২০০৭ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে নয় রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। ম্যাচ জিতলেও খুঁত রয়ে গেছে বেশ কিছু জায়গায়, বিশেষ করে ইনিংসের শেষের দিকে টেল এন্ডারদের ব্যাট চালাতে না পারা ভীষণ দৃষ্টিকটু লেগেছে।
সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দীতার মাত্রা বেড়েছে বহুগুণ। বিশেষ করে টি টোয়েন্টিতে এক কিংবা দুইটি বলই গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। টেল এন্ডারদের ব্যাটিংটা তাই এজন্য ভীষণ গুরুরত্বপূর্ণ, শেষদিকের ওভারগুলোতে তাঁদের হাঁকানো দুই কিংবা তিন বাউন্ডারির মার দলকে জয়ের পথে এগিয়ে দিতে পারে অনেকটুকু।
জয় পাওয়া ম্যাচগুলোতে সাধারণত ছোট-খাটো নানা ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে যায়। ফলাফল নিজেদের পক্ষে পেলেই সন্তুষ্ট হয় সবাই। তবে বৈশ্বিক আসরে ভালো করা কিংবা বড় দল হিসেবে নিজেদের আত্নপ্রকাশ করতে হলে জেতা ম্যাচগুলো থেকেও খুঁজে ফিরতে হয় নিজেদের ভুলগুলো। সেগুলো শোধরে আরো পরিণত হতে হয় পরবর্তী ম্যাচের আগে। বাংলাদেশের টেল এন্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা মোটেও নতুন কিছু নয়, অনেক আগে থেকেই তাঁরা জানেন না কিভাবে ব্যাট চালাতে হয়। কিন্তু এ রোগের প্রতিকার কিংবা উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না দলের মাঝে।
আজকেও হয়নি তাঁর ব্যতিক্রম। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই মোসাদ্দেক চার মেরে চাপটা বোলারের উপর দিলেও তৃতীয় বলেই আউট হয়ে যান তাসকিন। লং অনের উপর দিয়ে তাঁর বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টা পরিণত হয় ক্যাচিং প্র্যাকটিসে। তাসকিন তবু বল নষ্ট করেননি, চেষ্টা করেছেন বড় শট খেলার। কিন্তু পরের তিন বলে হাসান মাহমুদ যা করলেন সেটা এই পর্যায়ের ক্রিকেটে রীতিমতো অন্যায়। বড় শট খেলা তো দূরে থাক, এক রান নিয়ে মোসাদ্দেককে স্ট্রাইক দেয়ার ন্যূনতম প্রচেষ্টাও দেখা গেলো না তাঁর মাঝে।
অথচ বোলার ফ্রেড ক্লাসেন আহামরি মানের কোনো বোলার না, খুব সহজেই তাঁকে খেলা যেতো। ম্যাচ জিতেছে বলে রক্ষা, অন্যথায় ইনিংসের শেষদিকে ওই তিনটি ডট বল গড়ে দিতে পারতো ম্যাচের ভাগ্য। এই তো গেলো দৃশ্যমান সমস্যা, টেল এন্ডারদের ব্যাট চালাতে না পারার ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ দলকে মাঠে নামতে হয় আট ব্যাটার নিয়ে। ফলে কমে যায় বোলিং অপশন, পার্টটাইমার দিয়েই পঞ্চম বোলারের কোটা পূরণ করতে হয় অধিনায়ককে।
আজকের ম্যাচের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস বিধায় হয়তো, সৌম্য-মোসাদ্দেককে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া গেছে। কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে তো এ সুবিধা পাওয়া যাবে না, তাছাড়া দলের মূল কোন বোলারের বাজে দিন গেলেও তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে আক্রমণে আনার অপশন পাবেন না সাকিব। বাংলাদেশ দল বহুদিন ধরেই দলের এই রোগ নিয়ে অবগত, কিন্তু তা প্রতিকারে নেই কোনো উদ্যোগ। নেটে ভিডিওতে মাঝেমধ্যে মুস্তাফিজ-তাসকিনদের ব্যাট চালাতে দেখা গেলেও সেটা নেটেই সীমাবদ্ধ।
ম্যাচে গিয়ে তাঁরা সেটার প্রতিফলন ঘটাতে পারছেন না। বিশ্বমানের বোলার তো দূরে থাক, ক্লাসেন মানের পেসারও তাঁদের কাছে যেন এক বিভীষিকা। অথচ অন্যান্য দেশের বোলাররা ঠিকই পারছেন। একই ম্যাচেই শেষ উইকেটে ৩৪ রানের জুটি গড়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ডাচ বোলাররা দেখিয়ে দিয়েছেন কি করে ব্যাট চালাতে হয়।
আগের দিন ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচের কথাই ধরুন না, পাকিস্তান যেখানে ১৪০ পার করতেই ধুঁকছিল। সেখানে দশে নামা শাহীন আফ্রিদির ৮ বলের ১৬ রানের ছোট্ট ক্যামিওতে ১৬০ রানের পুঁজি পেয়ে যায় পাকিস্তান। ব্যাটিং এ শাহীনের এই রোলটাই বাংলাদেশের কোনো বোলার পালন করতে পারছেন না। ফলে দেড়শ পার করার সম্ভাবনা জাগালেও বাংলাদেশ থেমে যাচ্ছে ১৪০-১৪৫ রানেই।
প্রায় ১৫ বছর পর পাওয়া জয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। তবে বিশ্বকাপে ভালো ফলাফল করতে চাইলে জেতা ম্যাচের ভুলক্রুটিগুলো শোধরেই মাঠে নামতে হবে পরের ম্যাচে, অন্যথায় বাংলাদেশের অর্জন সীমাবদ্ধ থাকবে কেবল অংশ নেয়াতেই।