এবারই ৩৫ বছর বয়সী রোহিত শর্মা প্রথমবারের মত কোন আইসিসি ইভেন্টে ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন। সম্ভবত এটি রোহিত শর্মার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মত রোহিত শর্মাও এই বিশ্বকাপের আটটি আসরেই খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
আজকে এই বিশ ওভারের বিশ্বকাপকে ঘিরে যে রমরমা অবস্থা একেবারে শুরুতে কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিলো না। সেই আসরটি বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। সেবার ক্রিকেট বিশ্বের বারোটি দল অংশগ্রহণ করেছিল। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। আর সেই বিজয়ী দলের অংশ ছিলেন রোহিত শর্মাও।
সেই ২০০৭ থেকে ২০২২ দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভারতীয় দলে রোহিত শর্মা অনেকটা ধ্রুবকের মতো ছিলেন। একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান থেকে ওপেনার ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করার পর এই ক্রিকেটার নিজেকে নিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। বনে গিয়েছেন বর্তমানে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার। তাঁর নামের পাশে চারটি টি–টোয়েন্টি সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি প্রমাণ দেয় রোহিত শর্মা আজ নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।
অতীত হাতড়ে আজকের রোহিত শর্মার উত্থানের সবটুকু জেনে নেয়া যাক। ২০০৭ সালে ভারতীয় ভক্তরা তখনও ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে ভারতের বাদ পড়াটা হজম করার চেষ্টা করছিলেন। এর ঠিক এক বছর আগেই আইসিসির সাথে বিসিসিআই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে অংশগ্রহণ করতে সম্মত হয়েছিল। শর্ত ছিল পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার সাথে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজনস্বত্ব পাবে ভারতও। অনেকটা অনিচ্ছায় তাঁরা টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটি দল পাঠাতে সম্মত হয়েছিলো।
বিশ ওভারের বিশ্বকাপের প্রথম আসরকে সামনে রেখে তাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে একটি দল সাজাতে হতো। ৩০ জনের প্লেয়ার পুল তৈরি করতে ‘ইন্টার স্টেট টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট’ নামে একটি ইভেন্ট আয়োজন করে তাঁরা। যেখানে কোন টিভি কাভারেজ ছিলো না। এমনকি দর্শকদের স্টেডিয়াম প্রবেশ ও বিনামূল্যে ছিল।
ওয়েস্ট জোনের মধ্যে মুম্বাই এবং গুজরাটের মধ্যে খেলা হচ্ছিল। ১৪২ রান তাড়া করতে গিয়ে মুম্বাইয়ের দলটি অজিঙ্কা রাহানেকে হারিয়ে ফেলেছিলো। ১৯ বছর বয়সী রোহিত শর্মা সেদিন ৪৫ বলে তেরো চার এবং পাঁচটি ছক্কার সাহায্যে অপরাজিত ১০১ রান করে প্রথম ভারতীয় হিসেবে টি–টোয়েন্টি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। এতেই খুলে যায় রোহিতের ভাগ্য। পরের মাসে, তিনি বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ত্রিশ জনের মধ্যে জয়গা করে নেন। তাছাড়া ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরেও সাদা বলের খেলার জন্য তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
রোহিতের ছোটবেলার কোচ দীনেশ লাড বলেন, ‘সে আমাকে ২০০৭ সালে ফোন করে বলত সে জাতীয় দলে চান্স পাচ্ছে না। আমি তখন তাকে বলেছিলাম, এটা একটা ভারতীয় দল। গলি বা মহল্লার দল নয়। তাই সম্ভাবনা খুব কম আসবে। কিন্তু যখন আসবে অবশ্যই আঁকড়ে ধরতে হবে।’
ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নক আউট খেলায় যুবরাজ সিংয়ের বদলি হিসেবে রোহিত শর্মা খেলতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫০ রান করেছিলেন। তারপর থেকে আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দীনেশ লাড জোর দিয়ে বলেন, ‘রোহিত নিজেকে কখনোই সন্দেহ করেন না।’
রোহিতের মুম্বাই ক্রিকেট ক্রিকেট দলের কোচ ও ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান প্রভিন আমরে রোহিতকে নিয়ে বলেন, ‘রোহিতের ভিত্তিটা দারুণ। তিনি বেশ স্বচ্ছ এবং জিনিসগুলিকে জটিল করেন না। রোহিত যখন ব্যাট করে, তখন সে অধিনায়কত্ব নিয়ে ভাবে না। যখন সে অধিনায়ক হয়, তখন সে ব্যাটিং নিয়ে ভাবে না।’
রোহিত শর্মা তার অসাধারণ ক্যারিয়ারে ধারাবাহিক ভাবেই পারফর্ম করে গিয়েছেন। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রোহিতবিহীন ভারতের ব্যাটিং অর্ডার কখনো পূর্ণতা পাবে না। ১৪২ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ১৪০.৫৯ স্ট্রাইক রেট ও ৩১.৪ গড়ে করেছেন ৩৭৩৭ রান।
নিজের বর্ণাঢ্য টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ২৮ টি অর্ধশতক ও ৪ টি শতরানের ইনিংস খেলেছেন এই ব্যাটার। ক্রিকেটের বাকী ফরম্যাটগুলোতেও সমানতালে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের অন্তে এসে রোহিত নিশ্চয়ই চাইবেন শেষ বেলায় নিজের ক্যারিয়ারে সুন্দর এক ফিনিশিং টাচ দিতে, তা হতে পারে কেবল বিশ্বকাপের শিরোপা অর্জনের মাধ্যমেই।