ঘরের মাঠে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচেই পেয়েছে বড় ধাক্কা। তাঁদেরকে রীতিমতো বিধবস্ত করে গতবারের ফাইনালের হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং কোনো ডিপার্টমেন্টে কিউইদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৮৯ রানের বড় হারে সেমিতে ওঠার যাত্রাটা একপ্রকার অসম্ভবই হয়ে উঠলো স্বাগতিকদের জন্য।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা খরা কাটিয়ে গতবার আরব আমিরাতে শিরোপা উৎসবে মেতেছিল অ্যারন ফিঞ্চের দল। শিরোপা ধরে রাখার মিশনেও আত্নবিশ্বাসী ছিল দলটি, কিন্তু এক লহমায় যেন উড়তে থাকা দলটিকে মাটিতে নামিয়ে আনলো কেন উইলিয়ামসনের দল।
গত কয়েক টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের হারানো যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৬, ২০২১ বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর পর, ২০২২ বিশ্বকাপে তাঁদের শিকার অজিরা। অজিদের রীতিমতো নাকানিচুবানি খাইয়েই জয় তুলে নিয়েছে তাঁরা, বিশেষ করে কিউই বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি অজি ব্যাটাররা।
এমনিতেই টি টোয়েন্টিতে জয়-পরাজয়ের ব্যবধানটা সামান্যই থাকে, ফলে টুর্নামেন্টের শেষদিকে রান রেট হয়ে দাঁড়ায় বড় ফ্যাক্টর। বড় ব্যবধানের এক হারই শেষ করে দিতে পারে সকল সম্ভাবনা। গতবার এই রানরেটের মারপ্যাঁচেই টানা চার ম্যাচ জিতেও বাদ পড়তে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
অথচ, গ্রুপপর্বে সেবার মাত্র এক ম্যাচেই হেরেছিল তাঁরা, পরে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডকে হারিয়েও লাভ হয়নি। দেশে ফিরতে হয়েছে আশাভঙ্গের বেদনা নিয়েই। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার বাজে রান রেটের সুবিধা নিয়েই সেমিতে উঠেছিল অজিরা, পরে হয়েছিল চ্যাম্পিয়নও। কে জানে এবার হয়তো বিধাতার লীলায় শেষে কিনা রানরেটের মারপ্যাঁচেই কাটা পড়তে হয় তাঁদের!
এমনিতেই তাঁদের গ্রুপটা বেশ কঠিন, নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের পাশাপাশি গ্রুপে রয়েছে সদ্য এশিয়া কাপ জিতে ফর্মে থাকা শ্রীলঙ্কা। নিজেদের দিনে আফগানিস্তানও হয়ে উঠতে পারে বিধ্বংসী। ছোট ব্যবধানের হারই রানরেটের দৌড়ে যেখানে হয়ে উঠতে পারে বিশাল, সেখানে প্রথম ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হারের ফলে অজিদের নেট রানরেট এখন – ৪.৪৫০। পরবর্তী ম্যাচগুলোতে তাই কেবল জিতলেই চলবে না, প্রতিটি ম্যাচেই অজিদের জিততে হবে বেশ বড় ব্যবধানেই।
আর একটি হারই শেষ করে দিতে পারে তাঁদের সকল সম্ভাবনা। ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে যা সহজ হবে না মোটেও, বিশেষ করে যখন জস বাটলার-বেন স্টোকসরা আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। এক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড কিংবা শ্রীলঙ্কার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতে পারে অজিদের, তাঁরা যদি কোনো এক ম্যাচে হারিয়ে দিতে পারে বড় দল ইংল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডকে,তবেই আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠবে অজিদের সেমির সম্ভাবনা।
তবে, অন্যের উপর ভরসা না করে অজিরা চাইবে বাকি ম্যাচগুলো বড় ব্যবধানে জিতে রান রেটটা ঠিক করে ফেলতে। সেই ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য সহায়ক হতে পারে আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ, তুলনামূলক সহজ এই দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় অস্ট্রেলিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এত এত সমীকরণ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জন্য সেমিতে যাবার পথটা একটু কঠিনই। অন্য কোনো দল হলে হয়তো বলে দেয়া যেতো সেমির স্বপ্ন শেষ। কিন্তু দলটা অস্ট্রেলিয়া বলেই তা করা যাচ্ছে না, অজিরা যে হারার আগে হারে না। তাঁরা লড়ে যায় ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত। অতীতেও ধবংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির ন্যায় ঘুরে দাঁড়িয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার রূপকথা লিখেছে। এখন দেখার বিষয় পূর্বের ন্যায় এবারো সেই পুরনো গল্পটা নতুন কালিতে লিখতে পারেন কিনা ফিঞ্চ-কামিন্সরা।