আগলে রাখি আস্থার চাদরে

পারভেজ হোসেন ইমন যুব বিশ্বকাপ থেকেই বেশ আলোচনায় থাকা চরিত্র। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সেঞ্চুরি করার পর রাতারাতি লাইম লাইটে চলে এসেছেন। তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা, উচ্ছাস। আর এই অবস্থা থেকে তাঁকে আগলে রাখার চেষ্টা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে প্রথম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই ম্যাচেই তাকে ম্লান করে দিয়ে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করেন ইমন। মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর বিপক্ষে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার পারভেজ হোসেন ইমন। তাঁর ৪২ বলে করা সেঞ্চুরিটি বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্রুততম।

২২১ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে বরিশালকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসান। ৪.৩ ওভারে তারা তুলে ফেলেন ৪৪ রান। সাইফের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তামিমকে সাথে নিয়ে ১১৭ রানের জুটি গড়েন ইমন। তামিম বিদায় নিলে আফিফ হোসেনকে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করে বিশ্বকাপ জয়ী এই ক্রিকেটার।

দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পরেও ইমনকে উত্তেজিত না হয়ে বরং সামনের দিকে তাকাতে বলেছেন ফরচুন বরিশালের কোচ সোহেল ইসলাম। ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বরিশালের ম্যানেজার হাসিবুল হোসেন শান্ত বলেছেন, ‘ছেলেটা মাত্র শুরু করেছে, আমরা তাকে বলেছি এই ইনিংস নিয়ে এতো উত্তেজিত হবার কিছু নেই। তার সামনে অনেক খেলা বাকি, তার উচিত তার ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ করা। কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে তার ইনিংসটি আমাদের দেশের ডমেস্টিক টি-টোয়েন্টিতে অন্যতম সেরা ইনিংস। সে ক্রিকেটিং শটেই সীমাবদ্ধ ছিল, বিশেষ করে কাভার এবং স্ট্রেইটে। সে না বুঝে মতো স্লগ শট খেলেনি।’

টি-টোয়েন্টিতে ইমন অনেক ভালো করবে বলেও আশাবাদী বরিশালের কোচ। গত তিন বছর ইমনকে কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে কোচ সোহেল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি তাকে অনূর্ধ্ব-১৭ থেকে চিনি। সে সব সময় এভাবেই ব্যাট করতো। কয়েক বছর আগেও সে প্রতি বলে হিট করতো। কিন্তু, এখন সে অনেক পরিণত। তার স্ট্রেইটগুলো অনেক ভালো হয়েছে এখন। আমরা তাকে দলে নেওয়ার কারণ হলো সে আক্রমণাত্মক ব্যাট করতে পারে। এবং আমরা মনেকরি সে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করবে।’

ইমনকে নিয়ে সহজ পরিকল্পনা করে এগিয়ে গিয়েছেন তামিম। পারভেজ হোসেন ইমনের সাথে জুটি নিয়ে তামিম বলছিলেন, ‘যখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আপনাকে ২২০ রান করতে হবে, তখন আপনাকে প্রতি ওভারেই আক্রমণাত্মক থাকতে হবে। আমরা সব সময় রাজশাহীর রানরেট থেকে এগিয়ে ছিলাম। আমরা ওভারপ্রতি ৯ রান করেও নিয়ে এসেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমরা একটা বাউন্ডারি মেরে সিঙ্গেল খেলবো ওভারের বাকি সব বল।’

তবে নিজের এই পরিকল্পনার কথা ইমনকে না জানিয়ে তাকে আগলিয়ে রেখেছেন বরিশালের অধিনায়ক। ইমনকে তার স্বাভাবিক খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। তামিম বলেন, ‘কিন্তু আমি ইমনকে এটা বলিনি। কারণ, আমি চাইনি তার খেলার ছন্দটা হারিয়ে যাক। সে এমন আক্রমণাত্মকভাবে খেলছিল যে আমি নন-স্ট্রাইক থেকে ভাবছিলাম সে যেনো আউট না হয়। আমি একেবারে ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করছিলাম। যদি দু’জনই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলি এবং একজন যদি আউট হয়ে যাই তাহলে আমরা আমাদের ছন্দটা হারিয়ে ফেলবো।  আমি যখন ইমনকে প্রথম ম্যাচে ফিফটি করতে দেখলাম, আমি তখনই বুঝে গিয়েছিলাম সে হিট করতে পারে। কিন্তু প্রশ্নটা ছিল, সে কি লম্বা সময় ধরে হিট করে খেলতে পারবে? সে সেটা গতকাল প্রমান করেছে।’

তবে মাত্র একটা ম্যাচ দেখে ইমনকে নিয়ে কথা না বলে আরো কিছু ম্যাচ দেখে কথা বলা উচিত বলে মনে করেন বরিশালের ম্যানেজার হাসিবুল। বরিশালের ম্যানেজার বলেন, ‘মাত্র একটা ম্যাচের পরে একজন প্লেয়ারকে বিচার করা অনেক কষ্টকর। আমি মনে করি, আমরা তার সম্পর্কে তখনই কথা বলবো যখন সে অনেকগুলো ম্যাচ খেলে ফেলবে। এটা টি-টোয়েন্টিতে কখনোই সম্ভব না যে সবসময় এইভাবে সে ব্যাটিং করবে, কিন্তু অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করতে হবে।’

ইমনকে সামনে এগিয়ে যেতে  ম্যাচের পর পরামর্শও দিয়েছেন বরিশালের ম্যানেজার, ‘ম্যাচের পরে আমি তাকে বলেছিলাম, ইনিংসটার সম্পর্কে ভূলে যাও। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন খেলা, ভিন্ন প্রতিপক্ষ, ভিন্ন উইকেট, ভিন্ন কন্ডিশন। তোমার শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link