তিনি সেবারও ছিলেন, এবারও আছেন। আসলে তিনি তো বাংলাদেশের স্মরণীয় সব স্মৃতির সাথেই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।
প্রথমটা ছিল ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন বিরাট ব্যাপার। ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো কিংবা মারলন স্যামুয়েলসরা তখন নিজেদের সেরা সময় কাটাচ্ছেন। আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ আশরাফুলদের ব্যাটিং জাদুতে সেবার ১২ বল হাতে রেখে ছয় উইকেটে জেতে বাংলাদেশ দল। তিনি চার উইকেট নেন, ১৩ রান করেন নয় বল খেলে।
এরপর ১৫ বছরের অপেক্ষা। এবার তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয়। নেদারল্যান্ডস হারল নয় রানে। তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদদের বোলিংয়ে জিতল বাংলাদেশ। তিনি এবার নয় বলে সাত রানের পর পেলেন একটা উইকেট, একটা রান আউট করলেন।
দুটো জয়ের মধ্যে মিল একটাই। দুবারই দলে ‘কমন’ একটাই নাম। সাকিব আল হাসান, তাঁর কথাই তো ইনিয়ে বিনিয়ে এতক্ষণ ধরে বলার চেষ্টা করছিলাম।
সেবার তিনি নবীন, এবার প্রবীন। সেবার স্বপ্ন দেখতেন দলের সবার সাথে, এবার অধিনায়ক হয়ে স্বপ্নটা ছড়িয়ে দেন সবার মাঝে।
১৫ বছরের দীর্ঘ এই টি-টোয়েন্টির যাত্রায় সাকিব নিজেকে রীতিমত একজন মহীরুহ বানিয়েছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে হট কেক হয়েছেন, বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের তকমা পেয়েছেন।
তাই সাকিব যেখানেই যান, সেখানেই সবার নজর, সব কটা ক্যামেরার লেন্স খুঁজে বেড়ায় তাকে। কারণ, তিনিই তো নাম্বার ওয়ান।
এবার হোবার্টের মাঠেও তাঁর ব্যতিক্রম হল না। বেলেরিভ ওভালে, ম্যাচের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন – সবার নজরই ছিল ওই একটি মানুষের দিকে। আর হোবার্টের গ্যালারি বিবেচনা করলে বাংলাদেশ খেলেছে অনেকটা ‘হোম গ্রাউন্ড’ হিসেবেই। কারণ, বাংলাদেশিদের পাল্লাটাই এখানে ভারী ছিল।
ম্যাচের শেষে সাকিবও দর্শকদের আবদারটা মিটিয়ে দিলেন। এগিয়ে গিয়ে হাত মেলালেন। কারও সাথে দাঁড়িয়ে সেলফি তুললেন। কয়েক জনকে অটোগ্রাফ দিলেন। হোবার্টের প্রবাসী বাঙালিরা তখন যেন আকাশের চাঁদকে পেয়ে গিয়েছেন হাতের মুঠোয়।
হ্যাঁ, তিনি তো আকাশের চাঁদই বটে। আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই জয় পাওয়া সাকিব নিজেও হয়তো কিছুটা নির্ভার বোধ করবেন। তাই তো, ম্যাচ শেষে নিজে থেকেই এগিয়ে গেলেন দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।
ব্রিসবেনে প্রবাসীদের আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে সাকিবের আচরণ সমালোচিত হয়েছিল ক’দিন আগেই। তবে, সেদিনের সাথে আজকের সাকিবের যেন আকাশ আর পাতালের ফাঁড়াক। আসলে একটা জয় অনেক কিছুই পাল্টে দিতে পারে। হাজার হোক, সাকিবও তো দিন শেষে রক্ত মাংসেরই মানুষ।
সাকিবের এমন হাসিমুখটাই দীর্ঘায়িত হোক এই বিশ্বকাপে – পুরো পৃথিবীর বাংলাদেশিরা আপাতত সেই প্রত্যাশাই করছেন।