কাজ গোল করা নয়।

  • রবার্ট লেওয়ানডস্কি (পোল্যান্ড) 

এই মুহূর্তে ফুটবল বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের মধ্যে তিনি একজন। মৌসুমের পর মৌসুম গোলবন্যায় নিজের ক্যারিয়ার রাঙাচ্ছেন। বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলেও এখনও ফর্মের দিক দিয়ে রয়েছেন একদম চূড়ায়। গত মৌসুমেই জিতেছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু।সাথে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটাও গিয়েছিল তাঁর হাতে।

তবে, পোলিশ এ গোল মেশিন বিশ্বকাপ ফুটবলে গোল পাননি কখনোই। অবশ্য ২০১৮ সালে রাশিয়ায় হওয়া ঐ একটি বিশ্বকাপেই খেলেছেন তিনি। সে বারের আসরে তিন ম্যাচ খেলে ছিলেন গোলশূণ্য। তবে এখনও সুযোগ থাকছে বিশ্বকাপে গোল করার। বিশ্বকাপে তাঁর গোল খরা কাটতে পারে এবারের কাতার বিশ্বকাপেই। আপাতত সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link