গত টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বৈশ্বিক আসরে ভারত ছিল পাকিস্তানের জন্য এক ধাঁধার নাম। বারবার খুব কাছে গিয়েও হারাতে পারেনি চিরপ্রতিদ্বন্দীদের। অবশেষে সে গেঁড়ো কাটে টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিগত আসরে। ভারতকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে রাজসিক এক জয় পায় পাকিস্তান।
অস্ট্রেলিয়াতে এবারের টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হবে এই দুই দল। পাকিস্তানের চাওয়া যেখানে জয়ের ধারা বজায় রাখা, সেখানে ভারত শিবিরে জ্বলছে প্রতিশোধের আগুন। তবে বেশ কয়েকটি কারণে এই ম্যাচে পাকিস্তানের দিকেই জয়ের পাল্লাটা ভারি। আসুন দেখে নেয়া যাক যে তিনটি কারণে এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচটি জিতে নিতে পারে পাকিস্তান।
- বাবর-রিজওয়ানের উদ্বোধনী জুটি
বাবর-রিজওয়ান জুটির স্ট্রাইক রেট নিয়ে যতই প্রশ্ন তোলা হোক, নিজেদের দিনে তাঁরা খেলা শেষ করে আসতে সক্ষম। এই জুটির সামর্থ্যের সবচেয়ে বড় সাক্ষী তো ভারত নিজেই, গত বিশ্বকাপের ম্যাচে তাঁদের দেয়া ১৫২ রানের লক্ষ্যমাত্রা এই জুটি পেরিয়ে গিয়েছিল হেসে খেলেই।
তারপর থেকে এই জুটিকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি, নিয়মিত বিরতিতে রান করে গিয়েছেন। রিজওয়ান তো আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে, আইসিসি ব্যাটসম্যান র্যাংকিংয়ে সবার উপরে। অন্যদিকে অধিনায়ক বাবর আজমও আছেন দুরন্ত ফর্মে, শেষ ম্যাচে ১৪৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৮৫ রান।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজেও দারুণ সফল ছিলেন এই জুটি। ইনিংসের শুরুতে এই জুটির অন্তত একজনকে ফেরাতে না পারলে ভারতের বোলারদের কপাল খারাপ-ই আছে বলা যায়।
- শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রত্যাবর্তন
ভারত যেখানে ইনজুরির কারণে নিজেদের সেরা পেসারকে রেখে এসেছে, পাকিস্তান সেখানে দলে ফেরত পেয়েছে তাঁদের প্রধান স্ট্রাইক বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদিকে। পূর্বসূরি কিংবদন্তি পেসারদের মত শাহীনও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে।
অন্যদিকে বাঁ-হাতি পেসে ভারতীয় টপ অর্ডারের দুর্বলতা সর্বজনস্বীকৃত, শাহীন আফ্রিদির ফেরত আসা তাই তাঁদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এছাড়া পাকিস্তানের বাকি দুই পেসার হারিস রউফ রবং নাসিম শাহও আছেন দুরন্ত ফর্মে, শাহীনের অনুপস্থিতিতে দলকে এশিয়া কাপের ফাইনালে নিয়ে যাবার পাশাপাশি জিতিয়েছেন ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা।
এছাড়া দুজনের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হলো অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনটাকে তাঁরা চেনেন ভালমত। হারিসের তো পেসার হয়ে ওঠাই অস্ট্রেলিয়ার আলো-বাতাসে, অন্যদিকে নাসিমের অভিজ্ঞতা আছে বিগ ব্যাশে খেলার। এমনিতেই রোহিত-বিরাটের অফফর্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ভারতীয় ভক্ত-সমর্থকদের মনে, পাকিস্তানের ইনফর্ম পেস বোলিং সামলাতে তাই নাজেহাল অবস্তা হওয়ার সম্ভাবনা আছে ভারতের।
- ভারতের ডেথ বোলিং দুর্বলতা
ভারত তো বটেই বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। আর ইনজুরির কারণে কিনা মহাগুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপের আসরে তাঁকে ছাড়াই দল গঠন করতে হয়েছে ভারতকে। গত বছর তিনেকে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় বোলিং লাইন আপের নানা ফাঁকফোকর।
এখন তাঁর অনুপস্থিতিতে বেরিয়ে আসছে সেসব দুর্বলতার চিত্র। বল যত পুরনো হয়, ভুবনেশ্বর কুমার তত কার্যকারীতা হারাতে থাকেন। ডেথ ওভারে তাঁর উপর ভরসা রাখা আত্নহত্যারই সামিল। হার্শাল প্যাটেল ধারাবাহিক নন, আর্শদ্বীপ সিং একদমই অনভিজ্ঞ।
ফলে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের সামনে বড় ম্যাচে তিনি কিভাবে স্নায়ুচাপ সামলে রাখেন সেটা একটা বড় বিষয়। সবেধন নীলমণি এক মোহাম্মদ শামি। প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল বোলিং করলেও মূল ম্যাচে তাঁর পক্ষে একা পাকিস্তানের লম্বা ব্যাটিং লাইন আপকে আটকে রাখা বেশ কষ্টকর। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বেশ চাপে আছে ভারত।