ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর নেদারল্যান্ডস, মাঝখানে ১৫ বছর

সর্বশেষ বিশ্বকাপের দু:সহ স্মৃতি তো আছেই সাথে আছে বছর জুড়ে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজ হার। এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে সব ম্যাচ হেরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ন করেই বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল টাইগার বাহিনী। দলকে নিয়ে তো উৎকণ্ঠা ছিল সমর্থকদের তবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ছিল ভিন্ন পরিকল্পনা।

অস্ট্রেলিয়ায় এসেই নানা বিধিনিষেধ ও কঠোর নির্দেশনা দিয়ে খেলোয়াড়দের বোঝাতে চেয়েছেন পরিবর্তন এবার আসতেই হবে। এতদিন জাতীয় দলের মধ্যে মাঠের বাইরের পরিবর্তন দেখা গেলেও এবার মাঠে নিজেদের পরিবর্তন দেখাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। হারের গন্ডি থেকে বের হয়ে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারিয়ে নিজেদের যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের পর এবারই প্রথম বিশ্বকাপের মূল পর্বে কোনো ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেবার হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে ঝির ঝির বৃষ্টি হোবার্টের এমন আবহাওয়া বাংলাদেশের চেয়ে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের জন্যই উপযোগী ছিল বেশি। বিরূপ আবহাওয়ার সাথে টস ভাগ্যও বিমুখ বাংলাদেশ এর। টসে জিতে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুতে দারুন কিছুর ইঙ্গিত দিলেও তবে ইনিংসের ৫.১ দলীয় ৪৩ রানে ওপেনার সৌম্য সরকার আউটের পর রীতিমত ঝড় বয়ে যায় বাংলাদেশি ব্যাটিং লাইনের উপর।

ষষ্ঠ থেকে এগারো এই ছয় ওভারে ৩৩ রানের বিনিময়ে সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস ও ইয়াসির আলী রাব্বির উইকেট হারায়। ৪৩ রানে শূন্য উইকেট থেকে ৭৬ রানে পাঁচ উইকেট হয়ে যায় বাংলাদেশ এর। এরপর আফিফ হোসেনের সাথে হাল ধরেন সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ষষ্ঠ উইকেটের পার্টনারশিপে দুজনের ৪৪ রানে ১২০ রান পার করে টাইগাররা।

তবে একই ওভারে নুরুল হাসান ১৮ বলে ১৩ ও আফিফ হোসেন ২৭ বলে ৩৮ করে ফিরে গেলে ১৪০ রান ছোঁয়া বাংলাদেশ এর জন্য কঠিন মনে হয়। তবে শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ১২ বলে ২০ রানে ভর করে ১৪৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় সাকিব আল হাসানের দল। ওপেনার নাজমুল হাসান শান্ত ২০ বলে ২৫ রান করেন।  নেদারল্যান্ডসের হয়ে দুইটি করে উইকেট নেন ভ্যান ম্যাকেরেন ও বাস ডি লীড। 

জবাব দিতে নেমে শুরুতেই তাসকিন আহমেদের তোপের মুখে পড়ে নেদারল্যান্ডস টপ অর্ডার। ইনিংসের প্রথম দুই বলেই তাসকিন আহমেদ তুলে নেন বিক্রমজিৎ সিং ও বাস ডি লীডকে। এরপর ওপেনার ম্যাক্স ওডোইড ও কলিন অ্যাকারম্যান ডাচদের হাল ধরলেও সাকিব আল হাসানের একই ওভারে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের কাঁটা পড়েন ম্যাক্স ওডোইড ও তার পরে উইকেটে আসা টম কুপার। নেদারল্যান্ডস তাদের ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ১৫ রানে।

এরপর কলিন অ্যাকেরম্যান অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে সাথে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। ভয়ঙ্কর হতে থাকা এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। প্রতিপক্ষের অধিনায়ককে ফেরান দলীয় ৫৯ রানে। এরপর ওপেনার কলিন অ্যাকেরম্যান উইকেটের এক প্রান্তে অবিচল থাকলেও অপরদিকে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিল চলতে থাকে। ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে নেদারল্যান্ডসের ওপেনার ৪৮ বলে ৬২ করে ফিরে গেলে জয়ের আশা নিভে যায় কমলা জার্সিধারীদের।

তবে, শেষ দিকে ডাচ পেসার ভ্যান ম্যাকেরেন ১৪ বলে ২৪ করে দলকে জেতানোর চেষ্টা করলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। নেদারল্যান্ডস ২০ ওভারে ১৩৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন। দুর্দান্ত বোলিংয়ের জন্য ম্যাচ সেরা হন বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদ। 

ম্যাচের আগে নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক হুংকার দিলেও সাকিব আল হাসান ছিলেন নিশ্চুপ। মাঠের খেলায়ই তিনি দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশ দলের কাছে নেদারল্যান্ডস এখনও ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারেনি। সমর্থকদের প্রত্যাশা জয়ের এই পাগলা ঘোড়া ছুটবে বিশ্বকাপের শেষ অবধি, পেছনের সব ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে টাইগাররা গড়বে নতুন ইতিহাস। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link